মূলধনের বালাই নাই। বিশ্বস্ত কাস্টমার, কিছু পরিচিত জন, একটি পেজ আর একটা স্মার্টফোন হলেই শুরু করা যায়। এ যেন এক আজব বাজার। আশপাশের মানুষজন, আত্মীয় স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী এমনকি প্রবাসীদেরও এখানে খুব সহজেই পাওয়া যায় ক্রেতা হিসেবে। শোরুমের জন্য কর্মী, ইলেকট্রিক বিল, কারখানার  ভাড়া, ইত্যাদি খরচের সাথে পাল্লা দেবার চেয়ে নিজের দক্ষতা আর বুদ্ধি দিয়ে চললে এই খাতে ব্যবসা অনেক স্বস্তির ও সহজ। ব্যবসায় লাভ হলে হবে কিন্তু বড় লোকসানে পড়বার কোনো সম্ভাবনা এখানে নেই।রঙিন নিয়ে কাজ করছেন সুমাইয়া। এই বৈশাখে দুবছরে পা রাখলো। অনলাইন বিজনেসের ইচ্ছা ছিল না। ইচ্ছে ছিল পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী হওয়া। যুগে যুগে আমরা যেমন ব্যবসায়ী দেখে অভ্যস্থ ঠিক তেমন। ব্যবসায়ী হতে চান বলেই মাধ্যমিকে ব্যবসায় শিক্ষায় ভর্তি হওয়া। কৈশোর পেরিয়ে যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবেশ করলেন তখন দেখলেন এই প্লাটফর্মটাকে ব্যবহার করা যায় নিজের মতো করে, নিজের মতো দোকান সাজিয়ে।সুমাইয়া উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, শুরুতে ছয় হাজার টাকা দেন মা, বাবা রাজি ছিলেন না। তবুও বাবা একদিন রং তুলি এনে দিলেন। নববর্ষের আগ মুহুর্ত। তাই একটু কায়দা করেই সাদা রঙের কিছু কাপড় কেনা হলো। সেই সাদা কাপড়ে নিজের মতো আঁকবেন বৈশাখ। অনেক বায়নার পর বাবা কাজ শেখালেন। রং তুলিতে বাবাই ছিলেন আমার প্রশিক্ষক। কোন রঙে কোন রাসায়নিক উপাদান কি পরিমাণ মেশালে কাপড়ে সে রঙ দীর্ঘস্থায়ী হয় এছাড়াও নানান বিষয় বাবার কাছ থেকে জানতে পারি।অল্পকিছু ডিজাইনে সাজানো হলো রঙিনের সাদা কাপড়গুলোকে। সেগুলোর ফটোগ্রাফিও করলেন নিজের স্মার্টফোনে। এরপর বৈশাখী সাজের পোশাকগুলো আপলোড করা হলো ফেসবুক পেজে। বন্ধুদের অনুরোধ করলেন লাইক দেবার জন্য। বন্ধুরা লাইক করলেন, শেয়ার হলো। মুহুর্তেই ছড়িয়ে পরলো দেশব্যাপী। সেবারের প্রথম বৈশাখেই রঙিন বাজিমাত করে ফেললো। অসংখ্য অর্ডার আসলো। কাজ করে কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না সুমাইয়া তবুও কাস্টমারের অর্ডার সময়মত পৌছে দিতে কখনো কার্পণ্য ছিল না সুমাইয়ার। রাত জেগে কাজ করেছেন নিজের ব্যবসাকে উপরে উঠাতে।একের পর এক ক্রেতাদের মন জয় করতে থাকে সুমাইয়ার রঙিন। কলকাতাতেও যায় রঙিনের পোশাক। সুমাইয়ার মন বলে ঠিকমত কাজ করতে পারলে কলকাতাতেও ব্যবসার বেশ সুযোগ রয়েছে। অনলাইন বিজনেস বলে অনেকেই ভরসা পান না। কয়েকবার ঠেকেছেনও। তবু তা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিচক্ষনতার সাথে চলেছেন বলে তা সামলে নিয়েছেন তাই পরবর্তীতে আর ভুগতে হয়নি তাকে।
প্রোডাক্ট যায় কুরিয়ার সার্ভিসে। সময় আর পণ্যের মানের ক্ষেত্রে সবসময়ই সচেতন সুমাইয়া। বাজারের রঙে ভরসা নাই, সেই রঙ মলিন হলে রঙিনের বদনাম হবে এমনটা চান না সুমাইয়া। তাই দাম বেশি বা খরচ বেশি হলেও নিজেই রঙ বানাতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। একবছর কোনো কারিগর ছিল না সুমাইয়ার। নিজেই সব কাজ করেছেন।

তিনি বলেন, পড়াশুনা শেষে কিছু করব বলে এখন বসে থাকার উপায় আর নেই। কিছু করতে হলে ছাত্র অবস্থায়ও করা যায়। প্রয়োজন কেবল অধ্যাবসায়ের। সীমিত লাভ রেখে পণ্য সরবরাহ করতে পারলে, সৎ থাকলে ব্যবসায় সফলতা নিশ্চিত।

 

 

সাদিয়া সূচনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here