যদি রং-তুলি,ক্যানভাস না থাকে তাহলে শিল্পী মনের বিকাশ কি থেমে যায়? বরং সাদা আকাশটাকেই ক্যানভাস বানিয়ে তার ওপর ছিঁটিয়ে দেন মেঘের ভেলা, আঁকিয়ে ফেলেন শিল্পীর আপন মনের সৃষ্টি। উদ্যোক্তা মাহবুব রহমানও তেমনটায় করতেন। সেই ছোট্ট বেলায় অংক কষার সাদা পৃষ্ঠা আঁকিবুঁকিতে ভরিয়ে দিতেন। কল্পনার সব রং দিয়ে ফুটিয়ে তুলতেন তার ভাবনার জগৎ।
সুন্দর করে লেখা, ড্রইং বা পেইন্টিং এর ওপর কোন প্রশিক্ষণ না নিলেও সিদ্ধহস্ত মাহবুব এসবের জন্য বেশ পরিচিত ছিলেন। ইন্টারে পড়াকালীন একদিন এলাকার এক চাচা মাহবুবকে ডাকলেন তার ফাস্ট ফুড দোকানের কিছু লেখালিখি আর একটা বার্গারের ছবি আঁকতে। মাহবুবুর আঁকলেন খুব পছন্দ হল ওই চাচার। ২৪ঘন্টা না পেরুতেই এক কাস্টমার সেই পেইন্ট খুব পছন্দ করেন।
উনিও নিজের জন্য কিছু কাজ করাবেন। শুরু হলো যাত্রা, প্রথম কাজেই পাঁচ হাজার টাকা পেলেন। এরপর অর্ডার পেলেন আরও অনেক কাজের। অভাব অনুভব করতে শুরু করলেন একটি দোকানের। মেঝ ভাই কিছু টাকা দিয়ে দোকান নিতে সাহায্য করলেন।
কাজের চাপে পড়াশুনা আর চালিয়ে যেতে পারলেন না। কাজের সুনাম থাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে তার ডাক থাকতো। বাংলাদেশের শীর্ষ শিল্পীদের মিলনমেলায় তার কর্ম প্রদর্শিত হয়। ঢাকার বিলাসবহুল বাড়ীগুলোর ড্রইং রুম থেকে লন্ডনের অনেক বাড়ীতেও তার সৃষ্টি দেয়ালে টাঙানো।
নাভানা, র্যাংগসের মতো বড় বড় কোম্পানির দেয়ালে থাকে মাহবুবের রং-তুলির আঁচড়। টয়োটার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে প্রায় ১৫বছর ধরে কাজ করছেন। মার্সিডিজ বেঞ্জ কোম্পানির সকল কার্ডের কাজ সহ ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীগুলোর গায়ের লিখা পেইন্টিং সব কিছু করেছেন উদ্যোক্তা মাহবুব। মাহবুবের উল্লেখযোগ্য একটি কাজ ঢাকা চিটাগাং ক্রিকেট মাঠ গুলোর সকল ড্রইং-পেইন্টিং।
উদ্যোক্তা মাহবুবের উদ্যোগ “মাহবুব আর্ট” এ স্থায়ী ভাবে ৩জন কর্মী থাকলেও কাজের ওপর ভিত্তি করে অনেক অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকেন। তার এই উদ্যোগে যোগ করেছেন লেজার ড্রইংয়ের।
মাহবুবের উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, “মন দিয়ে কিছু করলে তার সুফল একদিন ঠিকই আসে। কাজের জন্য দৌঁড়ানো লাগেনা, কাজ আপনার কাছেই আসবে। ইদানিং অনলাইনেও আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি”।
রাজধানীর কুনিপাড়াতে উদ্যোক্তা মাহবুবের ফ্যাক্টরি এবং দোকান। কিন্তু কাজ করছেন সারা দেশে-বিদেশে।শূন্য হাতে শুরু করলেও আজ ৩০ লক্ষ টাকা মূল্যমানের ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ‘ড্রইং,পেইন্টিং, লিখালিখির পাশাপাশি নতুন সংযোজন করেছি লেজার ড্রইং। খুব ইচ্ছা কয়েকটি মেশিন নিয়ে বড় একটি ফ্যাক্টরি কারার যেখানে অনেক কর্মী স্থায়ীভাবে কাজ করবেন’।
বিপ্লব আহসান