খুব ছোট বেলায় বাবা-মা ড্রেস কিনে দিয়েছেন কিন্তু একটু বড় হওয়ার পর নিজের কোন ড্রেস সপ থেকে কোনদিন কিনেছি কিনা মনে পড়ে না”, বললেন মাকসুদা নিপু। ছোটবেলা থেকেই বেসিক নলেজ ভীষণ ভালো ছিলো নিপুর। কাউকে কোন সেলাইয়ের কাজ করতে দেখলেই তা খুব সহজেই আয়ত্ত করতে পারতো। তখন থেকেই বিকেল হলেই বারান্দায় সেলাই নিয়ে বসে পড়তেন। শিখতেন নানান ডিজাইনের কারুকার্য।
ইডেনে পলিটিক্যাল সাইন্সের ছাত্রী ছিলেন নিপু। বাবা মায়ের ইচ্ছে পড়াশোনা শেষ করে মেয়ে সরকারি চাকরি করবে। কিন্তু চাকরি তাকে কখনোই টানেনি। বাবার ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করতেন নিপু।
কয়েকটি বিষয়ে ট্রেনিং নিয়েছিলেন নিপু।। প্রথমে ব্লক-বাটিক, স্কিন প্রিন্ট ফ্যাশন ডিজাইন ইত্যাদির উপর খুব ভালো ভাবে ট্রেনিং নেন। তারপর শুরু করেন নতুন নতুন ডিজাইনে নতুন নতুন পণ্য তৈরি। খুব অল্প সময়ে সবার কাছে খুব সুনাম কুঁড়ায় নিপু।
কলেজের বন্ধু- বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবার জন্য পোশাকের সুন্দর সুন্দর ডিজাইন তৈরি করে দিতেন। সবাই অনেক পছন্দ করত। অভ্যাসটা এখনও রয়ে গেছে। একসময় পরিবারের অমতেই ছোট ছোট কাজের অর্ডার নিয়ে কাজগুলো করতেন নিপু। চাকরীর পেছনে না ছুটে ঘরে বসেই এক বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে কাজে লেগে পড়েন। বেশ ভালো সাড়াও পেতে শুরু করেন নিপু।
ক্রেতা চাহিদায় কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় একসময় ঘরে বসে আর কাজগুলো করা সম্ভব হলো না। কাজের জন্য একটা ছোট্ট জায়গা অর্থাৎ কারখানা তৈরি করলেন উদ্যোক্তা মাকসুদা নিপু। ছোট একটা সেলস এর জায়গাও তৈরি হলো তার। নিজের অসীম সাহস আর নিরলস প্রচেষ্টায় ৪ জন কর্মী নিয়ে শুরু হয় উদ্যোক্তা নিপুর কর্মজীবন। এরপর অনলাইনে একটা পেইজ খুললেন তিনি। মেয়েদের একধরণের পোশাক কটি। কটির ছবি সেই পেইজে দিয়েই অনলাইন যাত্রা শুরু করেন উদ্যোক্তা মাকসুদা নিপু। অনলেইনেও পেলেন ব্যপক সাড়া। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রিটেইল এবং হোলসেল অর্ডার আসা শুরু হয়।
শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও দুটি দেশ মালোয়শিয়া ও ইন্ডিয়ার বারাসাতে পণ্য পাঠান উদ্যোক্তা নিপু। কাজেই কর্মীর সংখ্যাও বাড়াতে হয় তাকে। বর্তমানে উদ্যোক্তার স্থায়ী কর্মী সংখা ৬ জন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন উদ্যোক্তা মাকসুদা নিপু।
নিপু বলেন, “আমি নিজের দেশের পণ্য নিয়ে ভালো ভালো কাজ করতে চাই, ভবিষ্যতে আমার পণ্য রপ্তানি করব। আমি একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গর্বিত যে, আমি শোরুম ছাড়া শুধুমাত্র অনলাইন পেইজ আর আমার ধারাবাহিক কাস্টমারদের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর রহমতে আলহামদুলিল্লাহ টিকে আছি। সকলের দোয়াই আমি দেশী পণ্য নিয়ে কাজ করতে চাই”।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা