মা-বাবা আর দু বোনের ছোট একটা সুখী পরিবার। বড় মেয়ে লামীয়া পারভীন শিমুর অনার্স শেষ করে মাস্টার্স পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায়। ছোট মেয়ে লায়লা পারভীন শান্তা ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে একাউন্টিং এ অনার্স-মাস্টার্স শেষে বাইং হাউজে চাকরি শুরু করেন। সুখেই চলছিলো শিমু-শান্তাদের পরিবার কিন্তু হঠাৎ বাবা মারা গেলেন। প্রচন্ড মরমাহত হয়ে পরলেন পুরো পরিবার।
বছর ঘুরতেই বড় মেয়ের স্বামীও মারা গেলেন। দু বোন আর মা ভেংগে পরলেন সম্পূর্ণভাবে। কিছু দিন পর চাকরি ছেড়ে দিলেন শান্তা। হতাশা আর একাকিত্ব কাটানোর জন্য বড় বোনকে কিছু করবার পরামর্শ দিলেন শান্তা। দু বোন পরামর্শ করে তাঁতের কাপড়ে ব্লকের কাজ শুরু করেন। আগে থেকেই যেহেতু পারিবারিক কাজে প্রায়ই ইন্ডিয়া যাওয়া হতো তাদের। তাই সেখান থেকে কাপড় এবং বিভিন্ন অলংকার নিয়ে এসে সেগুলো প্রসেসিং করে ব্যবসা করতেন টুকটাক।
এবার আগের কাজ গুলো বন্ধ করে পুরোদমে নতুন উদ্যোক্তা হলেন দু বোন। এস এম ই’র সাথে যুক্ত হলেন, ট্রেইনিং নিলেন দুজনে।বাবা মায়ের নামের থেকে কিছু অক্ষর নিয়ে যাত্রা শুরু হলো ‘নূরমা’র। জুলাই ২০১৮ এর শেষ হতে নূরমা এর পথচলা। শুরুতে মাত্র ৫০০০ টাকা মূলধন নিয়ে পথচলা শুরু তাদের। এখন ২জন কর্মী আছেন তাদের সাথে।
তাঁতের কাজ ছেড়ে এখন জামদানী আর কাতান নিয়ে কাজ করছেন। তাদের ডিজাইনে তৈরি হয় কুর্তি আর সাথে ম্যাচিং ব্যাগ। ব্যাগ গুলো সুন্দর ফিনিসিং এর জন্য বড় বোন নিজ হাতেই তৈরী করেন। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন।ভালো সাড়া মিলেছে।
শান্তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “দেশীয় কিছু নিয়ে কাজ করতে পারলে আমরা আমাদের পথচলাকে সহজ করতে পারবো।এরপর ভাবলাম যদি কাতান আর জামদানী নিয়ে কাজ করি তাহলে মন্দ হয়না।সাথে আমাদের নিজেদের তৈরী গহনা। এরপর থেকেই দুইজন জনবল নিয়ে কাজ শুরু করি।প্রথমে অল্প কিছু জামা তৈরী করে পরিচিতদের কাছে নিয়ে যাই। সবাই খুব সুনাম করে এবং কিনেও নেয়। এরপর ভাবলাম জামার সাথে আজকাল ম্যাচিং ব্যাগ নেয়া একটা প্রচলন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপর শুরু করলাম জামার কাপড় দিয়েই ব্যাগ তৈরী করা”।
কিছুদিনের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠে জামদানী আর কাতানের সিংগেল জামা সাথে ব্যাগ।আর ব্যাগের জন্য কোন আলাদা মূল্য দিতে হচ্ছেনা। তাদের জামদানী আর কাতানের পন্য লন্ডন এবং আমেরিকাতে পরিচিতদের কাছে বিক্রি করছেন তারা। যাদের উৎসাহে এগিয়ে চলছে দু বোনের উদ্যোগ। পূরণ হচ্ছে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন।
বিপ্লব আহসান