তরুণ এক ফ্যাশন ডিজাইনার শাম্মী রেজা। ডাক নাম অরূণা। পড়াশোনা অনার্স, ইসলামের ইতিহাস রাজশাহী সরকারী মহিলা কলেজ। ইচ্ছে থাকলেও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আর্ট ডিজাইন বা ফ্যাশন নিয়ে পড়াশোনা করা হয়নি। বাবা আরএমজি সেক্টরের একজন প্যাটার্ন ডিজাইনার। বাবাকে ডিজাইনের নানা কাজ করা দেখতে দেখতে অরূণার মনে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে কঠিন আগ্রহ জন্মে। ছোটবেলায় নিজের আঁকিবুকি নিয়েই বড় হয়েছেন অরূণা। আঁকার প্রতি অসাধারন ঝোঁক। একবার দেখলেই তা হুবহু তুলে ফেলতে পারতো ছোট্ট মেয়েটি স্কুলে, কলেজে কিংবা অনার্স পড়া অবস্থায়।
ছোট ভাইয়ের একটা ফতুয়া ডিজাইন করে কিশোরী অরুণা ক্লাস এইটে পড়া অবস্থায়। বিভিন্ন অর্ডারের কাজ গুলো বুটিক নিয়ে যারা ব্যবসা করেন তাঁদের মাধ্যমে ছোট ছোট করে অরূণার কাছে আসতো। অরূণা সেটা করে ফেলতো। এভাবে পড়াশোনার ফাঁকে টুকটাক হাত খরচ সব অরূণা নিজেই চালাতো।
ক্লাস টেন এ পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায় অরূণার। স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে শুরু হয় নতুন সংসার। দুজনেই ছাত্র। বাবা মার কাছ থেকে দুজনেই টুকটাক টাকা পয়সা পেলেও দীর্ঘ একটা সময় দুজনের কষ্টের সময় গেছে। ছোট্ট ছোট্ট হাতের কাজ করলেও তা স্বচ্ছলতা আনার মতো অবস্থায় আসেনি বা আনতে পারেনি অরূণাকে।
২০১৫ সালে স্বামী মাস্টার্স এবং অরূণা অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে। খুব গুছিয়ে কাজ করবার কথা ভাবলেন অরূণা। অনলাইনে এফ কমার্সে অরূণা ফ্যাশন হাউজ, একটা বিজনেস পেজ খুললেন অরূণা। টেক্সটাইল আর্ট ট্রেসিং পেপারে আঁকা ডিজাইন দিলেন পেজে। ভীষণ সাড়া মিললো। দশটি নকশা বিক্রি হয়ে গেলো। প্রায় ২২০০ টাকার মতো প্রথম পোষ্ট গুলো থেকেই কামাই। প্রচার হলো অনেক। যেই দশ জন ডিজাইন এর অর্ডার করলেন সেগুলোর ডিজাইন করলেন অরূণা।
অর্ডার আসতেই থাকলো। ডিজাইন তৈরি করে সেগুলো কুরিয়ারে পাঠাতে থাকলো অরূণা। সার্টিফিকেট বা ট্রেনিং আছে কিনা এমন অনেক প্রশ্ন আসতো, অরূণার কাছে। BWCCI রাজশাহী সভাপতি জোনাকী হক এর সাথে অনলাইনে কথা হলো অরুণার।
সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন এবং BWCCI তে সে সময় সিপ এর একটি ট্রেনিং চলছিলো ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর, সেই ট্রেনিং এ অংশগ্রহণ করলেন অরূণা। ৮টি বিষয়ের ওপর বিশদ কোর্সটি সম্পূর্ণ হলো। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতার সাথে ট্রেনিং সম্পন্ন করলেন অরূণা রেজা। BWCCI এর সদস্য হলেন। সময়ের সাথে সাথে অনেক বিষয়ে শেখা এবং ট্রেনিং এ অংশগ্রহণ করা হলো। নানান সেমিনার এবং কর্মশালায় অংশগ্রহণ করলেন BWCCI থেকে অরূণা। নেটওয়ার্কিং এর ওপর একটি বিশ্বসাহিত্য কোর্স সম্পন্ন করা হলো। অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও অনেক কাজ আসতে শুরু করলো অরূণার কাছে।
নানা ধরনের ডিজাইনে অরুণার নাম আজ অনেকের জানা। সালোয়ার কামিজ, বাচ্চাদের পোশাক, পাঞ্জাবী, বিছানার চাদর, সকল কিছুতেই ধীরে ধীরে ডিজানের পারদর্শীতা অরূণাকে পরিচয় করাতে থাকে। নতুন করে যোগ হয় ইভেন্ট। ফুড কার্ভিং থেকে শুরু করে নতুন কোনে সাজানো, মেহেদি আর্ট থেকে ডেকোরেশন পর্যন্ত অরূণা ইভেন্ট অর্গানাইজেশন। অরূণা আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ, একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের কাজে নিজের সংসার জীবনে এনেছেন স্বচ্ছলতা। শামীম রেজা আজ চাকরি করেন সেই সাথে হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন অরূণার উদ্যোগ। ডিজাইন ও হস্তশিল্পের কাজে ধৈর্য, নিষ্ঠা এবং একাগ্রতা দিয়ে এগিয়ে চলেছেন অরূণা। স্বচ্ছলতা আজ অরূণার জীবনে।
সংগঠক হিসেবে অনলাইনে অরূণা আরও ২৫ জন উদ্যোক্তাদের সাথে এক হয়েছেন নবীন-প্রবীণ সকল উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে। প্রয়াসটির নাম শৈলী শিল্প। আজ গ্রুপের সদস্য ৩৫ জন উদ্যোক্তা। অনলাইন প্লাটফর্মে গ্রুপে সকলে মিলে আজ এগিয়ে নিচ্ছেন সকলের উদ্যোগ।
প্রায় ৫ জন এডমিন আজ নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং তাঁদের উদ্যোগকে আরও সম্প্রসারিত ও সমৃদ্ধশালী করার প্রয়াসে কাজ করে চলেছেন। উপদেষ্টা হিসেবে খ্যাতিমান প্রশিক্ষক জনাব আতিয়ার রহমানের দিক নির্দেশনায় এগিয়ে চলেছে শৈলী শিল্প। অরূণা আজ তাঁর একজন গর্বিত সদস্য।
অপু মাহফুজ