নতুন নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সংযোগ তৈরির মাধ্যমে পণ্যের বাজারজাতকরণ সমস্যা সমাধানের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন পঞ্চমবারের মতো “ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মিলন” বা Buyer-Supplier Matchmaking Program আয়োজন করেছিলেন ২৯ এপ্রিল সোমবার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এমপি, মাননীয় মন্ত্রী, শিল্প মন্ত্রণালয়। সভাপতিত্ব করেন জনাব কে এম হাবিব উল্লাহ, চেয়ারপার্সন, এসএমই ফাউন্ডেশন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনাব মোঃ সফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এসএমই ফাউন্ডেশন।
ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মিলনে মন্ত্রী বলেন, “আমার বিশ্বাস, এ ধরণের উদ্যোগ দেশব্যাপী টেকসই এ সুসংহত এসএমই শিল্পখাত গড়ে তোলার পাশাপাশি পণ্য বৈচিত্র্যকরণ ও বাজারজাতকরণে সহায়তা করবে। এটি একটি সময়োপযোগী ও সৃজনশীল উদ্যোগ বলে আমি মনে করি। এছাড়াও বলেন, দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী, এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পিত ভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব”।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কে এম হাবিব উল্লাহ, তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের পণ্যের মানের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে যেনো সেই পণ্য বিশ্বমানের হয় এবং এই পণ্য প্রদর্শনের জন্য স্থায়ীভাবে একটি স্থানের ব্যবস্থা করা হবে ” এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সেখানে উপস্থিত শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।
৫ম ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মিলন অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৪৫ জন সম্ভাবনাময় নতুন নারী উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেছেন। অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাগণ তাঁদের উৎপাদিত বুটিক পণ্য, পাটজাতপণ্য, চামড়াজাত পণ্য, হস্তশিল্প ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী বাণিজ্যিক ক্রেতাদের জন্য পণ্য প্রদর্শন করেছেন।
অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক ক্রেতা হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন – আড়ং, দেশীদশ, স্বদেশী, ইত্যাদি এর শীর্ষ ব্যক্তিগণ অংশগ্রহণ করেছেন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী নারী উদ্যোক্তাদের পণ্যের গুণগতমান, ডিজাইন, রংয়ের ব্যবহার, পাইকারী মূল্য এবং উৎপাদন সক্ষমতা যাচাইয়ের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ক্রেতাগণ সাপ্লাইয়ার নির্বাচন করতে পারবেন। ক্রেতাদের সুবিধার্থে অংশগ্রহণকারী নারী উদ্যোক্তাদের তথ্য সম্বলিত একটি ক্যাটালগ তৈরি করা হয়েছে, যা অনুষ্ঠানে বিতরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কর্মসূচির প্রস্তুতি পূর্বে অংশগ্রহণকারী নারী উদ্যোক্তাদের প্রস্তুতির জন্য পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, পণ্যের গুণগতমান নিয়ন্ত্রন, চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ডিজাইন ব্যবহার এবং পাইকারী মূল্য নির্ধারণ কৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষণে দেশের শীর্ষস্থানীয় ডিজাইনার এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীগণ রিসোর্সপার্সন হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
দেশে প্রায় ১০ লক্ষ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং প্রায় ৬৮ লক্ষ্য কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার ৭.২১ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। নারীর জন্য সহায়ক কর্মপরিবেশ তৈরি এবং নানাবিধ প্রণোদনার জন্য দেশে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা গত ১০ বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায় যে, পণ্যের বাজার সংযোগ বা বাজারজাতকরণ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অন্যতম প্রধান একটি বাঁধা। ব্যবসা শুরুর প্রথম পর্যায়ে এই সমস্যা আরও প্রকট। গবেষণায় দেখা যায় যে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ৩৭ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা পূঁজি সংকটকে উল্লেখ করলেও ২০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা তাঁদের প্রধান সমস্যা হিসেবে পণ্যের বাজারজাতকরণকে চিহ্নিত করছেন। উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হলে নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক প্রসার সহজতর হবে। এই প্রেক্ষাপটেই মূলত এই আয়োজন।
ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মিলন অনুষ্ঠানটি একদিকে নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে অন্যদিকে বাণিজ্যিক ক্রেতা বা খুচরা বিক্রেতাদের পণ্যের সরবরাহ উৎস বা যোগানদাতা খুঁজে পেতে সহায়ক ভূমিকা পালন এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন অর্জনে সহায়ক হবে। ফলশ্রুতিতে, এই কর্মসূচি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখিত নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণে সরাসরিভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মত ব্যক্ত করেন উপস্থিত সকলে।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা