বাংলাদেশ এমন একটি দেশ এখানে কেউ যদি আর্থিক এবং মেধা শ্রম ঠিক মত কাজে লাগাতে পারে সবচেয়ে দ্রুত টাকা উর্পাজন করা সম্ভব বলে মনে করেন রাজশাহীর বিলসিমলা এলাকার এমনই একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মোঃ আব্দুল বাসিত সরকার।
বাবা হারানো পরিবারের বড় ছেলে হিসাবে অনার্স ২য়(দ্বিতীয়) বর্ষ থেকে পরিবারের হাল ধরতে হয়। এদিক সেদিক কিছু করে সংসারের সাহায্য করেন। ছোট বেলা থেকেই তিনি মুরগি নিয়ে খেলা করতেন। তার মধ্যে অন্য রকম ভাল লাগা কাজ করত। ২০০০ সালে তিনি চিন্তা করলেন আমি একটা নিজের মুরগির ফার্ম করব কোথায় করব জায়গা নাই অনেক ভেবে তিনি ঠিক করলেন তিনি তার বাসার ছাদে ফার্ম করবেন। নিকটবর্তী আত্মীয়ের কাছ থেকে ৪৫,০০০ টাকা ধার হিসাবে নেন। সেই টাকা দিয়ে ১৭০টি লেয়ার মুরগি কিনেন এবং তার ছাদটা মুরগি রাখার উপযোগী করে তোলেন। তারপর মোটামোটি ভালই টাকা আসতে থাকে মুরগি বিক্রি করে। আসতে আসতে তার ধার শোধ হয়ে আসতে থাকে।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মোঃ আব্দুল বাসিত সরকার
ইতোমধ্যে ২০০১ সালে তিনি মনোবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স পাশ করেন। বি.সি.এস দেয়ার চিন্তা করেন পড়াশুনার পাশাপাশি মুরগি কেনাবেচা চালিয়ে যান। ২৪ তম বি.সি.এস দেন কিন্তু তিনি টিকতে পারেন না। ২৭তম বি.সি.এস দেন লিখিততে পাশ করেন কিন্তু ভাইবাতে তার কাছে টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি দিতে পারেন না। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে চাকরীর প্রস্তাব পান কিন্তু তার মা তাকে রাজশাহীর বাইরে যেতে দিতে চান না। তখন তিনি চিন্তা করলেন আমি এই মুরগির ফার্মটাকে আরও বড় করব। আবারও তিনি টাকা ধার নিয়ে দুইটি জায়গা ভাড়া নেন- রাজশাহীর কোর্ট এবং নওদাপাড়া এলাকায়।
সেখানে মোটামোটি ভালোই মুরগি ফার্মটি চলতে থাকে। কিন্তু আবাসিক এলাকার মধ্যে জায়গাটি হওয়ায় দুর্গন্ধের কারনে এলাকাবাসী সেখান থেকে চলে যেতে বলে। যে টাকা হয়েছিল সেই টাকা দিয়ে ২০০৬ সালে একটি ফাঁকা বসতহীন এলাকা দারুসা, পবা রাজশাহীতে একটি জায়গা কেনেন।
ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ২০০৯সালে কমার্শিয়াল মুরগির ডিম কেনেন। ২০১০ সালে বায়না পেরেটস নামক প্রজাতির মুরগী কিনেন। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে দুটি মুরগির বাচ্চা ফোটানোর মেশিন কিনেন। অবশেষে তিনি সাফল্যের মুখ দেখতে পান।
হঠাৎ ২০১৩ সালের ১৩ই মার্চ বার্ড ফ্লু নামক রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক মুরগি মারা যায় এবং তিনি অনেক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তিনি সর্বশান্ত হয়ে যান। যেহেতু তিনি হার্টের রোগী ছিলেন দুশ্চিন্তার কারণে তিনি ষ্ট্রোক করেন। তার হার্টের অপারেশন করা হয় এবং তিনি সুস্থ হন। কিন্তু তিনি থেমে থাকেন নি আবার নতুন করে তার পোল্ট্রি ফার্মটি সচল করে তোলেন।
বর্তমানে তার মোট পুঁজি এক কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। ৮ জন শ্রমিক নিয়ে তিনি তার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি একজন সফল উদ্যেক্তা ।
একজন উদ্যেক্তার কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন তা জানতে চাওয়া হলে জনাব মোঃ আব্দুল বসিত সরকার বলেন প্রথমত, আগ্রহ বা উদ্দীপনা থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, হবে না বলে কোন চিন্তা মাথায় আনা যাবে না।তৃতীয়ত, আমি পারব এই আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে তা ছাড়া যে কাজটি করবেন সেই বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে বলে আমি মনে করি।
————————————
রাজশাহী থেকে রাইদুল ইসলাম শুভ
এসএমই করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা