একজন দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভুত কানাডীয় আমেরিকান ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী এবং প্রকৌশলী। তিনি মহাকাশ ভ্রমণ সংস্থা স্পেসএক্সের সিইও এবং সিটিও, বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা মোটরসের সিইও ও পণ্য প্রকৌশলী, সোলারসিটির চেয়ারম্যান ও পেপল এর একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়াও তিনি হাইপারলুপ নামক কল্পিত উচ্চ গতিসম্পন্ন পরিবহন ব্যবস্থার উদ্ভাবক।
২৮ জুন ১৯৭১ সালে প্রিটোরিয়াতে জন্ম ইলন রীভ মাস্কের। প্রথাগত ধারনার সম্পূর্ন বিপরীতে তিনি। মে মাস্ক এবং ইলন মাস্ক এর সন্তান। ছোট ভাই কিম্বাল এবং বোন টস্কার সাথে বেড়ে ওঠা। শৈশব থেকেই প্রচুর বই পড়তেন তিনি। ৯/১০ বছর বয়স থেকেই কম্পিউটার এর প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ। ১২ বছর বয়সে সে তার প্রথম ভিডিও গেম ব্লাস্টার (Blaster) বিক্রি করে জীবনের প্রথম আয় করেন ৫০০ ডলার। এই গেম টির ওয়েব ভার্সন অনলাইনে এখনো আছে। সেখানেই থেমে থাকেননি ইলন মাস্ক। নিত্যনতুন সৃষ্টিশীল চিন্তা তাকে পথ দেখিয়েছে।
বারো বছর বয়সেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর উপর শিক্ষা লাভ করেন। ১৭ বছর বয়সে কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে পড়ার জন্যে তিনি কানাডায় যান। দুই বছর পর পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হন, যেখানে হোবার্ট স্কুল থেকে অর্থনীতি ডিগ্রি লাভ করেন এবং আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে একটি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৯৫ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে প্রয়োগিকৃত পদার্থবিজ্ঞান এবং পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি শুরু করেন, কিন্তু দু দিন পরেই আবার সেটা বাতিলও করেন, হয়ত সেদিনের সেই সিদ্ধান্ত না নিলে আজ হয়তো তিনি একজন ইলন মাস্ক হতেন না। স্বপ্ন ছিলো অন্য কিছু, কিন্তু তিনি বেছে নেন উদ্যোক্তার কর্মজীবনের কঠিন,স্বপ্নিল, বর্ণিল পথ। এ পথে হাজার প্রতিবন্ধকতার সত্ত্বেও, তার চোখে ছিলো সুন্দর আগামীর স্বপ্ন।
১৯৯৫ সালে মাস্ক এবং তার ভাই কিম্বালের হাত ধরে জীপ ২(Zip2) এর যাত্রা শুরু হয়। যা ১৯৯৯ সালে কম্প্যাকের ৩৪০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয়। ইলন মাস্ক সফলতার মুখ দেখতে শুরু করলেন বেশ ভালোভাবেই। মাস্ক তার ৭% শেয়ার এর জন্যে পেলেন ২২ মিলিয়ন ডলার। সফলতার অগ্রযাত্রা এখান থেকে শুরু হয়ে থেমে থাকে নি। যে মানুষ টি পৃথিবী বদলানোর স্বপ্ন দেখেন, তিনি এত টুকুতেই সন্তুষ্ট হবার নন!
১৯৯৯ সালে জীপ২ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশের ১০ মিলিওন ডলার দিয়ে X.com একটি অনলাইন পেমেন্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০০ সালে এটি Confinity এর সঙ্গে একত্রিত হতে চুক্তিবদ্ধ হয় এবং PayPal (পেপল) নামে পথচলা শুরু করে। যা অক্টোবর ২০০২ সালে ইবে ১.৫ বিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনে নেয়। ইলন মাস্ক পান ১৬৫ মিলিওন ডলার। এ তো সবে পথ চলার শুরু।
ইলন মাস্ক স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন এবং সে স্বপ্ন কে বাস্তবে রুপান্তরিত করতে জানেন। তার স্বপ্ন এবার মঙ্গলে বাস করার। এ লক্ষ্যে তার প্রচেষ্টার কমতি ছিলোনা। শুরু হয় স্বপ্ন যাত্রার প্রজেক্ট। মে ২০০২ সালে মাস্ক স্পেসএক্স নামে একটি মহাকাশ নির্মাতা এবং স্পেস ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসেস নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং লিড ডিজাইনার পদে আছেন। ২০০৬ সালে স্পেস এক্স NASA এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। এত কিছুর পর যখন তার বিলাসী জীবন ভোগ করে, আলসেমি করার মত অর্থের অভাব নেই তখনো ইলন মাস্ক কর্মঠ।
তার কর্মজীবন বহুমুখী। তিনি মাল্টি টাস্কার। তিনি থেমে থাকতে আসেন নি, স্থবিরতা তার জন্যে নয়, তিনি মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গি বদলাবার আইকন। তিনি টেসলার এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা যেখানে ইলেকট্রনিক গাড়ি ও সৌর প্যানেল প্রস্তুত করা হয়। বর্তমানে এর সি ই ও এবং পণ্যের স্থপতি হিসেবে কাজ করছেন।
চোখে নতুন স্বপ্ন, নতুন প্রত্যয়, থেমে থাকেন নি মাস্ক।
২০০৬ সালে তার অনুপ্রেরনায় তৈরি হয় সোলারসিটি। এটি সৌরশক্তির সেবা মুলক একটি সংস্থা এবং বর্তমানে টেসলার এর একটি সহায়ক সংস্থা। ইলন রীভ মাস্ক তার চেয়ারম্যান হিসাবে কর্মরত আছেন।
(তথ্যসূত্র ও ছবি ইন্টারনেট থেকে)
জান্নাতুল ফেরদৌস তিথি