লটকন চাষে প্রসিদ্ধ নরসিংদী। নরসিংদীতে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পাচ্ছেন চাষিরা। এখানকার লটকন চাষে উপযুক্ত মাটি ও আবহাওয়া হওয়ায় এবং আর্থিক লাভের কারণে চাষিদের মধ্যে লটকন চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এ জেলার লটকন দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপেও রপ্তানি হচ্ছে।
নরসিংদীর বেলাব, শিবপুর, মনোহরদী, নরসিংদী সদর, পলাশ, রায়পুরার আংশিক অঞ্চলে আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় লটকন ফল ভালো জন্মে। বেলাব উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লটকনের বাগান রয়েছে। ২৫ বছর আগেও লটকনের স্বতন্ত্র বাগান ছিল না। তখন অন্যান্য ফলগাছের সাথেই দু-একটি গাছ লাগানো হতো।
লটকন চাষিরা জানান, এক সময় লটকনের তেমন চাহিদা ছিল না, দামও ছিল কম, সে কারণে কেউ লটকনের স্বতন্ত্র বাগান করার চিন্তা করত না। বর্তমানে চাহিদা ও মূল্য বাড়ায় এ চাষে বাড়ছে আগ্রহ অনেকের।
একটি পূর্ণবয়স্ক লটকন গাছে ৫-১০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। অন্য ফসলের তুলনায় লটকনে উৎপাদন খরচ কম কিন্তু আয় বেশি। দেশের পাশাপশি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে এখানকার লটকনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে।
মূলত বর্ষার আগে-পরে মিলিয়ে তিন মাস; জুনের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়টা লটকন ওঠার মৌসুম। এই লটকন বিক্রি হচ্ছে মরজাল সমতা বাজার এলাকায় বসা পাইকারি হাটে। এ তিন মাস বাজার ছাড়িয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হয় বাজার। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বেচাকেনা।
ক্রেতা-বিক্রেতা জানান, ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এ হাটে প্রতিদিন প্রায় দেড় কোটি টাকার লটকন কেনাবেচা হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজিমণ্ডউর-রউফ খাঁন জানান, এ বছর বেলাবো উপজেলায় প্রায় ২০৫ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ হলেও ১৮৫ হেক্টর জমি থেকে লটকন উৎপাদন হচ্ছে। এ মৌসুমে এখানে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ মেট্রিকটন লটকন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আবহাওয়া ও বাজার মূল্য ভালো থাকায় লটকন চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, জেলায় চলতি বছর ২ হাজার হেক্টর জমিতে লটকন চাষ হয়েছে। মৌসুমে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিকটন লটকন উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে, যার আনুমানিক দাম ৪৫০ কোটি টাকা। প্রতি কেজি লটকন স্থানীয় বাজারে ১২০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ভালো ফলন ও দামে খুশি চাষিরা।