আমেরিকার বিজনেস ম্যাগাজিন Forbes সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ২০২৪ সালের শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী উদ্যোক্তারা এই বছরের শুরুর দিকে তাদের মোট সম্পদের মূল্য হ্রাসের সম্মুখীন হচ্ছেন।
এ বছর ধনীদের তালিকায় এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নাম হলো ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গের। ১ জানুয়ারিতে, ৫ম স্থানে উঠে এসেছেন আছেন ৭ম স্থানে থাকা জুকারবার্গ। মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসকে হটিয়ে তাঁর আগে অবস্থান করছেন মার্ক।
ফোর্বস ১৯৮৭ সাল থেকে বিশ্ব বিলিয়নিয়ারদের ট্র্যাক ও র্যাংকিং করে আসছে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের শতকোটিপতিদের তালিকা প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হয়। শেয়ারের দাম ওঠানামার কারণে প্রতিদিনই এই পরিবর্তন আসে।
বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। তাঁর সম্পদমূল্য ২৫১ বিলিয়ন ডলার। বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি টেসলা, রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স এবং সামাজিক মাধ্যম কোম্পানি টুইটারের প্রধান নির্বাহী মাস্ক। ২০২৩ এর প্রথম দিকে ফ্রান্সের ফ্যাশন টাইকুন ইউরোপের বিলাস পণ্য প্রস্তুত কোম্পানি এলভিএমএইচ গ্রুপের মালিক বার্নার্ড আর্নল্ট ছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষে। কিন্তু ৮ই জুন ২০২৩ এ আর্নল্ট কে হটিয়ে শীর্ষ স্থান দখল করেন ইলন মাস্ক। বার্নার্ড আর্নল্ট এর মোট সম্পদের মূল্য ২০০.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। LVMH এর সিইও এবং চেয়ারম্যান বার্নার্ড আর্নল্ট প্রায় ৭০টি বিখ্যাত ফ্যাশন এবং প্রসাধনী ব্র্যান্ডের মালিক, যার মধ্যে রয়েছে লুই ভিটন, ক্রিশ্চিয়ান ডিওর, টিফানি অ্যান্ড কোম্পানি এবং সেফোরা।
সফটওয়্যার টাইকুন ওরাকলের ল্যারি এলিসন একইসঙ্গে তিনি অপর এক খেতাবের অধিকারী–তিনিই সে ব্যক্তি, যিনি শীর্ষ ১০ ধনীর মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ সম্পদ হারিয়েছেন। গত বছরের শেষের দিকে ১১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পদ হারিয়ে তাঁর সম্পদ দাঁড়ায় ১৩৫.৩ বিলিয়ন ডলারে।
বর্তমান শীর্ষ ১০ ধনী ব্যক্তির সম্পদের পরিমাণ তুলে ধরা হলো এই প্রতিবেদনে।
১) ইলন মাস্ক
সম্পদ: ২৫১.৩ বিলিয়ন ডলার
উৎস: টেসলা, স্পেসএক্স, টুইটার
বয়সঃ ৫২
বসবাস: অস্টিন, টেক্সাস
নাগরিক: ইউএস
বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি টেসলা, রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স এবং সামাজিক মাধ্যম কোম্পানি টুইটারের প্রধান নির্বাহী মাস্ক। তাঁর সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ এসেছে টেসলা থেকে। ২০২২ এর অক্টোবরে তিনি ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে টুইটার কেনেন এবং কোম্পানির ৭৪ শতাংশের শেয়ারের মালিক তিনি।
মাস্ক এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। তাঁর বয়স ১৮ হওয়ার আগেই তিনি কানাডায় পাড়ি জমান। অনেক রকম কাজ করে তিনি প্রথমে পড়েন অন্টারিওর কুইনস ইউনিভার্সিটিতে। এরপর তিনি যান ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়াতে। সেখানে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০০০ সালে তিনি তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠা করা অনলাইন ব্যাংক এক্সডটকম-এর সাথে একই রকম আরেকটি প্রতিষ্ঠান একত্রকরণ করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন পেপাল। ২০০২ সালে eBay এটি ১৪০ কোটি ডলারে কিনে নেয়। ওই বছরেই তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে এল সেগান্ডোতে প্রতিষ্ঠা করেন স্পেসএক্স (SpaceX)।
২০০৪ সালে তিনি টেসলায় একজন বিনিয়োগকারী এবং চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন। পরে তাঁকে সহপ্রতিষ্ঠাতা পরিচয় দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
মাস্ক ২০০৮ সালে টেসলার প্রধান নির্বাহী হন। দুই বছর পরে তিনি বাজারে কোম্পানির শেয়ার ছাড়েন। ২০২০-২১ সালে কোম্পানির শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়ে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে মাস্ক পৃথিবীর শীর্ষ ধনীতে পরিণত হন। ওই বছরের নভেম্বরে তাঁর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৩২ হাজার কোটি ডলারে।
ডিসেম্বর ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি শীর্ষ ধনী ছিলেন। তবে টেসলার শেয়ারের দাম কমে যাওয়ার কারণে তাঁর সম্পদের পরিমাণ কমে যায়। ডিসেম্বরে স্থানচ্যুত হওয়ার পর আবারও ২০২৩ এর জুন মাসে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকার শীর্ষ স্থান ফিরে পান টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক।
২) বার্নার্ড আরনল্ট
সম্পদের পরিমাণ: ২০০.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
উৎস: এলভিএমএইচ/লাক্সারি পণ্য
বয়স: ৭৪
বসবাস: প্যারিস
নাগরিক: ফ্রান্স
বার্নার্ড আরনল্ট হলেন LVMH নামের একটি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং চেয়ারম্যান। এই কোম্পানি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিলাস পণ্য উৎপাদনকারী। তাদের ৭০টি ফ্যাশন প্রসাধন ব্র্যান্ড রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে লুই ভুইটন, ক্রিশ্চিয়ান ডিওর, মোয়ে অ্যান্ড চ্যান্ডন ও সেফোরা। ২০২১ সালে এই কোম্পানি ১ হাজার ৫৮০ কোটি ডলার দামে গয়না বানানোর কোম্পানি টিফানি অ্যান্ড কোম্পানিকে কিনে নেয়।
আরনল্টের বাবা নির্মাণশিল্প থেকে অর্থ কামাই করেছিলেন। পরে আরনল্ট তাঁর কাছ থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার নিয়ে ক্রিস্টিয়ান ডিওর কিনে নেন।
২০২৩ এর প্রথম ভাগ জুড়ে পুরোটা সময়ই আর্নল্ট ছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। কিন্তু শেয়ার এর মূল্য কমে যাওয়ার কারণে ২য় স্থানে চলে আসেন আর্নল্ট। জানুয়ারি ২০২৪ এ শেয়ার মূল্য বাড়লেও তাঁর অবস্থান দ্বিতীয়তেই আছে।
৩) জেফ বেজোস
সম্পদের পরিমাণ: ১৬৮.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
উৎস: অ্যামাজন
বয়স: ৫৯
বসবাস: মেডিনা, ওয়াশিংটন
নাগরিক: ইউএস
জেফ বেজোস ২০২১ সালের জুলাইয়ে ই-কমার্স কোম্পানি অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী হিসাবে সরে দাঁড়ান। তবে তিনি এখনো কোম্পানির চেয়ারম্যান। ২০২১ সালের জুলাই মাসেই তিনি ব্লু অরিজিন কোম্পানির বানানো রকেটে করে মহাশূন্যে গিয়েছিলেন। শত শত কোটি ডলার ব্যয়ে কোম্পানিটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৪ সালে বাড়ির গ্যারেজে তিনি অ্যামাজনডটকম প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে তিনি নিউইয়র্কে হেজ ফান্ড কোম্পানি ডি. ই. শ-তে কাজ করতেন।
অ্যামাজনের শুরু অনলাইনে বই বেচার মাধ্যমে। তখন খুব কম মানুষই অনলাইনে পণ্য কিনতেন। এরপর অ্যামাজন ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবসায় ঢোকে। পরে আসে সিনেমা এবং বিভিন্ন সিরিয়াল তৈরির ব্যবসা, যা দেখানো হয় অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও-তে।
বেজোস ২০১৭ সালের জুলাইয়ে বিল গেটসকে সরিয়ে পৃথিবীর শীর্ষ ধনী হন। দুইয়ে নেমে আসেন গেটস। ফোর্বসের শীর্ষ ধনীর তালিকায় ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১ নম্বর অবস্থান ধরে রেখেছিলেন বেজোস। তবে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে তিনি নেমে যান ২০২২ সালে। তিনি চতুর্থ অবস্থানে নেমে গিয়েছিলেন তবে ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি আবার তৃতীয় স্থানে উঠে আসেন যখন ভারতের গৌতম আদানির সম্পদ কমে যায়। বেজোসের সঙ্গে স্ত্রী ম্যাককেনজির বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে ২০১৯ সালে। বিচ্ছেদের পর তাঁদের সম্পদ ভাগাভাগি হয়। তাঁদের হাতে থাকা অ্যামাজনের শেয়ারের ৪ শতাংশ পান ম্যাককেনজি এবং বেজোস পান ১২ শতাংশ।
এরপর বেজোস বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করেন এবং বর্তমানে কোম্পানির ১০ শতাংশের মতো শেয়ারের মালিক তিনি। ১৯৯৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর বেজোস ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যমানের শেয়ার বিক্রি করেছেন বলে ফোর্বসের হিসাব বলছে। তিনি এয়ার বিএনবি এবং সফটওয়্যার ফার্ম ওয়ার্কটুডেতেও বিনিয়োগ করেছেন।
৪) ল্যারি এলিসন
সম্পদের পরিমাণ: ১৩৫.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
উৎস: ওরাকল
বয়স: ৭৯ বছর
বসবাস: উডসাইড, ক্যালিফোর্নিয়া
নাগরিক: ইউএস
সফটওয়্যার কোম্পানি ওরাকলের সহপ্রতিষ্ঠা ল্যারি এলিসন। ১৯৭৭ সালে এটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি এটি পরিচালনা করেন। বর্তমানে তিনি এর চেয়ারম্যান এবং প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওরাকল বিশ কিছু বড় কোম্পানি কিনে নেয়। এদের একটি ছিল সান মাইক্রোসিস্টেম যা তারা কেনে ২০১০ সালে। ২০১২ সালে এলিসন হাওয়াইয়ের দ্বীপ লানাই কিনে নেন ৩০ কোটি ডলারের বিনিময়ে। ২০২০ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ওই দ্বীপে চলে যান।
এলিসন টেসলাতেও বিনিয়োগ করেন। ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত তিনি এই গাড়ি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৩ এর জুনে, ওরাকলের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধির কারণে জেফ বেজোসকে পিছনে ফেলে তালিকার উপরে উঠে আসেন এলিসন। কিন্তু ডিসেম্বরে শেয়ার মূল্য আবারও ১০% কমে যাওয়ায় আবারও ৪র্থ স্থানে অবস্থান করছেন ল্যারি।
৫) মার্ক জুকারবার্গ
সম্পদের পরিমাণ: ১২৫.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
উৎস: ফেসবুক/ মেটা
বয়স: ৩৯ বছর
বসবাস: পালো অল্টো, ক্যালিফোর্নিয়া
নাগরিক: ইউএস
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জায়ান্ট মেটা প্ল্যাটফর্মের প্রধান মার্ক জুকারবার্গ। ২০২১ সালের অক্টোবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের করপোরেট নাম পরিবর্তন করে ‘মেটা’ করা হয়। মেটার অধীন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপসগুলো আগের মতোই থাকবে। জাকারবার্গ ২০০৪ সালে ‘ফেসবুক ইনকরপোরেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। আর ২০১২ সালে ছবি ও ভিডিও শেয়ার করার অ্যাপ ইনস্টাগ্রাম কিনে নেন। এরপর ২০১৪ সালে ভয়েস, বার্তা ও ছবি আদান-প্রদানের অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নেন।
ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, মার্ক জাকারবার্গ বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় প্রথমবারের মতো স্থান পান ২০০৮ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে। ফেসবুক প্রতিষ্ঠার মাত্র চার বছরের মাথায় তিনি এ তালিকায় যুক্ত হন। ২০২১ সালে বিশ্বের শীর্ষ ধনী বা শতকোটি ডলারের মালিকদের তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে ছিলেন জাকারবার্গ। ২০২২ সালের তালিকায় তাঁর ১০ ধাপ অবনতি হয়েছে। এ তালিকায় তাঁর অবস্থান ১৫তম স্থানে। একইভাবে ২০২১ সালের যুক্তরাষ্ট্রের ৪০০ শীর্ষ ধনীর তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন ফেসবুকের এই প্রতিষ্ঠাতা। আর ২০২২ সালের এ তালিকায় তিনি নেমে গেছেন ১১তম অবস্থানে।
৬) বিল গেটস
সম্পদের পরিমাণ: ১০ হাজার ৪৯০ কোটি ডলার
উৎস: মাইক্রোসফট, বিনিয়োগ
বয়স: ৬৭ বছর
বসবাস: মেডিনা, ওয়াশিংটন
নাগরিক: ইউএস
সেই কিশোর বয়স থেকেই গেটস কম্পিউটার প্রোগাম নিয়ে মেতে উঠেছিলেন। ১৯৭৫ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা বাদ দিয়ে তিনি স্কুলের বন্ধু পল অ্যালেনের সঙ্গে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময়ে ব্যক্তিগত কম্পিউটার শিল্প মাত্র গড়ে উঠছিল এবং সেই শিল্পের জন্য মাইক্রোসফট প্রথম দিককার একটি সফটওয়ার প্রোগ্রাম তৈরি করে।
গেটস দীর্ঘ ২৫ বছর মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। এরপর ২০১৪ সাল পর্যন্ত পালন করেন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব। কোম্পানির পরিচালনা পর্যদ থেকে তিনি সরে দাঁড়ান ২০২০ সালে।
বর্তমানে তাঁর অনেক কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে, যার একটি রিপাবলিক সার্ভিসেস।
এ ছাড়া আমেরিকায় যাঁদের হাতে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি রয়েছে, তিনি তাঁদের একজন।
ফোর্বস গেটসকে একজন বিলিওনিয়ার হিসেবে প্রথম তালিকাভুক্ত করে ১৯৮৭ সালে। ২০০৮ এবং ২০১০-২০১৩ সময়কাল বাদ দিয়ে ১৯৯৫ সাল থেকে শুরু করে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন পৃথিবীর শীর্ষ ধনী। তিনি ৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলার গেটস ফাউন্ডেশনে দান করেছেন, যার মধ্যে ২০২২ সালের জুলাইয়ে উপহার দিয়েছেন ২ হাজার কোটি ডলার। ফলে ২০১৮ সালে তিনি জেফ বেজোসের কাছে শীর্ষ ধনীর মুকুট হারান। মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটসের সাথে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে ২০২১ সালে। বিচ্ছেদের ফলে মেলিন্ডা ১০০০ কোটি ডলারের শেয়ার ও অন্যান্য সম্পদ পান।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গেটসের সম্পদ বেড়েছে ২ বিলিয়ন ডলার যার ফলে তিনি ৬ষ্ঠ তম অবস্থানে আছেন।
৭) ওয়ারেন বাফেট
সম্পদের পরিমাণ: ১০ হাজার ৬৪০ কোটি ডলার
উৎস: বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে
বয়স: ৯২ বছর
বসবাস: ওমাহা, নেব্রাস্কা
নাগরিক: ইউএস
তিনি পরিচিত ‘ওরাকল অব ওমাহা’ বা ওমাহার দৈববক্তা হিসেবে। ওয়ারেন বাফেট ইতিহাসের অন্যতম সফল একজন বিনিয়োগকারী। তিনি বিনিয়োগ কোম্পানি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে পরিচালনা করেন। আর তাদের মালিকানায় আছে বেশ অনেকগুলো কোম্পানি। এর মধ্যে রয়েছে ইনস্যুরেন্স কোম্পানি গেইকো, ব্যাটারি প্রস্তুতকারক ডিউরাসেল এবং রেস্তোরাঁ চেইন ডেইরি কুইন।
মার্কিন একজন কংগ্রেস সদস্যের পুত্র ছিলেন তিনি। বাফেট জীবনের প্রথম শেয়ারটি কেনেন ১১ বছর বয়সে, আর প্রথমবারের মতো কর দেন ১৩ বছর বয়সে।
বিল গেটস এবং মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটসের সঙ্গে মিলে তিনি ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘গিভিং প্লেজ’। তাঁরা কোটিপতিদের কাছে আহবান জানান, তাঁরা যেন অন্ততপক্ষে তাঁদের সম্পদের অর্ধেক দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করেন। বাফেট জানান, তিনি তাঁর সম্পদের ৯৯ শতাংশ দান করবেন। তিনি এখন পর্যন্ত গেটস ফাউন্ডেশন এবং তার নিজের সন্তানদের দাতব্যে বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের ৫ হাজার ১৫০ কোটি ডলার দামের শেয়ার দান করেছেন। আর এই দান তাঁকে এই পৃথিবীর সবচেয়ে উদার শতকোটিপতির মর্যাদা দিয়েছে।
গত জুনে, বাফেট বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের ৪৬০ কোটি ডলার দান করেন। ২০২৩ এর ডিসেম্বরে বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের শেয়ার এর মূল্য ৭০ কোটি কমায় ৭ম স্থানে আছেন বিনিয়োগ গুরুখ্যাত ওয়ারেন বাফেট।
৮) ল্যারি পেজ
সম্পদের পরিমাণ: ১১৭.২ বিলিয়ন ডলার
উৎস: গুগল
বয়স: ৫০ বছর
বসবাস: পালো অল্টো, ক্যালিফোর্নিয়া
নাগরিক: ইউএস
পেজ ১৯৯৮ সালে পিএইচডি স্টুডেন্ট সের্গেই ব্রিন (Sergey Brin) এর সাথে মিলে সার্চ ইঞ্জিন গুগল প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০১ এর আগ পর্যন্ত এবং ২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সিইও এর দায়িত্ব পালন করেন পেজ। বর্তমানে তিনি সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগলের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের প্রধান নির্বাহী এবং নিয়ন্ত্রণকারী শেয়ারহোল্ডার। ২০২৩ এর মে মাসে অ্যালফাবেটের শেয়ার মূল্য ১৫% বৃদ্ধি পাওয়ায় পেজ শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। ২০২৩ এর ডিসেম্বর এবং ২০২৪ এর জানুয়ারি এই এক মাসের মধ্যে অ্যালফাবেটের শেয়ার মূল্য আবারও ৬% বৃদ্ধি পেয়ে ৫৫০ কোটি ডলার এর সম্পদ বৃদ্ধি পায় ল্যারি পেজের।
৯) সের্গেই ব্রিন
সম্পদের পরিমাণ: ১১২.৪ বিলিয়ন ডলার
উৎস: গুগল
বয়স: ৫০ বছর
বসবাস: লস অল্টোস, ক্যালিফোর্নিয়া
নাগরিক: ইউএস
সের্গেই ব্রিন ২০১৯ সালে্র ডিসেম্বরে সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগলের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের প্রেসিডেন্ট এর পদ ছেড়ে দেন কিন্ত শেয়ার হোল্ডার ও বোর্ড সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটারে সায়েন্সে পিএইচডি করতে এসে ল্যারি পেজের সঙ্গে পরিচয় হয়। তারপর দুই জন মিলে ১৯৯৮ সালে গুগল প্রতিষ্ঠা করেন। ছয় বছর বয়সে রাশিয়া থেকে পরিবারের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ব্রিন। ২০২৩ এর ডিসেম্বরে ৫১০ কোটি ডলার এর সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং অ্যালফাবেটের প্রায় ৬% শেয়ার এর মূল্য বৃদ্ধি পায়।
ব্রিন পারকিনসন রোগের ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি অনেক আগেই প্রকাশ করেন এবং ১১০ কোটি ডলার এর বেশী অর্থ নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজ এর উন্নত গবেষণার কাজে দান করেছেন।
১০) স্টিভ বালমার
সম্পদের পরিমাণ: ১১২.২ বিলিয়ন ডলার
উৎস: মাইক্রোসফট, বিনিয়োগ
বয়স: ৬৭ বছর
বসবাস: হান্টস পয়েন্ট, ওয়াশিংটন
নাগরিক: ইউএস
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে বিল গেটসের সঙ্গে একই ক্লাসে পড়তেন বালমার। এমবিএ কোর্স থেকে ঝরে পড়ার পর তিনি ১৯৮০ সালে মাইক্রোসফটের ৩০ নম্বর কর্মী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। মাইক্রোসফট থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি ২০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে লস অ্যাঞ্জেলেস টিম কিনে নিয়েছিলেন। যেকোনো এনবিএ টিমের জন্য ওই দাম ছিল সেই সময়ের একটি রেকর্ড। ফোর্বস এর মতে সেই টিমের মূল্য এখন ৪৬৫ কোটি ডলার। ৬০ কোটি ডলার এর সম্পদ হারিয়ে ১০ম স্থানে অবস্থান করছেন স্টিভ বালমার।
ফোর্বস প্রকাশ করল ২০২৪ সালের শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকা
১ জানুয়ারি, বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী ব্যক্তির মোট আনুমানিক সম্পদের পরিমাণ ১.৪৭ ট্রিলিয়ন ডলার যা গত মাসের তুলনায় ৩০ বিলিয়ন ডলার বেশি।
আমেরিকার বিজনেস ম্যাগাজিন Forbes সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ২০২৪ সালের শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী উদ্যোক্তারা এই বছরের শুরুর দিকে তাদের মোট সম্পদের মূল্য হ্রাসের সম্মুখীন হচ্ছেন।
এ বছর ধনীদের তালিকায় এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নাম হলো ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গের। ১ জানুয়ারিতে, ৫ম স্থানে উঠে এসেছেন আছেন ৭ম স্থানে থাকা জুকারবার্গ। মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসকে হটিয়ে তাঁর আগে অবস্থান করছেন মার্ক।
ফোর্বস ১৯৮৭ সাল থেকে বিশ্ব বিলিয়নিয়ারদের ট্র্যাক ও র্যাংকিং করে আসছে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের শতকোটিপতিদের তালিকা প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হয়। শেয়ারের দাম ওঠানামার কারণে প্রতিদিনই এই পরিবর্তন আসে।
বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। তাঁর সম্পদমূল্য ২৫১ বিলিয়ন ডলার। বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি টেসলা, রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স এবং সামাজিক মাধ্যম কোম্পানি টুইটারের প্রধান নির্বাহী মাস্ক। ২০২৩ এর প্রথম দিকে ফ্রান্সের ফ্যাশন টাইকুন ইউরোপের বিলাস পণ্য প্রস্তুত কোম্পানি এলভিএমএইচ গ্রুপের মালিক বার্নার্ড আর্নল্ট ছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষে। কিন্তু ৮ই জুন ২০২৩ এ আর্নল্ট কে হটিয়ে শীর্ষ স্থান দখল করেন ইলন মাস্ক। বার্নার্ড আর্নল্ট এর মোট সম্পদের মূল্য ২০০.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। LVMH এর সিইও এবং চেয়ারম্যান বার্নার্ড আর্নল্ট প্রায় ৭০টি বিখ্যাত ফ্যাশন এবং প্রসাধনী ব্র্যান্ডের মালিক, যার মধ্যে রয়েছে লুই ভিটন, ক্রিশ্চিয়ান ডিওর, টিফানি অ্যান্ড কোম্পানি এবং সেফোরা।
সফটওয়্যার টাইকুন ওরাকলের ল্যারি এলিসন একইসঙ্গে তিনি অপর এক খেতাবের অধিকারী–তিনিই সে ব্যক্তি, যিনি শীর্ষ ১০ ধনীর মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ সম্পদ হারিয়েছেন। গত বছরের শেষের দিকে ১১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পদ হারিয়ে তাঁর সম্পদ দাঁড়ায় ১৩৫.৩ বিলিয়ন ডলারে।
বর্তমান শীর্ষ ১০ ধনী ব্যক্তির সম্পদের পরিমাণ তুলে ধরা হলো এই প্রতিবেদনে।
১) ইলন মাস্ক
সম্পদ: ২৫১.৩ বিলিয়ন ডলার
উৎস: টেসলা, স্পেসএক্স, টুইটার
বয়সঃ ৫২
বসবাস: অস্টিন, টেক্সাস
নাগরিক: ইউএস
বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি টেসলা, রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স এবং সামাজিক মাধ্যম কোম্পানি টুইটারের প্রধান নির্বাহী মাস্ক। তাঁর সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ এসেছে টেসলা থেকে। ২০২২ এর অক্টোবরে তিনি ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে টুইটার কেনেন এবং কোম্পানির ৭৪ শতাংশের শেয়ারের মালিক তিনি।
মাস্ক এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। তাঁর বয়স ১৮ হওয়ার আগেই তিনি কানাডায় পাড়ি জমান। অনেক রকম কাজ করে তিনি প্রথমে পড়েন অন্টারিওর কুইনস ইউনিভার্সিটিতে। এরপর তিনি যান ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়াতে। সেখানে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০০০ সালে তিনি তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠা করা অনলাইন ব্যাংক এক্সডটকম-এর সাথে একই রকম আরেকটি প্রতিষ্ঠান একত্রকরণ করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন পেপাল। ২০০২ সালে eBay এটি ১৪০ কোটি ডলারে কিনে নেয়। ওই বছরেই তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে এল সেগান্ডোতে প্রতিষ্ঠা করেন স্পেসএক্স (SpaceX)।
২০০৪ সালে তিনি টেসলায় একজন বিনিয়োগকারী এবং চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন। পরে তাঁকে সহপ্রতিষ্ঠাতা পরিচয় দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
মাস্ক ২০০৮ সালে টেসলার প্রধান নির্বাহী হন। দুই বছর পরে তিনি বাজারে কোম্পানির শেয়ার ছাড়েন। ২০২০-২১ সালে কোম্পানির শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়ে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে মাস্ক পৃথিবীর শীর্ষ ধনীতে পরিণত হন। ওই বছরের নভেম্বরে তাঁর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৩২ হাজার কোটি ডলারে।
ডিসেম্বর ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি শীর্ষ ধনী ছিলেন। তবে টেসলার শেয়ারের দাম কমে যাওয়ার কারণে তাঁর সম্পদের পরিমাণ কমে যায়। ডিসেম্বরে স্থানচ্যুত হওয়ার পর আবারও ২০২৩ এর জুন মাসে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকার শীর্ষ স্থান ফিরে পান টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক।
২) বার্নার্ড আরনল্ট
সম্পদের পরিমাণ: ২০০.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
উৎস: এলভিএমএইচ/লাক্সারি পণ্য
বয়স: ৭৪
বসবাস: প্যারিস
নাগরিক: ফ্রান্স
বার্নার্ড আরনল্ট হলেন LVMH নামের একটি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং চেয়ারম্যান। এই কোম্পানি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিলাস পণ্য উৎপাদনকারী। তাদের ৭০টি ফ্যাশন প্রসাধন ব্র্যান্ড রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে লুই ভুইটন, ক্রিশ্চিয়ান ডিওর, মোয়ে অ্যান্ড চ্যান্ডন ও সেফোরা। ২০২১ সালে এই কোম্পানি ১ হাজার ৫৮০ কোটি ডলার দামে গয়না বানানোর কোম্পানি টিফানি অ্যান্ড কোম্পানিকে কিনে নেয়।
আরনল্টের বাবা নির্মাণশিল্প থেকে অর্থ কামাই করেছিলেন। পরে আরনল্ট তাঁর কাছ থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার নিয়ে ক্রিস্টিয়ান ডিওর কিনে নেন।
২০২৩ এর প্রথম ভাগ জুড়ে পুরোটা সময়ই আর্নল্ট ছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। কিন্তু শেয়ার এর মূল্য কমে যাওয়ার কারণে ২য় স্থানে চলে আসেন আর্নল্ট। জানুয়ারি ২০২৪ এ শেয়ার মূল্য বাড়লেও তাঁর অবস্থান দ্বিতীয়তেই আছে।
৩) জেফ বেজোস
সম্পদের পরিমাণ: ১৬৮.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
উৎস: অ্যামাজন
বয়স: ৫৯
বসবাস: মেডিনা, ওয়াশিংটন
নাগরিক: ইউএস
জেফ বেজোস ২০২১ সালের জুলাইয়ে ই-কমার্স কোম্পানি অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী হিসাবে সরে দাঁড়ান। তবে তিনি এখনো কোম্পানির চেয়ারম্যান। ২০২১ সালের জুলাই মাসেই তিনি ব্লু অরিজিন কোম্পানির বানানো রকেটে করে মহাশূন্যে গিয়েছিলেন। শত শত কোটি ডলার ব্যয়ে কোম্পানিটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৪ সালে বাড়ির গ্যারেজে তিনি অ্যামাজনডটকম প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে তিনি নিউইয়র্কে হেজ ফান্ড কোম্পানি ডি. ই. শ-তে কাজ করতেন।
অ্যামাজনের শুরু অনলাইনে বই বেচার মাধ্যমে। তখন খুব কম মানুষই অনলাইনে পণ্য কিনতেন। এরপর অ্যামাজন ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবসায় ঢোকে। পরে আসে সিনেমা এবং বিভিন্ন সিরিয়াল তৈরির ব্যবসা, যা দেখানো হয় অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও-তে।
বেজোস ২০১৭ সালের জুলাইয়ে বিল গেটসকে সরিয়ে পৃথিবীর শীর্ষ ধনী হন। দুইয়ে নেমে আসেন গেটস। ফোর্বসের শীর্ষ ধনীর তালিকায় ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১ নম্বর অবস্থান ধরে রেখেছিলেন বেজোস। তবে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে তিনি নেমে যান ২০২২ সালে। তিনি চতুর্থ অবস্থানে নেমে গিয়েছিলেন তবে ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি আবার তৃতীয় স্থানে উঠে আসেন যখন ভারতের গৌতম আদানির সম্পদ কমে যায়। বেজোসের সঙ্গে স্ত্রী ম্যাককেনজির বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে ২০১৯ সালে। বিচ্ছেদের পর তাঁদের সম্পদ ভাগাভাগি হয়। তাঁদের হাতে থাকা অ্যামাজনের শেয়ারের ৪ শতাংশ পান ম্যাককেনজি এবং বেজোস পান ১২ শতাংশ।
এরপর বেজোস বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করেন এবং বর্তমানে কোম্পানির ১০ শতাংশের মতো শেয়ারের মালিক তিনি। ১৯৯৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর বেজোস ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যমানের শেয়ার বিক্রি করেছেন বলে ফোর্বসের হিসাব বলছে। তিনি এয়ার বিএনবি এবং সফটওয়্যার ফার্ম ওয়ার্কটুডেতেও বিনিয়োগ করেছেন।
৪) ল্যারি এলিসন
সম্পদের পরিমাণ: ১৩৫.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
উৎস: ওরাকল
বয়স: ৭৯ বছর
বসবাস: উডসাইড, ক্যালিফোর্নিয়া
নাগরিক: ইউএস
সফটওয়্যার কোম্পানি ওরাকলের সহপ্রতিষ্ঠা ল্যারি এলিসন। ১৯৭৭ সালে এটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি এটি পরিচালনা করেন। বর্তমানে তিনি এর চেয়ারম্যান এবং প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওরাকল বিশ কিছু বড় কোম্পানি কিনে নেয়। এদের একটি ছিল সান মাইক্রোসিস্টেম যা তারা কেনে ২০১০ সালে। ২০১২ সালে এলিসন হাওয়াইয়ের দ্বীপ লানাই কিনে নেন ৩০ কোটি ডলারের বিনিময়ে। ২০২০ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ওই দ্বীপে চলে যান।
এলিসন টেসলাতেও বিনিয়োগ করেন। ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত তিনি এই গাড়ি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৩ এর জুনে, ওরাকলের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধির কারণে জেফ বেজোসকে পিছনে ফেলে তালিকার উপরে উঠে আসেন এলিসন। কিন্তু ডিসেম্বরে শেয়ার মূল্য আবারও ১০% কমে যাওয়ায় আবারও ৪র্থ স্থানে অবস্থান করছেন ল্যারি।
৫) মার্ক জুকারবার্গ
সম্পদের পরিমাণ: ১২৫.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
উৎস: ফেসবুক/ মেটা
বয়স: ৩৯ বছর
বসবাস: পালো অল্টো, ক্যালিফোর্নিয়া
নাগরিক: ইউএস
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জায়ান্ট মেটা প্ল্যাটফর্মের প্রধান মার্ক জুকারবার্গ। ২০২১ সালের অক্টোবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের করপোরেট নাম পরিবর্তন করে ‘মেটা’ করা হয়। মেটার অধীন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপসগুলো আগের মতোই থাকবে। জাকারবার্গ ২০০৪ সালে ‘ফেসবুক ইনকরপোরেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। আর ২০১২ সালে ছবি ও ভিডিও শেয়ার করার অ্যাপ ইনস্টাগ্রাম কিনে নেন। এরপর ২০১৪ সালে ভয়েস, বার্তা ও ছবি আদান-প্রদানের অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নেন।
ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, মার্ক জাকারবার্গ বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় প্রথমবারের মতো স্থান পান ২০০৮ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে। ফেসবুক প্রতিষ্ঠার মাত্র চার বছরের মাথায় তিনি এ তালিকায় যুক্ত হন। ২০২১ সালে বিশ্বের শীর্ষ ধনী বা শতকোটি ডলারের মালিকদের তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে ছিলেন জাকারবার্গ। ২০২২ সালের তালিকায় তাঁর ১০ ধাপ অবনতি হয়েছে। এ তালিকায় তাঁর অবস্থান ১৫তম স্থানে। একইভাবে ২০২১ সালের যুক্তরাষ্ট্রের ৪০০ শীর্ষ ধনীর তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন ফেসবুকের এই প্রতিষ্ঠাতা। আর ২০২২ সালের এ তালিকায় তিনি নেমে গেছেন ১১তম অবস্থানে।
৬) বিল গেটস
সম্পদের পরিমাণ: ১০ হাজার ৪৯০ কোটি ডলার
উৎস: মাইক্রোসফট, বিনিয়োগ
বয়স: ৬৭ বছর
বসবাস: মেডিনা, ওয়াশিংটন
নাগরিক: ইউএস
সেই কিশোর বয়স থেকেই গেটস কম্পিউটার প্রোগাম নিয়ে মেতে উঠেছিলেন। ১৯৭৫ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা বাদ দিয়ে তিনি স্কুলের বন্ধু পল অ্যালেনের সঙ্গে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময়ে ব্যক্তিগত কম্পিউটার শিল্প মাত্র গড়ে উঠছিল এবং সেই শিল্পের জন্য মাইক্রোসফট প্রথম দিককার একটি সফটওয়ার প্রোগ্রাম তৈরি করে।
গেটস দীর্ঘ ২৫ বছর মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। এরপর ২০১৪ সাল পর্যন্ত পালন করেন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব। কোম্পানির পরিচালনা পর্যদ থেকে তিনি সরে দাঁড়ান ২০২০ সালে।
বর্তমানে তাঁর অনেক কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে, যার একটি রিপাবলিক সার্ভিসেস।
এ ছাড়া আমেরিকায় যাঁদের হাতে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি রয়েছে, তিনি তাঁদের একজন।
ফোর্বস গেটসকে একজন বিলিওনিয়ার হিসেবে প্রথম তালিকাভুক্ত করে ১৯৮৭ সালে। ২০০৮ এবং ২০১০-২০১৩ সময়কাল বাদ দিয়ে ১৯৯৫ সাল থেকে শুরু করে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন পৃথিবীর শীর্ষ ধনী। তিনি ৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলার গেটস ফাউন্ডেশনে দান করেছেন, যার মধ্যে ২০২২ সালের জুলাইয়ে উপহার দিয়েছেন ২ হাজার কোটি ডলার। ফলে ২০১৮ সালে তিনি জেফ বেজোসের কাছে শীর্ষ ধনীর মুকুট হারান। মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটসের সাথে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে ২০২১ সালে। বিচ্ছেদের ফলে মেলিন্ডা ১০০০ কোটি ডলারের শেয়ার ও অন্যান্য সম্পদ পান।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গেটসের সম্পদ বেড়েছে ২ বিলিয়ন ডলার যার ফলে তিনি ৬ষ্ঠ তম অবস্থানে আছেন।
৭) ওয়ারেন বাফেট
সম্পদের পরিমাণ: ১০ হাজার ৬৪০ কোটি ডলার
উৎস: বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে
বয়স: ৯২ বছর
বসবাস: ওমাহা, নেব্রাস্কা
নাগরিক: ইউএস
তিনি পরিচিত ‘ওরাকল অব ওমাহা’ বা ওমাহার দৈববক্তা হিসেবে। ওয়ারেন বাফেট ইতিহাসের অন্যতম সফল একজন বিনিয়োগকারী। তিনি বিনিয়োগ কোম্পানি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে পরিচালনা করেন। আর তাদের মালিকানায় আছে বেশ অনেকগুলো কোম্পানি। এর মধ্যে রয়েছে ইনস্যুরেন্স কোম্পানি গেইকো, ব্যাটারি প্রস্তুতকারক ডিউরাসেল এবং রেস্তোরাঁ চেইন ডেইরি কুইন।
মার্কিন একজন কংগ্রেস সদস্যের পুত্র ছিলেন তিনি। বাফেট জীবনের প্রথম শেয়ারটি কেনেন ১১ বছর বয়সে, আর প্রথমবারের মতো কর দেন ১৩ বছর বয়সে।
বিল গেটস এবং মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটসের সঙ্গে মিলে তিনি ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘গিভিং প্লেজ’। তাঁরা কোটিপতিদের কাছে আহবান জানান, তাঁরা যেন অন্ততপক্ষে তাঁদের সম্পদের অর্ধেক দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করেন। বাফেট জানান, তিনি তাঁর সম্পদের ৯৯ শতাংশ দান করবেন। তিনি এখন পর্যন্ত গেটস ফাউন্ডেশন এবং তার নিজের সন্তানদের দাতব্যে বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের ৫ হাজার ১৫০ কোটি ডলার দামের শেয়ার দান করেছেন। আর এই দান তাঁকে এই পৃথিবীর সবচেয়ে উদার শতকোটিপতির মর্যাদা দিয়েছে।
গত জুনে, বাফেট বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের ৪৬০ কোটি ডলার দান করেন। ২০২৩ এর ডিসেম্বরে বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের শেয়ার এর মূল্য ৭০ কোটি কমায় ৭ম স্থানে আছেন বিনিয়োগ গুরুখ্যাত ওয়ারেন বাফেট।
৮) ল্যারি পেজ
সম্পদের পরিমাণ: ১১৭.২ বিলিয়ন ডলার
উৎস: গুগল
বয়স: ৫০ বছর
বসবাস: পালো অল্টো, ক্যালিফোর্নিয়া
নাগরিক: ইউএস
পেজ ১৯৯৮ সালে পিএইচডি স্টুডেন্ট সের্গেই ব্রিন (Sergey Brin) এর সাথে মিলে সার্চ ইঞ্জিন গুগল প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০১ এর আগ পর্যন্ত এবং ২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সিইও এর দায়িত্ব পালন করেন পেজ। বর্তমানে তিনি সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগলের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের প্রধান নির্বাহী এবং নিয়ন্ত্রণকারী শেয়ারহোল্ডার। ২০২৩ এর মে মাসে অ্যালফাবেটের শেয়ার মূল্য ১৫% বৃদ্ধি পাওয়ায় পেজ শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। ২০২৩ এর ডিসেম্বর এবং ২০২৪ এর জানুয়ারি এই এক মাসের মধ্যে অ্যালফাবেটের শেয়ার মূল্য আবারও ৬% বৃদ্ধি পেয়ে ৫৫০ কোটি ডলার এর সম্পদ বৃদ্ধি পায় ল্যারি পেজের।
৯) সের্গেই ব্রিন
সম্পদের পরিমাণ: ১১২.৪ বিলিয়ন ডলার
উৎস: গুগল
বয়স: ৫০ বছর
বসবাস: লস অল্টোস, ক্যালিফোর্নিয়া
নাগরিক: ইউএস
সের্গেই ব্রিন ২০১৯ সালে্র ডিসেম্বরে সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগলের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের প্রেসিডেন্ট এর পদ ছেড়ে দেন কিন্ত শেয়ার হোল্ডার ও বোর্ড সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটারে সায়েন্সে পিএইচডি করতে এসে ল্যারি পেজের সঙ্গে পরিচয় হয়। তারপর দুই জন মিলে ১৯৯৮ সালে গুগল প্রতিষ্ঠা করেন। ছয় বছর বয়সে রাশিয়া থেকে পরিবারের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ব্রিন। ২০২৩ এর ডিসেম্বরে ৫১০ কোটি ডলার এর সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং অ্যালফাবেটের প্রায় ৬% শেয়ার এর মূল্য বৃদ্ধি পায়।
ব্রিন পারকিনসন রোগের ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি অনেক আগেই প্রকাশ করেন এবং ১১০ কোটি ডলার এর বেশী অর্থ নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজ এর উন্নত গবেষণার কাজে দান করেছেন।
১০) স্টিভ বালমার
সম্পদের পরিমাণ: ১১২.২ বিলিয়ন ডলার
উৎস: মাইক্রোসফট, বিনিয়োগ
বয়স: ৬৭ বছর
বসবাস: হান্টস পয়েন্ট, ওয়াশিংটন
নাগরিক: ইউএস
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে বিল গেটসের সঙ্গে একই ক্লাসে পড়তেন বালমার। এমবিএ কোর্স থেকে ঝরে পড়ার পর তিনি ১৯৮০ সালে মাইক্রোসফটের ৩০ নম্বর কর্মী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। মাইক্রোসফট থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি ২০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে লস অ্যাঞ্জেলেস টিম কিনে নিয়েছিলেন। যেকোনো এনবিএ টিমের জন্য ওই দাম ছিল সেই সময়ের একটি রেকর্ড। ফোর্বস এর মতে সেই টিমের মূল্য এখন ৪৬৫ কোটি ডলার। ৬০ কোটি ডলার এর সম্পদ হারিয়ে ১০ম স্থানে অবস্থান করছেন স্টিভ বালমার।
তথ্যসূত্র: ফোর্বস