রুপালি আক্তার,গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুর থানায় জন্ম। উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন নলডাংগা ডিগ্রি কলেজ থেকে এবং বিএ করেন বামনডাংগা আব্দুল হক কলেজ থেকে। ছোটবেলা থেকেই হাতের কাজকে ভালবাসতেন, সেই ভালবাসা থেকেই উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু।
অন্য সবার মতই ফেসবুক ব্যবহার করতেন রুপালি। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে অনেকের পোস্ট দেখতেন। ঠিক তখনি মনে হলো তার কুশিকাটার কাজের কথা।ছোটবেলায় দাদীর কাছ থেকে কুশিকাটার কিছু কাজ শখের বসে শিখেছিলেন রুপালি। তারপর থেকেই সুতা ও কুশিকাটা কিনে কাজ শুরু করেন।
কুশিকাটার কাজ প্রায় সবাই করে থাকে কিন্তু রুপালি একটু অন্য রকম কিছু করতে চেয়েছিলো। সেই ভাবনা থেকেই কুশিকাটার গহনা বানানোর সিদ্বান্ত নেন। নামে মাত্র পুঁজি দিয়ে শুরু করেন তিনি। একটা কুশিকাটার কাটা, সুতা ও অল্প কিছু পুঁতি ব্যবহার করে নিজের ডিজাইনে গহনা বানানো শুরু করেন এবং বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করেন এবং প্রথম পোস্টেই ভালো সাড়া পান সবার।
সবাই রুপালির তৈরি গহনা গুলো বেশ পছন্দ করতে শুরু করে। নিজস্ব ডিজাইনে কুশিকাটার গহনা তৈরি করেন।পরবর্তীতে কুশিকাটার গহনার পাশাপাশি কুশিকাটার সবধরনের কাজ শুরু করেন এবং গ্রুপের সাথে নিজের একটি পেজ তৈরি করে সেখানেও পোস্ট দিতেন।
ফেসবুক গ্রুপগুলো থেকেই ভালো সাড়া পান রুপালি এভাবেই শুরু হয় তার উদ্যোক্তা জীবন।
রুপালি মূলত কুশিকাটার সব ধরনের পণ্যই তৈরি করেন। কুশিকাটার গহনা,কুশিকাটার বেবি ড্রেস, কুশিকাটার টুপি, কুশিকাটার জুতা, কুশিকাটার টেবিলম্যাট,রানার, কুশন কাভারসহ হাতে তৈরি গহনা নিয়ে কাজ করেন।
হাতে তৈরি গহনা মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কুশিকাটার গহনা যা সিগনেচার পণ্য হিসেবে রয়েছে। এর পাশাপাশি লুমবিডিং গহনা, মেটাল গহনা সহ আরো বিভিন্ন ধরনের গহনা রয়েছে।
বর্তমানে ৭/৮ জন কর্মী রয়েছে তার৷ কর্মীরা নিজ নিজ বাসা থেকেই কাজ করে দেন।
রুপালি আক্তার তার উদ্যোগ মেয়ের নামেই নামকরন করেন ‘জীম কুশি ঘর’। রুপালির কুশিকাটার পণ্য ফ্রান্স, ইতালি, সৌদি আরব গিয়েছে। এছাড়া দেশের প্রায় সব জেলাতেই তার পণ্যগুলো গিয়েছে।
অর্ডারের উপর নির্ভর করছে মাসিক আয় তবে মাসে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয় রুপালির।
২০২২ সালে UNDP ও আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে স্মার্ট নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ৫০ হাজার টাকা পান এবং UNDP থেকে ডিসেম্বর’২৩ এ একটি ইলেকট্রনিক সেলাই মেশিন সহ মেশিন এক্সসরিজ পেয়েছেন। আনন্দমেলা ও UNDP এর সহযোগিতায় ২৬ তম ও ২৭ তম ঢাকা আন্তজার্তিক বাণিজ্য মেলায় অংশ নেন এবং ১০ম জাতীয় এসএমই মেলাতেও অংশগ্রহণ করেন।
উদ্যোক্তা রুপালি আক্তার বলেন, আনন্দমেলা ও UNDP এর সহযোগিতা পেয়ে আমি আমার উদ্যোক্তা জীবন অনেক সুন্দর ভাবে পরিচালনা করতে পারছি। সেলাই মেশিন পেয়ে আমি নতুন করে আমার উদ্যোগ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো আশা রাখি।
তরুণ উদ্যোক্তাদের তিনি বলেন, ‘কাজকে ভালবাসতে হবে, কাজের গুণগত মান ঠিক রাখতে হবে এবং কঠোর পরিশ্রম দিয়ে সামনের দিক এগিয়ে যেতে হবে চলার পথে বাধা আসবে কিন্তু সাহসিকতার সাথে আমাদের লড়াই করে যেতে হবে তবেই আমরা সফল হতে পারবো।’
তিনি আরো বলেন, আমি সব সময় চেষ্টা করেছি আমার উদ্যোগ নিয়ে যেন এগিয়ে যেতে পারি, সেজন্য আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে, অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। পরিশেষে এটাই বলবো উদ্যোক্তা জীবন মানেই ধৈর্য, পরিশ্রম ও সততা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা