আফরোজা সুলতানা শিউলি, জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক সৈনিক। ১৯৯৮ সালে থ্যালাসেমিয়া পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ব্লাডে MDS নামে একটা ক্যান্সার ধরা পরে। অন্যান্য ওষুধের সাথে কেমোর ইঞ্জেকশন দিতে হবে যতদিন বাঁচবেন। এতোকিছুর পরেও একটুও ভেঙে পড়েননি শিউলি৷ ন্যাচারাল ডাইং নিয়ে দীর্ঘ ৮ বছর পরিচালনা করছেন তার উদ্যোগ Zaarin’s Creation।
শিউলির জন্ম বেড়ে ওঠা পড়াশোনা এবং বিয়ে সবই ছিল চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম সেন্ট স্কলাস্টিকাস গার্লস হাই স্কুল থেকে এস এস সি এবং কুমিল্লা ওমেন কলেজ থেকে এইচ এস সি পাস করেন। থ্যালাসেমিয়ার কারণে প্রচন্ড অসুস্থ্য হয়ে পড়েন, পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। তখন মুক্তিযোদ্ধা বাবা, আনোয়ার হোসেন’কে অনুরোধ করে যুব উন্নয়ন থেকে ব্লক বাটিক ও ন্যাচারাল ডাই কোর্সের প্রশিক্ষণ নেন।
তারপর থেকে টুকটাক কাজ করতেন কিন্তু বিয়ে ঘরসংসার, বাচ্চা এবং নিজের অসুস্থ্যতাকে সামলে সেভাবে এগুতে পারছিলেন না। ২০১৫ সালে ভারতে ধরা পড়ে MDS ক্যান্সার, তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন দেশে ফিরেই তিনি কাজ শুরু করবেন।
যে কথা সেই কাজ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে তিনি তার উদ্যোগ যারীন’স ক্রিয়েশন নিয়ে যাত্রা শুরু করেন।
তিনি ব্লক এবং ন্যাচারাল ডাই নিয়ে কাজ করেন। পিওর ন্যাচারাল ডাই যেখানে কোন ক্যামিকেল ব্যবহার করেন না। শাড়ি,থ্রিপিস, টুপিস,ওড়না,স্কার্ফ,পাঞ্জাবি, শার্ট,ফতুয়া, বেডশিট, পর্দা,কুশনকভার বিভিন্ন পন্য নিয়ে কাজ করছেন। শাড়ির মধ্যে ন্যাচারাল ডাই এর মসলিন, এন্ডিসিল্ক,বলাকা সিল্ক,ক্রেপ সিল্ক এবং সুতি নিয়ে কাজ করেন। নতুন নতুন এক্সপ্রিমেন্ট করতে ভালো লাগে ডাই নিয়ে। কোয়ালিটি নিয়ে কখনোই কোন কমপ্রোমাইজ করেন না শিউলি।
খিলক্ষেতে ছোট একটি ডাইয়ের কারখানা আছে, সেখানে ৫ জন কর্মী রয়েছে।
সরাসরি রপ্তানি না হলেও দেশের বাইরে প্রচুর প্রোডাক্ট যায় শিউলির। জাপান থেকে প্রথম অর্ডার পান ২০ টি ব্লকের চাদর। এছাড়াও আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, কোরিয়া, দুবাই, ইন্ডিয়া, লন্ডন সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গিয়েছে। দেশের মধ্যে প্রতিটি বিভাগেই কম বেশি পণ্য গিয়েছে। সময় সুযোগ পেলে এসএমই মেলাসহ ঢাকার বিভিন্ন মেলাগুলোতে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
উদ্যোক্তা আফরোজা সুলতানা শিউলি উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, আমার খুব বেশি সেল নাই। অসুস্থতার কারণে খুব বেশি পরিশ্রম করতে পারি না। তাই খুব অল্পতেই আমি খুশি।
তিনি আরো বলেন, ‘ছোট বেলায় যখন আড়ং এর পোশাক পরতাম তখন সব সময় ভাবতাম বড় হয়ে একদিন আমার এমন একটা বুটিক হবে। আড়ংকে যেমন এক নামে সবাই চিনে আমার যারীনস কেও একদিন সবাই এভাবে চিনবে।’
আলহামদুলিল্লাহ যারীনস কে এখন অনেকেই চেনে।সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দেশের উচ্চপর্যায়ের অনেকেই এখন যারীনস এর পোশাক পরে অফিস করে বা বাসায় নিত্যকার জীবনের জন্য ব্যবহার করে। এটাই আমার সার্থকতা।’
তরুণ প্রজন্মকে তিনি ব্যবসার ক্ষেত্রে সৎ এবং পরিশ্রমী হওয়ার অনুরোধ করেন।
সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা