অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তার অবদান

0

আজকের নারীরা কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই। প্রতিটি নারীর সফলতার পেছনে থাকে তার ইচ্ছাশক্তি এবং মনোবল যা তাকে নিয়ে যেতে পারে বহুদূর। নিজের ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্বেও নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

করপোরেট সেক্টরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে নারীর সংখ্যা বাড়ছে দিনকে দিন। বড় বড় প্রতিষ্ঠানে প্রধান নির্বাহীসহ উচ্চ পদে নারীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। যার সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে।

মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা রুবানা ১৫ বছর বয়স থেকে টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতেন। সত্যিকার অর্থে মেধাবী মেয়েটি এসএসসি, এইচএসসিতে বোর্ডস্ট্যান্ড করা ছাত্রী। মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নির্বাচিত প্রথম নারী সভাপতি রুবানা হক। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত সাবেক মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী তিনি। বর্তমানে সকল নারীদের এক অনুপ্রেরণার নাম রুবানা হক৷

সব বাধা অতিক্রম করে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পান বাংলাদেশের প্রথম খ্যাতিমান নারী উদ্যোক্তাদের একজন রোকিয়া আফজাল রহমান।

দেশের প্রথম নারী ব্যাংক ব্যবস্থাপক তিনি। ব্যাংকার হিসেবে তিনি ৭ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮০ সালে রোকিয়া আফজাল রহমান কৃষি ব্যবসা শুরু করেন এবং অন্যান্য খাতেও তার ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন। তিনি মিডিয়া, বিমা, রিয়েল এস্টেট এবং জ্বালানি খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে ১৫০ জন সদস্য নিয়ে ‘উইমেন অন্ট্রোপ্রেনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ গঠিত হয় এবং রোকিয়া আফজাল রহমান ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

১৯৯৬ সালে তিনি ক্ষুদ্র উদ্যোগ ও শিল্প গঠনে নারীদের আরও এগিয়ে নিতে ‘উইমেন ইন স্মল এন্টারপ্রাইজেস’ গঠন করেন। এই ২টি সংগঠনই নারীদের জীবনে পরিবর্তন আনতে এবং নারী উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন করতে কাজ করছে।

রোকিয়া আফজাল রহমান ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত
‘বাংলাদেশ ফেডারেশন অব উইমেন এন্টারপ্রেনারস’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, তথা সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাসে প্রথম নারী মেজর জেনারেল সুসানে গীতি। মেজর জেনারেল সুসানে গীতি ১৯৮৫ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চিকিৎসক হিসেবে ক্যাপ্টেন পদবিতে যোগ দেন। ঈশ্বরদীর নুরুন্নাহার জাতীয় কৃষি স্বর্ণপদক জিতে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেন। ২০১১ সালে তিনি দেশের সেরা নারী কৃষক হিসেবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি ব্রোঞ্জপদক, ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি স্বর্ণপদক, ২০১৭ সালে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে রাঁধুনি কীর্তিমতী অ্যাওয়ার্ড, একই বছর জাতীয় সবজি পদক, ২০১৮ সালে কেআইবি পদক অর্জন করেন।

লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে পড়াশোনা করে ২০০৮ সালে লেদার প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ শুরু করেন। নিয়মিত কাজ করছেন অর্ধশতাধিক লেদার প্রডাক্ট তৈরির এই কারিগর। সফল নারী উদ্যোক্তার তকমা নিজের করে নিয়েছেন পরিশ্রম দিয়ে। ২০০৮ সালে সেরা এসএমই নারী উদ্যোক্তা পুরস্কার, ২০১১ সালে এফবিসিসিআইয়ের সেরা এসএমই নারী উদ্যোক্তা পুরস্কার, ডিএইচএল আউটস্ট্যান্ডিং উইম্যান ইন বিজনেস পুরস্কারসহ বেশকিছু পুরস্কার পান তিনি। এছাড়াও তরুণ উদ্যোক্তা এবং অনুকরণীয় উদাহরণ হিসেবে আমেরিকান সরকার তাকে সম্মানজনক সিটিজেনশিপ প্রদান করেন। ২০১১ সালে ফ্লোরিডা রাজ্যের মেয়র কর্তৃক এ সম্মানসূচক সিটিজেনশিপ গ্রহণ করেন তানিয়া। মেধাবী এবং পরিশ্রমী নারী, তানিয়া ওয়াহাব এখন বাংলাদেশের সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন।

শিশুর পোশাক ও পাঞ্জাবি তৈরি করে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করতেন গৃহবধূ লুৎফা সানজিদা। শুরুতে তার পুঁজি ছিল মাত্র ১৫ হাজার টাকা। পরে এ কাজে এগিয়ে আসেন তার মামাতো ভাই। তার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর চকভিউ মার্কেটে একটি শোরুম দেন। সাফল্য আসতে থাকে। এখন অনিন্দ্য বুটিক হাউস ও অনিন্দ্য বিউটি পার্লারের স্বত্বাধিকারী তিনি। ১৫ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করে ২৬ বছরের ব্যবধানে আজ তিনি সফল উদ্যোক্তা, কোটিপতি। তার সংগ্রামের সাফল্য তুলে ধরা হয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে প্রকাশিত নবম-দশম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ বইয়ে। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করতেই চট্টগ্রামের সফল নারী উদ্যোক্তা ও ফ্যাশন ডিজাইনার লুৎফা সানজিদার বর্ণাঢ্য জীবনী তুলে ধরা হয়েছে বইটির দ্বাদশ অধ্যায়ে।

প্রচলিত ঘরানার বাইরে এসে নারীদের নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানোর মাধ্যমে প্রতি বছর উদযাপিত হয় আন্তর্জাতিক নারী উদ্যোক্তা দিবস। বিশ্বব্যাপী ১৯ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়। বিশ্বের ১৬০টি দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্বে উদ্যোক্তা সপ্তাহ পালিত হয়।

নারী উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন ও বিকাশের জন্য সরকারের দেয়া নীতি সহায়তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে নারী উদ্যোক্তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে নারীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সংযুক্ত করতে হবে, তাদের সচেতন করতে হবে,তাদের অধিকার সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। তাদের ক্ষমতায়নসহ দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তবেই ২০৪১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশে বাংলাদেশকে উত্তরণ করা সম্ভব হবে।

সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here