চারঘাটের পাদুকাপল্লিতে চালু হলো দেশের প্রথম ‘সিএফসি’

0

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দেশে প্রথমবারের মতো রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার কালুহাটি এলাকায় পাদুকাশিল্পে ক্লাস্টারভিত্তিক কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টারের (সিএফসি) উদ্বোধন করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৮ আগষ্ট) সকালে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি প্রথম যখন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, তখনই কালুহাটি গ্রামে দেখেছেন মানুষ ছোট ছোট ঘর নিয়ে পাদুকা তৈরি করছেন। তখনই তাঁর মনে হয়েছিল, সামর্থ্য হলে ভবিষ্যতে তাঁদের জন্য কিছু করবেন। এখন সিএফসির প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে বিশ্ববাজারেও প্রবেশ করতে পারবেন। তিনি বলেন, রাজশাহীতে আরও অনেক কুটিরশিল্প আছে। ভবিষ্যতে সেগুলো এগিয়ে নিতে কাজ করা হবে।

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এস এম আলম, ফাউন্ডেশনের পরিচালক পর্ষদের সদস্য মির্জা নূরুল গণী ও ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক ফারজানা খান এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহরাব হোসেন।

চেয়ারপারসন মো. মাসুদুর রহমান বলেন, শিল্প ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের আধুনিক প্রযুক্তিসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দেশে প্রথমবারের মতো কালুহাটি পাদুকা ক্লাস্টারে ১৩টি অত্যাধুনিক মেশিনসহ কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার (সিএফসি) স্থাপন করা হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন, বহুমুখী পণ্যের উৎপাদন, উৎপাদন হার বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক ব্যবসায়িক উন্নয়নই সিএফসি স্থাপনের মূল লক্ষ্য।

এসএমই ফাউন্ডেশন জানায়, কালুহাটি পাদুকা উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বাড়ানো, পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন, বহুমুখী পণ্য উৎপাদন, মার্কেটিং, আইসিটির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ে ১৫টি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ক্রেডিট হোলসেলিং কার্যক্রমের আওতায় ক্লাস্টারের ৮৫ জন উদ্যোক্তার মধ্যে তিন ধাপে সহজ শর্তে প্রায় ২ দশমিক ৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্লাস্টারের পণ্যের প্রচার ও ক্রেতাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ফাউন্ডেশন কালুহাটি পাদুকাশিল্প ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের নিয়ে সমজাতীয় ক্লাস্টারে এক্সপোজার ভিজিট আয়োজনসহ জাতীয় ও আঞ্চলিক মেলায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে।

কালুহাটি পাদুকা ক্লাস্টারে সিএফসি কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হলে অন্যান্য ক্লাস্টারেও অনুরূপ কার্যক্রম গ্রহণ করার পরিকল্পনা রয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশনের। রাজশাহীর চারঘাটের কালুহাটি গ্রামে আশির দশকে গড়ে ওঠা পাদুকা শিল্প ক্লাস্টারে চামড়া ও রেক্সিনের জুতা এবং স্যান্ডেল উৎপাদিত হয়। ক্লাস্টারটিতে প্রায় ৭ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান।

এছাড়া ক্লাস্টারের পণ্যের প্রচার-প্রসার ও ক্রেতাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ফাউন্ডেশন কালুহাটি পাদুকা শিল্প ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের নিয়ে সমজাতীয় ক্লাস্টারে এক্সপোজার ভিজিট আয়োজনসহ জাতীয় ও আঞ্চলিক মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। কালুহাটিতে সিএফসি স্থাপন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম বাস্তবায়নে সার্বিক সহায়তা ও দিক নির্দেশনা প্রদান করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে সিএফসি পরিচালনার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার সেন্টারের (সিএফসি) কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসএমই ফাউন্ডেশন ও কালুহাটি পাদুকা শিল্প মালিক সমবায় সমিতির সমন্বয়ে একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হবে।

চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সিএফসি পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি করা হয়েছে। ইউএনও সোহরাব হোসেন বলেন, স্থানীয় উদ্যোক্তারা যাতে উন্নয়নের মূলধারায় এসে কাজ করতে পারেন, সে জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তিগত সহায়তা পেলে তাঁরা বিশ্ববাজারে প্রবেশ করতে পারবেন।

উল্লেখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে তৃণমূল, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন।

ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০১৩ সালে পরিচালিত স্টাডিতে দেশব্যাপী ১৭৭টি ক্লাস্টার (বুস্টার সেক্টরে ১২৯টি ও নন-বুস্টার সেক্টরে ৪৮টি) চিহ্নিত করা হয় যেখানে কর্মী ও শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। এসব ক্লাস্টারের ৭০ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক টার্নওভার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। চিহ্নিত ক্লাস্টারগুলোর মধ্যে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, হ্যান্ডলুম, নকশিকাঁথা, ক্ষুদ্র গার্মেন্টস, হ্যান্ডিক্রাফটস, চামড়াজাত পণ্য ক্লাস্টার উল্লেখযোগ্য।

ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here