দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের তৈরি বিভিন্ন শিল্প খাতে প্রয়োজনীয় ৫০ হাজারের বেশি পণ্য, যন্ত্রাংশ ও পরিষেবা নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভান্সড কম্পোনেন্টস অ্যান্ড টেকনোলজি বা এটিএস এক্সপো ২০২৩।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর পূর্বাচলে অবস্থিত আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) তিন দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
সেসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত লিও টিটো এল আউসান জুনিয়র, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, এফবিসিসিআইয়ের নবনির্বাচিত সভাপতি মাহবুবুল আলম, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি সামীর সাত্তার ও ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম মুর্শেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির পরিচালক এস এ মাহবুবুল আলম।
ওয়ালটন জানিয়েছে, এটিএস এক্সপো বাংলাদেশে একক কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রথম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। এতে একই ছাদের নিচে ওয়ালটনের নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত আন্তর্জাতিক মানের ৫০ হাজারের বেশি শিল্প উপকরণ, সেবা ও টেস্টিং ফ্যাসিলিটিজ রয়েছে।
এগুলোর অধিকাংশই প্রায় সব ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধাপে প্রধান কাঁচামাল ও উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশি-বিদেশি শিল্পোদ্যোক্তা ও ক্রেতাদের কাছে ওয়ালটন উৎপাদিত পণ্য ও সেবা তুলে ধরার মাধ্যমে দেশের আমদানিনির্ভরতা হ্রাসের মাধ্যমে শত শত কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি রপ্তানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশে এই প্রথম এ ধরনের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সরকারের ব্যবসাবান্ধব নীতির কারণে দেশে ওয়ালটনের মতো বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তারা দেশের আমদানিনির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। সবকিছু মিলিয়ে ওয়ালটন এখন দেশীয় শিল্পের আইকনে পরিণত হয়েছে। আজকের প্রদর্শনীতে তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে দেশীয় শিল্পের বিকাশের জন্য সরকারের কাছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের দাবি জানান এফবিসিসিআইয়ের নবনির্বাচিত সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, ‘১৫ বছর ধরে সরকারের ব্যবসাবান্ধব নীতির কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়েছে। আশা করছি, এ ধারাবাহিকতা আগামী দিনেও বজায় থাকবে।’
বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ডলার ও সরবরাহ সমস্যার কারণে আমদানিতে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে ওয়ালটনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ভূমিকা রাখছে।
দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে ওয়ালটন বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী করছে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি সামীর সাত্তার।
ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি গোলাম মুর্শেদ বলেন, শিল্প ও উৎপাদন খাতে বাংলাদেশের যে সম্ভাবনাময় অবস্থান আছে, ওয়ালটন তার কাজের মাধ্যমে সেটা প্রমাণ করেছে। সরকারের নীতিসহায়তা ও গ্রাহকদের আস্থার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। এ যাত্রা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পরিসরে বড় জায়গা করে নেওয়া সম্ভব হবে।
ওয়ালটন জানিয়েছে, শিল্প মেলায় মোট ২১টি স্টল রয়েছে। মেলায় টেস্টিং সলিউশন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যাটেরিয়ালস (শিল্প উপাদান), কম্পোনেন্টস (উপকরণ), সার্ভিসেস (সেবা) ও প্রোডাক্ট (পণ্য)—এই চার শ্রেণিতে পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে।
যেমন ওয়ালটন ডিজিটেকের স্টলে আছে ৩৫ ধরনের প্রস্তুত পণ্য। এর মধ্যে আছে ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, স্পিকার, প্রিন্টারসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রয়েছে। আবার ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্সের স্টলে রয়েছে লাইট, ফ্যান, কেব্লসহ বিভিন্ন উপকরণ। ওয়ালটনের কর্মকর্তারা জানান, তৈরি পণ্য ছাড়াও গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী পণ্যও তৈরি করে দেওয়া যাবে।
মেলায় টেস্টিং সলিউশনস শ্রেণিতে বিভিন্ন ধরনের টেস্টিং ফ্যাসিলিটিস প্রদর্শন করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে কেব্ল ও ওয়্যার ল্যাব, নয়েজ টেস্টিং ল্যাব, এলইডি ল্যাব, নাসদাত-ইউটিএস, প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাবরেটরি, প্রোডাক্ট কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাব, ওয়ালটন সায়েন্স রিসার্চ ল্যাব ও ওয়ালটন ম্যাটালারজিক্যাল অ্যানালাইসিস অ্যান্ড রিসার্চ ল্যাব।
সার্ভিসেস শ্রেণিতে কন্সট্রাকশন সার্ভিস, মোল্ড অ্যান্ড ডাই, পাওয়ার-প্রেস ও এসএমটি (সারফেস মাউন্টিং টেকনোলজি) ইত্যাদি রয়েছে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যাটেরিয়ালস ও কম্পোনেন্টস শ্রেণিতে কৃষি, অটোমোবাইলস, সিমেন্ট, সিরামিকস, কেমিক্যাল, কসমেটিকস, ডিজিটাল, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসিউটিক্যালস খাতসহ দেশের বিভিন্ন ফরওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প খাতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত প্রধান উপকরণগুলো প্রদর্শন করা হচ্ছে।
এ ছাড়া পণ্য শ্রেণিতে রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ, টেলিভিশন (টিভি), শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি), হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্সেস, রাসায়নিক, মাস্টারব্যাচেস, মোল্ড অ্যান্ড ডাই ও তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে।
এক্সপোতে প্রদর্শন হচ্ছে একটি নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ তৈরিতে যে ২৫০ ধরনের বেশি উপকরণ বা যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয় তার সবগুলো। একইভাবে আবাসিক ভবনের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) তৈরিতে লাগে তিন শতাধিক যন্ত্রাংশ যা দর্শনার্থীরা দেখতে পাচ্ছেন।
ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা