উত্তরাঞ্চলের দারিদ্রতা দূরীকরণে সহস্রাধিক কর্মী বাহিনী গঠন করে চন্দনা ঘোষ অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করছেন গ্রামীণ নারীদের।
চন্দনা সব সময়ই কিছু না কিছু সেলাই করতেন। সেলাইগুলো দেখে ঠাকুরগাঁও এর একজন ব্যবসায়ী কিছু কাজের অর্ডার দিয়েছিলেন, তার অর্ডার মতো জিনিসগুলো তৈরির পর যখন শ্বাশুড়ি দেখলেন তখন তিনি বললেন, এগুলো বাইরে না দিয়ে নিজে বিক্রি করো। এমনকি শোরুম খোলার জন্য নিজস্ব জায়গায় একটি দোকান ঘর তৈরি করে দেন তার শ্বাশুড়ি। সেই থেকেই শুরু চন্দনা ঘোষের উদ্যোক্তা জীবন।
স্বামী দেব প্রসাদ ঘোষ এর কাছ থেকে ২১ হাজার টাকা নিয়ে প্রথম শুরু করেন তিনি। প্রথম প্রথমদিকে কাজের ভলিউম কম থাকায় নিজেই কাজ করতেন। তারপর বাড়ির পাশে ১০-১২ জন নারীকে নিয়ে কাজ জমিয়ে নতুন শোরুম করেন ১৯৯৮ সালে। সুতার কাজের জিনিস নিয়ে কাজ শুরু করেন, তাই শোরুমের নাম দিয়েছেন কারুপণ্য।
শুরুটা শাড়ি, পাঞ্জাবি ও বাচ্চাদের জামা দিয়ে। আস্তে আস্তে পণ্যের চাহিদা বাড়তে শুরু করে এবং কর্মী সংখ্যাও বাড়ে। গ্রামের মেয়েদের শিখিয়ে তিনি সুতার কাজের বেড কভার, কুশন কভার বিভিন্ন ধরনের শোপিস ইত্যাদি তৈরি করিয়ে নেন। কেননা এই পণ্য পরিবেশবান্ধব, এতে কোনো ক্ষতি হয় না। এতে গ্রামের মেয়েরাও ঘরে বসে নিজেকে আত্ননির্ভরশীল করতে পারছে।
বর্তমানে তিনি ড্রাই ফুড এবং অর্গানিক ফল ও সবজি নিয়েও কাজ করছেন। ঠাকুরগাঁও শহরে ১২টা সেন্টারে প্রায় ৪৫০ জন মহিলা কাজ করছেন। আর নিয়মিত বেতনভুক্ত ৪১ জন কর্মী রয়েছেন। ফ্লোরিডা ও ইন্ডিয়াতে তার পণ্য যায় এবং বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক মেলায় অংশ নেয়ায় সেখানে তার পণ্য সেল হয়েছে। এছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় পাইকারিভাবে পণ্য দিয়ে থাকেন। মাসে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার পণ্য উৎপাদন করেন এবং প্রায় ৫ লক্ষ টাকার পণ্য বিক্রি করেন চন্দনা ঘোষ।
বর্তমানে তিনি ট্রেনিং সেন্টার নিয়েও কাজ করছেন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এর আওতায় বিভিন্ন ট্রেড ভিত্তিক প্রশিক্ষণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। সেজন্য ঠাকুরগাঁও শহরের মেয়েদের আত্ননির্ভরশীল করার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারছেন তিনি।
উদ্যোক্তা চন্দনা ঘোষ বলেন, আমি নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা মনে করছি কারণ আমি অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়ে সামাজিক ভাবেও ক্ষমতায়িত হয়েছি। আমার প্রতিষ্ঠান কারুপণ্যের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় উত্তরবঙ্গের প্রায় সহস্রাধিক নারী অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। যার ফলে এক সময়ের মঙ্গাঞ্চল নামে পরিচিত উত্তরাঞ্চলের দারিদ্রতা দূরীকরণে আমি ও আমার প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখার সুযোগ পেয়েছে বলে নিজেকে সফল মনে করছি।
তিনি বলেন, তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আমার একটাই পরামর্শ থাকবে, যিনি যে বিষয়ে কাজ করবের, ভালোভাবে জেনে বুঝে সাহস এবং সততা নিয়ে কাজ করবেন। তাহলে অবশ্যই সফলতা আসবে।
ঠাকুরগাঁও শহরে চন্দনা ঘোষের জন্ম এবং বেড়ে উঠা। ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশ করে বিয়ের পর সেখানেই তিনি তার উদ্যোগ পরিচালনা করেন এবং একটি বিশাল কর্মী বাহিনী গঠন করেন।
সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা