ঢাকার তাপ কমাতে ২ লাখ গাছ লাগাবে উত্তর সিটি

0

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। এর আওতায় ঢাকার তাপমাত্রা কমাতে উত্তর সিটি এবং ফাউন্ডেশনটি যৌথভাবে কাজ করবে।

বুধবার (৩ মে) সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে Building Urban Heat Resilience: An International Collaboration between DNCC and The Adrienne Arsht Rockefeller Foundation Resilience Center (ARSHT- ROCK) শিরোনামে উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়। আরশট-রক ফাউন্ডেশন এই চুক্তির ফলে তাপ কমাতে উত্তর ঢাকায় নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।

কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বুশরা আফরিনকে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ‘চিফ হিট অফিসার’ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটিতে এশিয়ার প্রথম শহর হিসেবে একজন চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) নিয়োগ দেয়া হলো।

সিএইচও বুশরা আফরিন প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ঢাকা উত্তরকে নিরাপদ করার জন্য নেতৃত্বে দেবেন। তাপমাত্রা কমাতে তিনি শহরব্যাপী নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন। ঢাকা উত্তরের জনগণের মধ্যে তাপ সচেতনতা বৃদ্ধি, সুরক্ষা প্রচেষ্টা ত্বরান্বিতকরণসহ নতুন নতুন কাজ করবেন।

বক্তৃতায় বুশরা আফরিন বলেন, “আমরা শহরের প্রচণ্ড তাপ থেকে মানুষ ও সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিভিন্ন শহরের নেতাদের এবং বিশেষজ্ঞদের একটি বৈশ্বিক সংগঠনে যোগ দিতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত। ঢাকার একজন স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে আমি জানি তীব্র তাপ প্রবাহ মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপের বিকল্প নেই। ঢাকা শহরে তাপমাত্রা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিশেষ করে স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষ, বস্তিবাসী, অভিবাসী এবং নারী ও শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, “আজ আমার শহরের জন্য একটি বিশেষ দিন। শহরের তাপমাত্রা কমাতে ডিএনসিসির সাথে আরশট-রক ফাউন্ডেশন যৌথভাবে কাজ করবে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জন্য একজন চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) নিয়োগ দেয়া হয়েছে যিনি আর্শট-রকের সহযোগিতায় শহরের তাপমাত্রা কমাতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।

ডিএনসিসি মেয়র আরও বলেন, “ঢাকা শহরের তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দাবদাহের ফলে শহরের মানুষের জীবন ও জীবিকা আজ হুমকিতে। মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরছে। শ্রমজীবী মানুষের কর্মঘণ্টা কমে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। আমি আশা করছি, ডিএনসিসি এবং আরশট-রকের যৌথ উদ্যোগ তাপমাত্রা কমানোর মাধ্যমে একটি নিরাপদ ও শীতল ঢাকা গড়তে সক্ষম হবে।”

মেয়র বলেন, “আমি কাউন্সিলরসহ সকল কমিউনিটির সহযোগিতায় গাছগুলো লাগাতে চাই। গাছগুলো বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে আমি নগরবাসীর সাহায্য চাই, মহল্লার সাহায্য চাই, স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মসজিদের ইমামসহ সবার সাহায্য চাই। কারণ গাছগুলো লাগানোর পর তা যেন কেউ ভেঙে না দেয়। গাছগুলোর যেন যত্ন করি, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলি।”

ঢাকা শহরের তাপমাত্রা কীভাবে কমানো হবে, এর ব্যাখ্যায় মেয়র বলেন, এজন্য জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোসহ নানা কর্মসূচি নেওয়া হবে। এরইমধ্যে প্রকৃতিবান্ধব কিছু কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা ছাদবাগান উৎসাহিত করেছি। ঢাকা শহরে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ৪৯ হাজার এলইডি লাইট বসানো হয়েছে। ২৯টি খাল দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও লাউতলা খাল দখলমুক্ত করে দুপাশে ২ হাজার গাছ লাগোনো হয়েছে। কালশীতে ১৮ বিঘা জমি উদ্ধার করে সেখানে উন্মুক্ত পার্ক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মিরপুরে শিশুবান্ধব উন্মুক্ত গণপরিসর গড়ে তুলেছি।”

আরশট-রকের পরিচালক ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাথি বাঘম্যান ম্যাকলিওড বলেন, “তীব্র তাপ প্রবাহ সারা বিশ্বের শহরগুলিতে একটি প্রেসার কুকারের মতো কাজ করছে এবং ঢাকার উত্তরে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় এখানে ঝুঁকি আরো বেশি। তাই ঢাকা উত্তরে একজন চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার নেতৃত্বে এই শহরে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি বিশ্বাস করি বুশরা আফরিনের ভূমিকা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় শহরগুলির জন্য একটি রোল মডেল হিসাবে কাজ করবে। আরশট-রক ফাউন্ডেশন এই উদ্যোগের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত এবং আরশট-রক ফাউন্ডেশন ডিএনসিসির মানুষের সুরক্ষায় সম্ভাব্য সহযোগিতা প্রদান করবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, ডেপুটি ব্রিটিশ হাই কমিশনার ম্যাট ক্যানেল, অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাথি বাঘম্যান ম্যাকলিওড, অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের হিট অ্যান্ড সিটি ডিপ্লোমেসি বিভাগের প্রধান উপদেষ্টা মরিসিও রোডাস, শক্তি ফাউন্ডেশনের ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রোগ্রামের প্রধান সোহানি হক ইলিয়াস, শক্তি ফাউন্ডেশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক ইমরান আহমেদ ও ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, আর্শট-রকের গবেষণায় উঠে এসেছে ২০৫০ সালের মধ্যে তাপপ্রবাহ বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩.৫ বিলিয়নের বেশি মানুষের জীবন ও জীবিকায় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে এবং তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শহরে বসবাসকারী মানুষ। তীব্র তাপপ্রবাহ শহরগুলির জন্য বেশি বিপজ্জনক এবং প্রতি বছর শহরে ক্রমাগত ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় ঢাকা শহর তাপ প্রবাহের ফলে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। পাশের গ্রাম অঞ্চলের তুলনায় ঢাকা উত্তরের তাপমাত্রা প্রায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এই চরম তাপ পরিস্থিতি নগরবাসীর জীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে এবং শহরের বার্ষিক উৎপাদনের প্রায় ৮ শতাংশেরও বেশি শ্রম উৎপাদনশীলতা কমছে। ২০৫০ সাল নাগাদ গরমকালের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার অনুমান করা হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে নারী ও শিশুদের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

সেসময় ঢাকা শহরের তাপমাত্রা কমানোর উদ্যোগ হিসেবে দুই বছরে ২ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম।

ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here