কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে তরুণ প্রজন্মকে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে অনুপ্রাণিত করতে চট্টগ্রাম ক্যাটেল ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজন করে ‘চট্টগ্রাম ক্যাটেল এক্সপো ২০২৩’। অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ।
শুক্রবার চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে দিনব্যাপী “চট্টগ্রাম ক্যাটেল এক্সপো-২০২৩” অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রাকৃতিক উপাদানে পালিত ৩৮টি এগ্রো ফার্ম অংশগ্রহণ করে এবং তাদের ১০০টি ষাঁড় প্রদর্শিত হয়।
ক্যাটেল এক্সপো উদ্বোধন করে শাইখ সিরাজ তরুণদের অংশগ্রহণে প্রাণীসম্পদ খাতের অগ্রযাত্রাকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন “এই তরুন প্রজন্ম যারা শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরে থেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এসে গরু লালন পালন করছেন, আজকে কাজটি এতো সহজ হয়নি। সেই সুদীর্ঘ ৪০ বছর যাবত আমি যে কথাটি বলে আসছিলাম- শিক্ষিত তরুণরা যদি আমাদের কৃষির হাল ধরে তাহলে এদেশের কৃষি পাল্টে যাবে। আগামীর কৃষিটা হচ্ছে শতভাগ প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি, শতভাগ বাণিজ্যিক কৃষি। এই কৃষিকে ধরে রাখার জন্য শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।”
সরেজমিনে দেখা যায়, এক্সপোর পুরো মাঠ জুড়ে সারি সারি স্টল। এসব স্টলের শোভা পাচ্ছে নানা জাতের, নানা বর্ণের, আর নানা আকৃতি বিশাল বিশাল গরু। এসব গরুর নামও বেশ চমৎকার। কোন স্টলে রয়েছে ব্রাহমা, কোনটিতে শাহীওয়াল, কোনটিতে প্রদর্শিত হচ্ছে রেড সিন্ধি, আবার কোনটিতে হোলস্টাইন ক্রস। রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের গরু। প্রতিটি স্টলের গরুগুলোকে সাজানো হয়েছে বাহারিভাবে। ফলে এক্সপোতে আসা দর্শনার্থীরা বেশ আগ্রহ নিয়ে স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেছেন।
দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষিত সমাজ যারা ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করে মুরগি পালন করতো না, গরুর খামার করতো না আজ তারাই মুরগি পালন করছে, আজকে গরুর খামার করছে। এতে যেমন বেকার সমস্যার সমাধান হচ্ছে, তেমনি পুষ্টিজনিত মাংসজাত খাদ্যে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে।”
চট্টগ্রাম এগ্রো ফার্ম ও খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে লালিত-পালিত পশু প্রাকৃতিক ভাবে মোটা-তাজাকরণ করা হয়। কোন প্রকার মেডিসিন প্রয়োগ ব্যতিরকে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক খাদ্যের উপর নির্ভর করে তাদের পশু পালিত হয়। এখনকার শিক্ষিত তরুণ যুবকরা সরকারি প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে এই শিল্পের দিকে ঝুঁকছে এবং এক্ষেত্রে তারাই অগ্রগামী।
চট্রগ্রাম ক্যাটেল ফার্মাস এসোসিয়েশনের সভাপতি বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন বলেন, এই ধরনের আয়োজনে আমরা চাই তরুণ প্রজন্ম যেন অনুপ্রাণিত হয়ে এই সেক্টরে আসে এবং তরুণ প্রজন্মকে আমরা সুযোগ করে দিতে চাই এই সেক্টরে আসার জন্য।
দেশে প্রাণিসম্পদ খাদের বিকাশে এই ধরনের উদ্যোগ আরো ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন আয়োজক এবং উদ্যোক্তারা। নাহার এগ্রো গ্রুপের পরিচালক তানজীব জাওয়াদ রহমান বলেন, ‘আমরা এ মেলার মাধ্যমে দেখাতে চাই, বাংলাদেশে এ ইন্ডাস্ট্রিটা কীভাবে ডেভেলপ হচ্ছে। এবং আমরা তরুণ উদ্যোক্তারা কীভাবে কাজ করছি। এখানে দেখানো হচ্ছে কী করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে এ ষাঁড়গুলো পালন করা হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম ক্যাটেল ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আকতার হোসেন জ্যাকি বলেন, ‘হরেক রকম গরু নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আমরা এ ক্যাটেল এক্সপো আয়োজন করেছি। আমাদের লক্ষ্য কীভাবে এ শিল্পকে আরও সামনে এগিয়ে নেয়া যায়!’
ক্যাটেল এক্সপোতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ দোলোয়ার হোসাইন, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি এম. মাহবুবুল আলম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি খলিলুর রহমান, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ট্রেজারার ও এশিয়ান গ্রুপের এম.ডি এম. এ ছালাম, এসিআই এগ্রিবিজনেজ এর প্রেসিডেন্ট ড. ফা হ আনসারী এবং নাহার এগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্রিডার ফার্মার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ রাকিবুর রহমান (টুটুল)।
সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা