উদ্যোক্তা হয়ে উঠার চিন্তা মানে গতানুগতিক কাজের বাইরে কিছু করা। যেহেতু ব্যবসা নিয়ে কাজ তাই এর ধরনও থাকে ব্যক্তিবিশেষে আলাদা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনলাইন সহজ ও সুদূরপ্রসারী হওয়ায় অনলাইন ব্যবসায় মানুষের বাড়ছে। ছাত্র-ছাত্রী, চাকরিজীবী, গৃহিণী সকল শ্রেণির মানুষ যুক্ত হচ্ছেন উদ্যোক্তা পেশায়। তাদের মধ্যে একজন প্রান্তিকা চাকমা। অন্য কাজের পাশাপাশি বেছে নিয়েছেন আয়ের নতুন উৎস।
প্রান্তিকা চাকমার জন্ম ও বেড়ে উঠা রাঙ্গামাটিতে। পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বড়। উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। বিয়ের পরে বর্তমানে রাঙ্গামাটিতে বসবাস করছেন। ঘর সংসার সামলে প্রান্তিকা হয়ে উঠেছেন সফল উদ্যোক্তা। প্রতিষ্ঠানের নাম ‘রিপ রিপ রেস্টুরেন্ট’৷
প্রথম ধাপে কাজ শুরু করেন একটি ফেসবুক পেজ দিয়ে। এর মাধ্যমেই শুরু হলো ‘রিপ রিপ রেস্টুরেন্ট’ এর যাত্রা। গল্পটা শুরু হয় ২০১৬ সালে। পাহাড়ী নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী খাবার নিয়ে গড়ে তুলেছেন রেস্টুরেন্ট।
প্রান্তিকা চাকমা বলেন: মায়ের কাছে অনেক ধরনের রান্না শিখেছিলাম। রাঁধুনি হওয়ার শখ ছিল বহু আগে থেকেই। প্রায়ই বাড়িতে রান্না করে পরিবারকে পরিবেশন করতাম। একদিন আমার এক ভাইয়ের কিছু বন্ধু আমার বাড়িতে ঘুরতে আসেন। সেই সময় আমার হাতের রান্না খেয়ে তারা অনেক প্রশংসা করেন। তারা আমাকে পরামর্শ দেন আমি যেন একটি ব্যবসা শুরু করি। আমার মনেও এ আশা ছিল বহু দিন ধরে। টানা একটি বছর সব ধরনের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। তারপর আসে ২০১৬ সাল। পরিবারের সাথে আলোচনা করে শুরু করি আমার অনলাইন ভিত্তিক পেজ ‘রিপ রিপ রেস্টুরেন্ট’। বেশ কয়েকটি আইটেমের খাবার রান্না করে সাথে সাথেই ছবি তুলে পেজে আপলোড দিলাম। তার মধ্যে ব্যাম্বু চিকেনের অর্ডার পেলাম। প্রথম খাবার বিক্রি হলো ৩৫০ টাকায়। এভাবে শুরু হয় আমার রেস্টুরেন্টের যাত্রা।একটি প্রশংসাই আমাকে গড়ে তুলছে উদ্যোক্তা হিসেবে।
শুরুতে এতোটা সহজ ছিল না। সাড়াও ছিল কম। এখন রাঙ্গামাটিতে ব্যাপক সাড়া পেয়ে গড়ে তুলেছেন নিজের একটি রেস্টুরেন্ট। মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ‘রিপ রিপ রেস্টুরেন্ট’ এর যাত্রা। খাবার মেনুতে রয়েছে মাছ হেবাং, ডিম হেবাং, ইচা মাছ হেবাং, শুটকি হেবাং, ব্যাম্বু চিকেন, ব্যাম্বু ফিসসহ পাহাড়ী নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার। বর্তমানে ৫ জন কর্মী রয়েছেন। রাঙ্গামাটি ছাড়া অন্য কোথাও ডেলিভারি না দিলেও মাসে পাঁচ লাখ টাকার আয় করেন উদ্যোক্তা।
তিনি বলেন, ‘একটাই উদ্দেশ্য- আমাদের খাবার দেশের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর কাছে পরিচিতি করানো এবং এখান থেকে আয়ের অংশ দিয়ে অসহায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। রাঙ্গামাটিতে এমন অনেক মানুষই আছেন যারা দিনের পর দিন কষ্ট করে যাচ্ছেন। আমার উদ্যোগ যেন তাদের কাজে আসতে পারে সেই প্রত্যাশাই করি।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ‘রিপ রিপ রেস্টুরেন্ট’ ছড়িয়ে দিতে চান রাঙ্গামাটির বাইরে। যেন সবাই এক নামেই জানেন প্রান্তিকা চাকমার উদ্যোগের কথা।
তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রতি পরামর্শ জানতে চাইলে উদ্যোক্তা বলেন: পরিশ্রমী হতে হবে। ব্যর্থতাকে জয় করার মানসিকতা থাকতে হবে। ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সংবেদনশীল হতে হবে।
মেহনাজ খান,
উদ্যোক্তা বার্তা