সমাজের বিদ্যমান প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে আমাদের দেশের নারীরা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন। নিজেরা সমৃদ্ধ হবার পাশাপাশি ভূমিকা রাখছেন পরিবার, সমাজ এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে। সমাজের সর্বক্ষেএে তাদের অবস্থান আরো দৃঢ় হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শুধুমাত্র নিজেরা উদ্যোক্তা হয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই নয়, এর পাশাপাশি অন্য নারীদের উদ্যোক্তা হতে উদ্বুদ্ধকরণেও অনেক নারী উদ্যোক্তারা রাখছেন বিশেষ ভূমিকা। উদ্যোক্তা নিলুফা ইয়াসমিন তাদেরই একজন।
প্রাথমিকে পড়াকালীন সময় মায়ের করা বিভিন্ন ধরনের কাপড়ে ফুল তৈরি অত্যন্ত মনযোগী হয়ে দেখতেন, নিজে শেখার চেষ্টা করতেন। এই দেখা আর শেখার চেষ্টাই বিকশিত করেছে নিলুফা ইয়াসমিনের সৃষ্টিশীলতার জগতকে। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনোর আগেই নানারকম কাগজের ফুল তৈরি আয়ত্ত্ব করেন তিনি। তৈরিকৃত ফুল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে, সেখান থেকে আয়কৃত টাকা দিয়ে কাগজের ফুল তৈরির একটি মেশিন ক্রয় করেন তিনি।
বিবাহিত জীবনে পদার্পণ করেন নিলুফা। বিয়ের পর ভেবেছিলেন নিজের সৃষ্টিশীলতা বাধাগ্রস্ত হবে, নিজে কিছু করার স্বপ্ন বোধহয় থেমে যাবে। চিরাচরিত আশংকাগুলো মনে দানা বাঁধলেও, নিজের পথচলায় স্বামীর কাছ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতাই পেয়েছেন, নিজের লক্ষ্যে এগিয়েছেন নতুন উদ্যমে।
রঙ-বেরঙের সুতা, পুঁথি, কুশন কভার ছিল উদ্যোক্তার উপকরণ। কাগজের ফুল তৈরির পাশাপাশি কাপড়ে ফুলের ডিজাইন, কুশন কভার, পুঁথি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের শোপিস, কাগজের নান্দনিক ফুলদানি তৈরি শুরু করেন তিনি। নিজের উদ্যোগের পরিসর আরো বড় করার লক্ষ্যে এবং পারিবারিক সচ্ছলতাকে মাথায় রেখে মাত্র ৩০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ‘নিউ ফ্যাশন বুটিক’ এর যাত্রা শুরু করেন রাজশাহীর সুজানগর এলাকায়।
যাত্রা শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই বেশ কিছু অর্ডার আসে। কাজের চাপ বেড়ে গেলে কর্মী সংখ্যাও বৃদ্ধি করেন উদ্যোক্তা। সময়মতো পণ্য ডেলিভারী করলেও সঠিক পারিশ্রমিক পেতেন না। উপরন্তু না দেখে নিজের পকেট থেকেই কর্মীদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করতেন। এভাবে বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হন উদ্যোক্তা। তারপরও থেমে থাকেননি, নিজে কিছু করার তীব্র আকাঙ্খা আর সাহসই যে সবচেয়ে এগিয়ে যাবার পথে বেশি কার্যকারী তা প্রমান করেছেন উদ্যোক্তা নিলুফা ইয়াসমিন।
২০০৬ সাল থেকে সিঙ্গার সেলাই কেন্দ্রে তৃনমূল পর্যায়ে নারীদের সাবলম্বী করতে এবং নারীদের উদ্যোক্তা তৈরিতে প্রশিক্ষন দিয়ে যাচ্ছেন নিলুফা ইয়াসমিন। পাশাপাশি সিঙ্গার স্মার্ট গৃহিণীর স্মার্ট কিচেনে রন্ধন শিল্পের যাবতীও সকল বিষয়ে প্রশিক্ষন দিয়ে যাচ্ছেন।
নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, “হতো দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত নারীদের কাজ শিখিয়ে যখন তাদের সাবলম্বী ও উদ্যোক্তা হতে দেখি আমি তাদের মাঝে সমৃদ্ধির বাংলাদেশ দেখতে পায়”।
রাজশাহী থেকে রাইদুল ইসলাম শুভ
এসএমই করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা