পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে সাবাহাত নওরীন। বাবা ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিণী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই বড়। নওরীনের জন্ম ঝিনাইদহে। পড়াশোনাও করেছেন ঝিনাইদহ’র স্কুল ও কলেজে।
ছোটবেলা থেকেই বেকিং ও কুকিং-এর প্রতি নওরিনের আগ্রহ ছিল। প্রায় সময়ই টুকটাক কিছু না কিছু আইটেম বানানো হতো বাসায়। বেকিং-কুকিং এর প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা থেকেই কেকের উদ্যোক্তা হওয়া বলে জানান তিনি।
সাবাহাত নওরীনের বিয়ে হয় ২০১২ সালের জুনে। তার স্বামী একজন বুটিক’স উদ্যোক্তা। বতর্মানে স্বামীর বুটিক ব্যবসার একটা অংশও নওরীন নিজে দেখাশোনা করেন। তবে, নিজের উদ্যোগেই পরিচিতি তার।
নওরীন জানান, ছোটবেলা থেকেই বেকিং, কুকিং এর প্রতি চরম নেশা থাকায় ঘরে বসেই নিজ থেকে টুকটাক কেক বানাতেন। কী ভেবে হুট করেই একজন বড় বোনের কাছে প্রফেশনাল বেকিং কোর্স করে ফেলেন। যেহেতু মেয়ের বয়স তখনও মাত্র ৪ বছর, বিজনেসের ব্যাপারটা তখনও ঠিক মাথায় আসেনি। শখ থেকেই কোর্সটা করেছিলেন তিনি।
তার বানানো কেকের ডিজাইন বেশ ভাল হতো, সেগুলোর ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করতেন তিনি। সবাই বাহবা দিতো, প্রশংসা করতো। আর তখন হঠাৎ করেই মাথায় আসে পেইজ খোলার বিষয়টা। নিজের নাম দিয়েই একটা পেইজ খুলে ফেললেন তিনি। আর নিজের বানানো কেকগুলোর ছবি পোস্ট করতে লাগলেন। তারপর এভাবেই হয়ে উঠেন বেকিং-কুকিং এর উদ্যোক্তা। ২০১৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নওরীন’স-এর যাত্রা শুরু।
সাবাহাত নওরীন বলেন, তার প্রথম অর্ডারের পেছনে কাছের বান্ধবী রামিজা ও রুমানার অবদান বলে শেষ করা যাবে না। শুরুতে নিজ উদ্যোগের কথা তখনও ফ্যামিলির কাউকে জানাননি তিনি, শুধু বান্ধবীরাই জানতো। বিশেষ করে বান্ধবী রামিজার উৎসাহেই তিনি আজ একজন কেক উদ্যোক্তা। ”রামিজা আমাকে উৎসাহ দিয়ে এতো দূর এনেছে, এখনও সে আমাকে পেছন থেকে প্রতিনিয়তই উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। আর প্রথম অর্ডার দিয়েছিল রুমানা, যা অনেক বড় কিছু।”
শুরুতে পুঁজি বলতে ছিল মাত্র ২,৫০০ টাকা। এখন প্রতিদিন ৩/৪ টা কেকের অর্ডার থাকে। নওরীন জানান, তার রিপিট কাস্টমারই বেশি। “যারা একবার আমার কেক নিয়েছেন, তারাই আমার কাছে বারবার তাদের বিশেষ দিবসসহ, নানা সময় কেক অর্ডার করে থাকেন। কারণ কেকের গুণগত মান।”
প্রথম দিকে শুধুমাত্র বেকারি স্টাইল ক্রিম কেক দিয়ে শুরু করলেও ক্রমে ক্লায়েন্টদের চাহিদাকে মাথায় রেখে বিভিন্ন ধরনের ইন্টারন্যাশনাল মানের কাস্টমাইজড থিম কেক, বাজেট ফ্রেন্ডলি কাপ কেক এসবও যুক্ত করেন নওরীন।
বেকিং থেকে শুরু করে পেইজ পরিচালনা, প্রচারণা, ডেলিভারি সবই উদ্যোক্তা নিজ হাতেই করেন। আড়াই হাজার টাকার মূলধনে শুরু হওয়া উদ্যোগে নওরীন এখন প্রতি মাসে আয় করছেন ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা।
ভবিষ্যতে এই উদ্যোক্তা তার প্রতিষ্ঠান নওরীন’স-কে অফলাইনে নিয়ে যেতে চান। বড় একটা শো-রুম দেয়ার ইচ্ছাও আছে তার। পাশাপাশি একটা ট্রেইনিং সেন্টার করারও ইচ্ছা।
আফসানা অভি
উদ্যোক্তা বার্তা