ইচ্ছা ছিল নিজেকে স্বাবলম্বী করবেন, কিংবা নিজের পরিচয় তৈরি করবেন। সংসারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সেটা হয়নি। তবে, এক্সপার্টদের কাছে হাতের কাজ, রান্না, সেলাই, হ্যান্ড পেইন্ট, টাই-ডাই বাটিক, ব্লক কাজের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। সেই প্রশিক্ষণের ওপর ভর করে শেষ পর্যন্ত তিনি পেরেছেন। এখন ব্যবসাই তার কাছে প্রধান কাজ। স্বপ্নপূরণের পথে তাই অনেকটা এগিয়ে গেছেন শাহীনা আকতার জাহান। তার উদ্যোগের নাম ‘Goldfish Art on Canvas’.
সালটা ২০১৫, ঘোড়াশাল থেকে ঢাকায় ফিরেছেন শাহীনা। তার ছেলে তখন ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসে এমবিএ করে চাকুরি শুরু করেছে। মেয়েও এমবিএ করছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ততোদিনে সংসারের কাজ কিছুটা হালকা হয়েছে, দায়িত্বগুলো কমতে শুরু করেছে শাহীনার। ঢাকায় আসার পর ইন্টারনেটের সাথে ভালোভাবে পরিচিত হন। ২০১৭ সালে জয়েন করেন ফেসবুক জগতে। তবে ফেসবুকে ফানি পোস্ট দেখে সময় না কাটিয়ে শেখার সুযোগগুলো কাজে লাগান। বিশেষ করে রান্না ও আঁকাআঁকি যে দুটো কাজ তার খুব পছন্দের।
তিনি বলেন: ফেসবুকে রান্না এবং হ্যান্ডপেইন্ট এর ভিডিও দেখে দেখে আমি শেখার জন্য আরও উৎসাহিত হই। একদিন বিখ্যাত শেফ দিল আফরোজ সাইদা আপুর পোস্টে ফন্ড্যান্ট কেক ডেকোরেশন বিষয়ে দু’দিনের কোর্স বিষয়ে জানতে পারি। আপু নিজেই শেখাবেন। আপুর সাথে যোগাযোগ করে কোর্সটা করি। ফেসবুকে হ্যান্ডপেইন্ট এর শাড়িগুলো দেখেও ভীষণ ভালো লাগতো। খুঁজতে লাগলাম কার কাছে শেখা যায়। পেয়ে গেলাম চারুকলার এক আপুকে, আপুর কাছেই প্রথম হ্যান্ডপেইন্ট শিখি। শিখতে গিয়ে হ্যান্ডপেইন্ট এতো ভালো লেগে গেল যে এটা নিয়েই একটা কিছু করার সিদ্ধান্ত নিলাম। এভাবেই শুরু আমার উদ্যোক্তা জীবন।
শাহীনা আকতারের মেয়ে ২০২০ সালে ‘Goldfish Art on Canvas’ নামে একট বিজনেস পেজ খুলে দেয়। পেজটির মাধ্যমে শাহীনা অনলাইন ব্যবসায় জড়িত হন।
অনলাইন বিজনেস সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার তেমন কিছু জানা ছিল না। আস্তে আস্তে শিখেছি। আমার হাজব্যান্ড, ছেলে, মেয়ে, মেয়ের জামাই উদ্যোক্তা জীবনে অনেক সাপোর্ট করেছে।’
শাহীনা একদম শুরুতেই পণ্য বিক্রি করার চিন্তা করেননি। কারণ ব্যবসা করতে গেলে শিখতে হবে। তাই সেটা আগে করেছেন। তার শুরুর পুঁজি বলতে ৫,০০০ টাকা। প্রথমে এলাকার ছোট ভাইয়ের কাছে দুটো শাড়ি ও একটি পাঞ্জাবি বিক্রি করে দাম পেয়েছিলেন ৫,৩০০ টাকা। এভাবে ছোট ছোট লাভ থেকে ধীরে ধীরে ব্যবসা বাড়িয়েছেন।
এখন তার ‘Goldfish Art on Canvas’ এর পণ্যতালিকায় আছে: হ্যান্ডপেইন্টেড, শাড়ি, পাঞ্জাবি, শাল, কুশন কভার, বেডশিট উইথ পিলো কভার, হ্যান্ডপেইন্টেড চুড়ি, ক্লে গহনা, হ্যান্ডপেইন্ট এর বোতল, ব্লাউজ পিস। নিজের পণ্য নিজেই তৈরি করেন। কোন কর্মী নেই, তবে মেয়ে মাঝেমধ্যে সাহায্য করে এবং ছেলে ফটোগ্রাফি করে ছবি আপলোড দেয়। মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মতো আয় হয়। দেশের অনেক জেলাতেই তার পণ্য যাচ্ছে।
শাহীনা বলেন: প্রথমত আমি নারী, সাথে কন্যা-জায়া-জননী। আরও নানা পরিচয়ের মাঝে নিজস্ব একটা পরিচয় চেয়েছি। আমার ইচ্ছেশক্তি আমাকে উদ্যোক্তা বানিয়েছে। ক্রিয়েটিভ যেকোন কাজ করতে পছন্দ করি। আঁকাআঁকি খুব ভালো লাগে বলেই হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে কাজ করছি।
সংসার জীবনের পাশাপাশি ভবিষ্যতে তার এই উদ্যোগকে আরও বড় করতে চান, দাঁড়াতে চান এলাকার অসহায় মানুষদের পাশে।
শাহীনার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলায়। বাবার চাকরিসূত্রে নরসিংদী জেলায় ছিলেন বহুদিন৷ শীতলক্ষ্যা পাড়ে ঘোড়াশাল সার কারখানার আবাসিক এলাকায় বড় হয়েছেন, পড়াশোনা করেছেন ইউরিয়া সার কারখানা স্কুল অ্যান্ড কলেজে। স্বামী ও দু’ সন্তানের অনুপ্রেরণায় উদ্যোক্তা জীবন এগিয়ে চলেছে। এমন করে ‘Goldfish Art on Canvas’ কে প্রতিষ্ঠিত করতে চান যাতে সকলের আস্থা অর্জন করতে পারে গোল্ডফিশ।
মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা