গতানুগতিক পড়াশোনায় যখন মানুষ তার স্বপ্ন দেখা শুরু করে, নিজেকে কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ভাবতে ভালোবাসে; তখন তিনি তার পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ফেলেন। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নকে ছোঁয়ার আশায় পরিবার, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সকলের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুরু করেন নিজের স্টার্ট আপ। বছর কুড়ি বয়সে বাংলাদেশে বাসা ভাড়ার সবচেয়ে বড় ওয়েবসাইট ‘দ্যা টুলেট’ এর ফাউন্ডার এবং সিইও হিসেবে যাত্রা শুরু করেন অমিত ঘোষ।
মাত্র নয় বছর বয়সে বাবা অঞ্জন ঘোষকে হারিয়ে একমাত্র সন্তান হিসেবে বড় হয়ে উঠেন মা ধৃতি রানী ঘোষের হাত ধরে। নেত্রকোণা শহরের মোক্তারপাড়ায় অমিতের বেড়ে উঠা। সেখানকার সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন অনার্সে। কিন্তু তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
২০০৮ সাল থেকে ফেসবুক ব্যবহার করেন অমিত। তখন থেকেই ওয়েবসাইট তৈরির স্বপ্ন মাথায় জেঁকে বসে। স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পড়তে হয় নানা জটিলতায়। আসে বাধা-বিপত্তি। অতঃপর সব বাধা পেরিয়ে ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষার পর পরিবারের দ্বিমতে ঢাকায় পাড়ি জমান। সব চিন্তা বাদ দিয়ে কোডিং শিখতে বিদেশী প্রফেশনাল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে সফলভাবে ওয়েবসাইট তৈরির কোর্স সম্পন্ন করেন।
তারপর আসে বাসা ভাড়ার সাইটের চিন্তা। পড়াশোশুনা কিংবা চাকরিসূত্রে বেশিরভাগ মানুষকেই ভাড়া বাসায় থাকতে হয়। নাগরিক এবং ব্যস্তময় জীবনে বাসা খোঁজাখুঁজি রীতিমত একটি বিড়ম্বনার বিষয়। তাই অমিতের চিন্তায় ছিল কিভাবে এই বিড়ম্বনা কমিয়ে খুব সহজেই বাসা খোঁজার কাজটি করা যায়। সেই ভাবনা থেকেই অমিত শুরু করে অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম। নাম দেন ‘দ্যা টুলেট’।
শুধুমাত্র ভাড়া সংক্রান্ত বিষয়গুলোর সমস্যা সমাধানে কাজ করার উদ্দেশ্যে ‘দ্যা টুলেট’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে নতুন একটি নাম দিয়ে মানুষের জটিলতা না বাড়ানোর ভাবনা থেকেই ‘দ্যা টুলেট’ নামটি রাখা হয়।
২০১৬ সাল থেকে ‘দ্যা টুলেট’ ফ্যামিলি-বাসা, ব্যাচেলর-বাসা, অফিস, হোস্টেল, সাবলেট, মেস অর্থাৎ বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত সকল সমস্যা সমাধানের একটি অনলাইন প্রচেষ্টা হিসেবে কাজ করছে। এটি ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় কম পরিশ্রমে খুব সহজেই বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া পাবেন। গুগল প্লে-স্টোর থেকে খুব সহজেই ‘দ্যা টুলেট’ অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করে সেবাটি নেওয়া যায়।
অমিত জানিয়েছেন, ছয় বছরে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ ওয়েবসাইটটি দেখেছে তিন কোটি বারের বেশি। ‘দ্যা টুলেট’ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ লাখের বেশি। প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করছেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। এখন অ্যাপটিকে অ্যাপল ষ্টোরে রাখার প্রস্তুতি চলছে।
তরুণদের উদ্দেশে অমিত বলেন: কয়েকবার ব্যর্থ হলেই অন্য কিছুতে চলে যাওয়া উচিত নয়। এমনও ভাবা ঠিক না যে সবাই খুব সাপোর্ট করবে, খুব কম সময়ে ভালো কিছু হয়ে যাবে। উদ্যোক্তা হতে হলে প্রচুর ধৈর্যশীল হওয়া লাগে, ধৈর্য্যশীল হলেই ভালো কিছু করা সম্ভব।
সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা