দেশে কাপড়ে ব্লক করাও বর্তমানে একটি সফল ও জনপ্রিয় ব্যবসা। শহর থেকে গ্রামে কাপড়ের দোকানে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে কাঠের ব্লকে সুন্দর সুন্দর নকশার শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ। এটি এমন একটি শিল্প যা সামান্য পুঁজির মাধ্যমেই ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করা যায়। এ খাতে সফল উদ্যোক্তা অনেক। তাদের একজন মৌসুমী মৈত্র কচি। স্বল্প পুঁজি নিয়ে নিজের আত্মমর্যাদা ও সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে ব্লকের তৈরি পণ্য নিয়ে উদ্যোক্তা হয়েছেন তিনি। তার অনলাইন পেজের নাম GRIHO.
মৌসুমী মৈত্র কচি দু’ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ছোট। তার বাড়ি দিলালপুর, বেলতলা রোড, পাবনা। এশিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি গান-আবৃত্তির শখ ছিল। ১৯৯৩ সালে রবীন্দ্র সংগীতে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। তবে, বাচ্চাদেরকে সময় দিতে গিয়ে আর গায়িকা হওয়া শখ পূরণ করতে পারেননি।
মৌসুমী মৈত্র উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘একজন শিক্ষক ছিলাম, সন্তানদের বড় করতে হবে ভাবনায় কীভাবে জীবনের বড় একটা সময় পার করে ফেলি বুঝতে পারিনি। ২০১৯ সালে মেয়ের বিয়ে, পরের বছর স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ। তখন করোনাকালীন আমার জীবন অন্যদিকে মোড় নেয়। মানসিক তৃপ্তি পাচ্ছিলাম না। ঠিক তখনই আমি অনুভব করি আমাকে নিজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। চাকরি করার মানসিকতা ছিল না সেই মূহূর্তে। সিদ্ধান্ত নিলাম চাকরি খোঁজা নয়, উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা নিয়ে ব্যবসায় নেমে গেলাম।’
তিনি বলেন: যেহেতু বাড়ি পাবনায় তাই প্রথমে পাবনার প্রসিদ্ধ খাঁটি গাওয়া ঘি দিয়ে শুরু করি। এখানে আমার বান্ধবীদের প্রচণ্ড সাপোর্ট পাই। ওরা এখনও আমার কাছ থেকেই ঘি নেয়। এভাবেই শুরুটা ছিল। এরপর আমার খুব কাছের ছোটবেলার বান্ধবী আমাকে পরামর্শ দেয় শাড়ি নিয়ে কাজ করার। যেহেতু ব্লক, বাটিক ও প্রিন্ট নিয়ে আমার ধারণা ছিল, তাই তখন আমি কাপড় কিনে নিজেই নিজের কাজগুলো করে পেইজে বিক্রি শুরু করি। এভাবেই আমার উদ্যোক্তা জীবনের শুরু।
তিনি ৩০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে মূলত দেশীয় সুতি শাড়িতে, পাঞ্জাবি, চাদরে ব্লকের নিজের ডিজাইন করে পণ্য তৈরি করেন। ঢাকাসহ সকল বিভাগেই পণ্য যায় অনলাইন পেজের GRIHO ‘র মাধ্যমে। আর নিয়মিত অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকায় তার পণ্য যাচ্ছে। মাসে ২০/৩০ হাজার টাকা আয় করেন।
কচি বলেন, ‘শাড়ি পরতে ভালোবাসি, শাড়ি পরলে একজন নারীকে কত সুন্দর লাগে, পরিপূর্ণ লাগে, এজন্যই শাড়ি নিয়ে কাজ করা। দেশকে ভালোবাসি। দেশের পণ্যকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্যই দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করা।’
ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে মৌসুমী মৈত্র কচি বলেন: আমি আমার পেজ GRIHO-কে আরও বড় পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। দেশে এবং বিদেশে সুনাম অর্জন করতে চাই। কর্মহীন নারী ও পুরুষদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই। যারা চাকরি না পেয়ে আরো নিচের দিকে নামছে, এমন মানুষদের আমার কর্মভুবনের মাধ্যমে কর্মজীবী করে গড়ে তুলতে চাই। সুযোগের অভাবে নিজে অনেক কিছু করতে পারিনি। তাই সাধ্যের মধ্যে যতোটুকু পারছি অন্যদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি ও এটা করেই যাবো। প্রতিভা সবার মাঝেই আছে, শুধু প্রয়োজন একটু সুযোগ, তাহলেই সেই প্রতিভা বিকশিত হবে।
নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা যা নিয়েই কাজ করো না কেন, সেটা সম্পর্কে খুব ভালো জেনে-বুঝে তবেই কাজে নামবে, তাহলে সফলও হবে। সবার আগে নিজেকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার বিকল্প আজও কিছু আসেনি। তাই শিখে বুঝে শুনে যে কাজে নিজেকে দক্ষ মনে হবে, তাই নিয়ে ব্যবসা শুরু করো। স্বাবলম্বী হওয়া কঠিন কিছু নয়। তবে ধৈর্য্য ধরতে হবে অনেক।
মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা