‘কেকপপস’ নামেই উদ্যোগের ধরন স্পষ্ট। শুরুতে কিছুদিন চাকরি করলেও পরে ‘কেকপপস’ নামের উদ্যোগ নিয়ে বেকারি আইটেমের ব্যবসা করছেন সুলতানা রাজিয়া। মুলত অনলাইনভিত্তিক বেকারি শপ তার।
রাজিয়ার বাবা ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিনী। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছোট। গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ কেরানিগঞ্জ, ঢাকা। বড় হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ শহরে। স্নাতক করেছেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে মার্কেটিং বিষয়ে। পড়াশোনা শেষ করে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেছেন কিছুদিন।
কিন্তু, তার উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছেটা ছোটবেলা থেকেই ছিল। ‘যদিও উদ্যোক্তা কথাটা বুঝতাম না, তাই বলতাম বাবার মতো ব্যবসায়ী হবো। কিন্তু কোন জিনিসটা কাজে লাগিয়ে হবো সেটি জানা ছিল না,’ বলছিলেন সুলতানা রাজিয়া।
বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন: আমার উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প শুরু ২০১৫ এর দিকে। পড়াশোনার পাশাপাশি আমি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে কাজ করেছিলাম। কিন্তু বেকিং এবং কুকিং এর প্রতি আমার আগ্রহ ছিল। তাই একবার বাবাকে বলেছিলাম, আমাকে কেক বানানো শেখাতে। কাজটি খুব কঠিন মনে করে তিনি এড়িয়ে যান। তাই খুব কষ্ট থেকে সিদ্ধান্ত নেই বেকিং শিখবো। তারপর টাকা জমিয়ে কেক এবং বেকিং এর উপর কোর্স করি। শেখার পর অনুশীলন হিসেবে শুধু নিজের ঘরের মানুষদের জন্য বানাতাম। মাঝে মাঝে নিজের বানানো কেক এর ছবি ফেসবুকে আপলোড করতাম। যেহেতু ইভন্ট ম্যনেজমেন্টে কাজ করতাম, তাই অনেকে জিজ্ঞেস করতেন অর্ডার নেই কিনা? তখন অবধি কোন ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ছিল না। শুধু আনন্দ নিয়ে বানিয়ে দিতাম। আস্তে আস্তে পরিবার ও প্রিয়জনদের কাছ থেকে উৎসাহ পেতে শুরু করলাম। বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে আমাকে কেক তৈরি করে দেয়ার জন্য মেনশন দিতো। সবাই তখন জিজ্ঞেস করতেন যে আমার বিজনেস পেইজ এর নাম কি? তখন থেকেই ভাবলাম আইডেন্টিটি করতে হবে। তাই আমার বড় ভাই আমাকে সাহায্য করেছে ব্যবসায়িক পেজ খুলতে, নাম দিতে এবং পরিচালনা করতে। কখনো ভেবে উঠতে পারিনি যে আমার শখই একসময় আমার পেশা হবে।
যেহেতু শখ থেকে সুলতানা রাজিয়া কাজ শিখেছিলেন, তাই শুরুতে তার প্র্যাকটিসের জন্য অনেক টুলস কিনতে হয়েছিল। সব মিলিয়ে তার বিনিয়োগ ছিল ৩০ হাজার টাকা।
মূলত কেক এবং বেকারি আইটেম নিয়ে কাজ করেন তিনি। এর মধ্যে আছে কাস্টোমাইজড কেক, রেগুলার কেক, মিষ্টি জাতীয় খাবার, ডেজার্ট, বিভিন্ন ধরনের বিস্কিট এবং ব্রেড। মাঝে মাঝে ক্লায়েন্টের চাহিদানুযায়ী অনেক রকম আইটেমও তৈরি করেন। তিনি কাজ শুরু করেছিলেন নিজের বাসা থেকে, তবে এখন ছোট একটা ওয়ার্কস্টেশন করেছেন। সেখান থেকে সকল পণ্য তৈরি এবং ডেলিভারি হয়।
সুলতানা রাজিয়ার প্রতিষ্ঠানে আরও তিনজন সহযোগী আছেন। একটি অনলাইন পেইজ আছে যার নাম “Cakepops”। যেহেতু কিছু সেন্সেটিভ খাবারের আইটেম নিয়ে কাজ করছেন, তাই আপাতত শুধু ঢাকা ও নারায়ানগঞ্জের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় তার সেবা সীমাবদ্ধ। সবমিলিয়ে মাসে ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার মতো বিক্রি হয়।
তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই যেহেতু ভাবতাম ব্যবসা করবো, তাই অন্যের অধীনে কাজ করার ইচ্ছা ছিল না। অন্যের অধীনে কাজ করাটাকে খাঁচায় বন্দি পাখির মতো মনে হয়। উন্মুক্ত চিন্তা, নিজের কাজকে ব্যক্ত করা ও ব্যপ্তি ঘটানো এবং নিজেকে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করার জন্যই মূলত আমার উদ্যোক্তা হয়ে উঠা।’
“Cakepops”-কে একটি বড় ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করাই তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা। ভালো মানের পণ্য সরবরাহের পাশাপাশি নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। দেশের বাইরে রপ্তানির পরিকল্পনাও আছে তার।
তরুণদের উদ্দেশে তার পরামর্শ: প্রতিটি মানুষের স্বাবলম্বী হওয়া উচিৎ। তার জন্য লক্ষ্য স্থির করতে হবে এবং সে অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করতে হবে। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলার মন-মানসিকতাও রাখতে হবে। সাহস করে শুরু করতে হবে। পথে নামলে পথ দেখা যাবে।
মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা