হাজার রকম নিরামিষ যে চুলায়

0
উদ্যোক্তা শেফালী কর্মকার শেলী

‘Shelly’s Veg Recipes’-এর স্বত্ত্বাধিকারী শেফালী কর্মকার শেলী। ময়মনসিংহে তার জন্ম আর বেড়ে উঠা। দুই সন্তানের জননী শেলী বৈবাহিক সূত্রে স্বামী-সন্তান নিয়ে টাঙ্গাইলে থাকেন ।

ছোটবেলা থেকেই একটা চিন্তা তার মনের ভেতর লালিত হয়ে আসছিল, কিন্তু ক্ষেত্রটা কোনভাবেই তৈরি হচ্ছিল না। একদিকে বাচ্চাদের প্রতি দায়িত্ববোধ অন্যদিকে সময়ের অভাব। কিন্তু চিন্তাটা অবিরত খোঁচাচ্ছিল। অবশেষে তিন বছর আগে নিজের স্বপ্নকে নিয়ে কাজ করার সুযোগ হয়। প্রথমে অল্প কিছু মূলধন দিয়ে শুরু করলেও এখন সব মিলিয়ে দুই লাখ টাকার মতো বিনিয়োগ করা হয়েছে তার উদ্যোগে।

“টাঙ্গাইলে আমার নিজ বাড়িতেই আমার ওয়ার্কশপ করেছি। মাসে আমার ত্রিশ থেকে চল্লিশটার মতো অর্ডার আসে। মাসে ২০/২৫ হাজার টাকা আয় হয়। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ছাড়াও মাসে ক্রেতার সংখ্যা ৩০/৪০ জন। গৃহিনী, তরুণী থেকে শুরু করে রান্না করতে পছন্দ করেন এমন নানা ধরনের কাষ্টমার আমার পণ্য নেন, বলে জানান তিনি।

তার বিশেষত্ব নিরামিষে।

তার মুখ থেকেই গল্পটা শোনা যাক: নিরামিষ নিয়ে কাজ করার চিন্তাটা আসে যেহেতু আমি ছোটবেলা থেকেই খুব ভালো রান্না করতে পারতাম, বিয়ের পর সেটা আরও পরিপক্ক হয়েছিল। আমার শ্বশুরবাড়িতে নিরামিষ খাওয়ার প্রচলন, সেই থেকে নিরামিষ রান্নার প্রতি একটা নেশা তৈরি হয়ে যায়। অনেকে নিরামিষ খেতে চান না, কিন্তু সপ্তাহে দুয়েকদিন খাওয়ার অভ্যাস করলে রোগ-ব্যাধি অনেক কমে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। পুষ্টি বিশেষজ্ঞরাও তাই বলেন। তাই এই ধরনের খাবারে ভিন্নমাত্রা আনা, আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করার ভাবনা থেকেই আমার এই উদ্যোগ।

শেফালী কর্মকার জানান, তিনি হাজারের উপর নিরামিষ রান্নার রেসিপি জানেন । মাশরুম দিয়েই দেশি-বিদেশি নিরামিষ রান্নার এত রেসিপি দিতে পারবেন যেটা আর কেউ দিতে পারবেন না,বলে তিনি মনে করেন। প্রচারের অভাবে তিনি সেটা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না বলে কিছুটা দুঃখ আছে তার।

“যেকোন সবজি দেখলে আমার নিজে থেকেই রান্নার আইডিয়া মাথায় চলে আসে , কিভাবে আসে নিজেও তা জানি না। আমাকে সারাদিন রান্না করতে বললেও কোন বিরক্তি আসে না। অদ্ভূত একটা ব্যাপার, রান্নার প্রতি আমার এত ভালোবাসা!“

নিরামিষের পাশাপাশি তার আরও কিছু উদ্যোগ আছে। তার মধ্যে আছে: ভিন্ন স্বাদের অর্গানিক, ক্যামিকেলমুক্ত পনির (নাগা পনির, মশলা পনির, চাট পনির, প্লেইন পনির) । সেই সাথে আছে একটু ভিন্ন স্বাদের আচার (কাঁঠাল আচার, মাশরুম আচার, করমচা আচার, ডুমুর আচার, আনারস আচার, আমলকি-চালতা-বড়ই-তেঁতুল ও নাগা মরিচ আচার)। এছাড়াও আছে আমের বিভিন্ন আচার ও আমসত্ব। এর বাইরে তিনি এক ধরনের ইনস্ট্যাস্ট বেসন তৈরি করেছেন যাতে ২০ থেকে ২২ ধরনের উপাদান দেওয়া, এমনকি লবণ পর্যন্ত। কোন কিছু ফ্রাই করতে হলে শুধুমাত্র পানি ব্যবহারই যথেষ্ট।

উদ্যোক্তা বার্তাকে এই উদ্যোক্তা আক্ষেপ করে বলেন: বিয়েবাড়ি বা কোন পার্টিতে গেলে খুব খারাপ লাগে যখন দেখি মূল খাবারের বাইরে শুধু দই, মিষ্টি আর কোল্ড ড্রিংকস খেয়ে চলে আসতে হয়। নিরামিষের ব্যবহার খুব একটা চোখে পড়ে না। আমি এই ধারণাটা পাল্টাতে চাই। সবজি দিয়ে ইংলিশ, চাইনিজ, ইন্ডিয়ান, দেশি– সব ধরনের খাবার প্রস্তুত করা যায়। এই খাবার স্বাস্হ্যসম্মত, কম ক্যালরির, কম চর্বিযুক্ত, পর্যাপ্ত প্রোটিনযুক্ত এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর।

শেফালী কর্মকার বলেন, “শুরুতে নিন্দুকেরা অনেক কিছুই বলেছে, এখনও বলে। আমার ক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ির পরিমণ্ডল বড় হওয়ায় পারিবারিক উপহাসের শিকারটা বেশিই হতে হয়েছে। তবে এতে আমার কিছু যায় আসে না, আমার স্বামী এবং সন্তানেরা আমার পাশে আছে। তবে আমার ছেলের উৎসাহ এবং সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি ছিল। ওর সহযোগিতা না পেলে আমার এই স্বপ্নটা অধরা থেকে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল।“

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে উদ্যোক্তা শেফালী কর্মকার শেলী বলেন: অচিরেই একই নামে ইউটিউব চ্যানেলে নিরামিষ রান্নার রেসিপি উপস্থাপন করবো। আর গুণগত মান বজায় রেখে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতে অনেকগুলো ভেজিটেরিয়ান রেস্টুরেন্ট চালু করার ইচ্ছা আছে।

আফসানা অভি,
উদ‍্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here