শুভ্রছায়ার স্বত্ত্বাধিকারী মাকসুদা খাতুন সামাজিক পাতায় সকলের কাছে শাহনেওয়াজ মাকসুদা নামেই বেশি পরিচিত। কাজ করছেন অর্গানিক ফুড নিয়ে। ঘরে বসেও আয় করা যায় কথাটি প্রমাণ করেছেন মাকসুদা।
২০২০ সালে ২৫ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে উদ্যোক্তা জীবনে আসেন তিনি। চাকের খাঁটি মধু, গাওয়া ঘি, রকমারি আচার, চালকুমড়ার বড়ি, খেজুর, ড্রাই ফ্রুটস, আখ ও খেজুর গুড়, চিয়াসিড এবং রাজশাহীর আম রয়েছে শুভ্রছায়ার পণ্য তালিকায়।সারাদেশেই পণ্যগুলো যাচ্ছে। পাশাপাশি সৌদি আরব, দুবাই এবং আমেরিকাতেও গেছে উদ্যোক্তা মাকসুদার প্রতিষ্ঠানের মধু এবং কুমড়া বড়ি। আড়াই বছরের পথচলায় অসংখ্য রিপিট কাস্টমার শুভ্রছায়ার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এখন রাজশাহীর গ্রুপগুলোতে বেস্ট কুমড়া বড়ি, ঘি, মধু কার কাছে পাওয়া যাবে এমন পোস্টে শুভ্রছায়ার অনেক ক্রেতাই মেনশন করেন ‘শাহনেওয়াজ মাকসুদা’।
উদ্যোক্তা বার্তাকে মাকসুদা খাতুন বলেন,”আমার সন্তানকে যখন কোচিং-এ নিয়ে যেতাম লক্ষ্য করতাম অনেকে এখন ঘরে বসে কাজ করেই আত্মনির্ভরশীল হচ্ছেন। বিষয়টি আমার খুব ভালো লাগে। দেখতাম আর ভাবতাম আমিও যদি কিছু করতে পারতাম। এভাবে চলতে চলতে আমাদের গ্রাম থেকে মৌয়াল দ্বারা সংগ্রহ করে নেওয়া চাকের খাঁটি মধু আমি একদিন কোচিং-এ নিয়ে আসি। সেদিনই আমার সাড়ে তিন কেজির মতো মধু বিক্রি হয়। এভাবে টুকটাক চলতে-চলতে সারা বিশ্ব যখন করোনা মহামারীতে ভীত তখন আমার বর প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বাইরে বের হতে চাইতেন। কম-বেশি আমাদের সকলের পরিবারেই অন্তত একজন সদস্য হলেও ওইসময় আমরা লক্ষ্য করেছি প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বের হচ্ছেন। কী করে তার অপ্রয়োজনে বের হওয়া বন্ধ করা যায় সে চিন্তা থেকে আমি ফেসবুকে পেজ চালুর কথা ভাবলাম। পেজ চালু করে আমার বরকে সব দায়িত্ব দিয়ে দিলাম যাতে ও এই কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আর অপ্রয়োজনে বের না হয়। এভাবে ২৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে প্রোডাকশনে নামি। মধুর সাথে যুক্ত করলাম কুমড়া বড়ি, আচার, ঘি ইত্যাদি।
“আল্লাহর রহমতে আমাদের ওইসময় থেকেই বেশ ভালো অর্ডার আসতে থাকে। আমরা ঘরে পণ্য রেডি করে প্যাকেট করতাম, আর ও যেহেতু বাইরে বের হতে পছন্দ করতো খুব খুশি হয়েই সুন্দরভাবে সকল ক্রেতাকে পণ্য পৌঁছে দিতো। উদ্যোক্তা জীবনে আসার পর বিভিন্ন সময় আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীরা সমালোচনা করেছেন কিন্তু আমার বর শুরু থেকে আমার সাথে রয়েছেন। তিনি সকল কাজে আমাকে সহযোগিতা করেন।আমি যাতে এগিয়ে যেতে পারি তাই সাহস দেন। প্রতিটি নারী উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে পাশের মানুষটার সাপোর্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যা আমি আমার উদ্যোক্তা জীবন দেখে উপলব্ধি করতে পারি।”
বর্তমানে মাকসুদার সাথে তিনজন সহযোদ্ধা কাজ করছেন। এছাড়াও কিছু মৌয়াল এবং আমের মৌসুমে আরো কিছু লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টিহয় শুভ্রছায়াতে। ড্রাই ফ্রুটস, খেজুর, চিয়াসিড এই পণ্যগুলো অন্য স্থান হতে পাইকারি মূল্যে সংগ্রহ করে আনেন উদ্যোক্তার স্বামী শাহনেওয়াজ হোসেন খান। বাকি পণ্যগুলো তারা এবং তাদের সহযোদ্ধাদের সহযোগীতায় তৈরি হচ্ছে।
উদ্যোক্তা মাকসুদা খাতুনের জন্ম থেকে বেড়ে উঠা পবা উপজেলার মাড়িয়া গ্রামে। বৈবাহিক সূত্রে বর্তমানে তিনি রাজশাহী নগরীতে বসবাস করছেন। শাহ্ মখদুম কলেজ থেকে ডিগ্রি শেষ করেছেন এই উদ্যোক্তা। অনবদ্য প্রচেষ্টায় শুভ্রছায়া এখন বিশ্বস্ততার একটি নাম।
তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা