বিশ্বজুড়েই এসএমই খাতকে বলা হয় অর্থনীতির প্রাণ। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও এ খাতের উন্নয়নে নেওয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ।
বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শিল্প খাতের অবদান ৩৭.০৭ শতাংশ, যেখানে এসএমই খাতের অবদান প্রায় ২৮ শতাংশ। অধিক জনসংখ্যা এবং সীমিত সম্পদের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
শ্রমনিবিড় ও স্বল্প পুঁজিনির্ভর হচ্ছে এসএমই খাত। উৎপাদন সময়কাল স্বল্প হওয়ায় জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এমএসএমই-এর অবদান অনেক। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও এমএসএমই খাতের বিকাশ ও উন্নয়নে রয়েছে অপার সম্ভাবনা।
বর্তমানে ছোট ছোট কলকারখানা স্থাপনেই এখন উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বেশি। এর ফলে দেশে দিন দিন ছোট কলকারখানার সংখ্যা বাড়ছে। গত এক দশকে এ ধরনের কারখানার সংখ্যা বেড়েছে সাড়ে সাত হাজারের বেশি। নিজের জমানো টাকা, স্বামী বা স্ত্রী কিংবা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধারকর্জ নিয়েই ছোট কলকারখানায় বিনিয়োগ করেন ছোট ও নবীন উদ্যোক্তারা।
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরো (বিবিএস)’র ‘উৎপাদন শিল্প জরিপ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত এক দশকে দেশে ছোট কারখানার সংখ্যা বেড়েছে ৭ হাজার ৬৪০টি। ফলে সারা দেশে বর্তমানে ছোট কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৩০৬টিতে। দেশব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গড়ে ওঠা এসব কারখানায় পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল পণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য, বেকারি পণ্য উৎপাদিত হয়। এ ছাড়া রাইস মিল তথা চালকলসহ নানা ধরনের ছোট কারখানাও রয়েছে অনেক।
করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দ্বিতীয় দফায় ১৫০০ কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এসএমই ফাউন্ডেশনের ঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে এসএমই উদ্যোক্তাদের অনুকূলে ইতোমধ্যে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এসএমই খাতের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৪০ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে, যাতে এসএমইরা সহজে ঋণ পেতে পারেন, সে লক্ষ্যে গাইডলাইন তৈরি করে বিতরণ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক গঠিত জেলা এসএমই ঋণ বিতরণ মনিটরিং কমিটির নিয়মিতভাবে সভা আয়োজনে সহযোগিতা করা হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এসএমইদের আইসিটির অধিকতর ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য অনলাইন প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে এসএমই পণ্যের বাজার সংযোগ ও সম্প্রসারণ এবং চলমান রাখার লক্ষ্যে জাতীয় এসএমই মেলা, তিনটি আঞ্চলিক এসএমই পণ্য মেলা এবং হেরিটেজ হ্যান্ডলুম ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এসএমই ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ২০ জন সম্ভাবনাময় এসএমই উদ্যোক্তাকে নেপালের ‘নেপাল চেম্বার এক্সপো’তে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া টিএফও কানাডা-এর অর্থায়নে এসএমই ফাউন্ডেশনের সার্বিক সহযোগিতায় ১৪ জন সফল নারী উদ্যোক্তাকে ‘নিউইয়র্কে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড শো’তে অংশগ্রহণের জন্য বাছাই করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ফাউন্ডেশনের নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৫০টি দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৯৯ ভাগ শিল্প ও ব্যবসা কুটিরসহ এমএসএমই খাতের আওতাভূক্ত। এ খাত দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ৭০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে। মোট শিল্প কর্মসংস্থানের শতকরা ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ সৃষ্টি হচ্ছে এসএমই খাতে। এসএমই খাত মোট অভ্যন্তরীণ শিল্পপণ্য চাহিদার শতকরা ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ যোগান দিয়ে থাকে।”
দেশে বর্তমানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) কারখানার সংখ্যা সাড়ে ২৬ হাজার। আর এখন ভারী শিল্প আছে প্রায় ২ হাজার ৮৫৬টি। সারা দেশে শিল্পকারখানায় প্রায় ৫৪ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে সাড়ে ১০ লাখ শ্রমিক ছোট ছোট কারখানায় ও পাঁচ লাখ মাঝারি শিল্পে কাজ করেন। বাকি প্রায় ৩৬ লাখ শ্রমিক বড় শিল্পে কাজ করেন, যার সিংহভাগই পোশাকশ্রমিক।
এমএসএমই খাতের উন্নয়ন বাদ দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে এসডিজি-২০৩০ ও ভিশন ২০৪১-এর সফল বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কারণ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও টেকসই শিল্পায়নের মূল চাবিকাঠি এমএসএমই খাত। একমাত্র এমএসএমই খাতের উন্নয়ন হলেই কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্যবিমোচন সম্ভব।
সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা