উদ্যোক্তা নূর নাহার তৃপ্তির পড়াশোনা বাংলা সাহিত্যে, মাস্টার্স। ‘এইম ইন লাইফ’ রচনা লিখতে গিয়ে সবসময় দ্বিধা কাজ করলেও ছোটবেলা থেকে নিজের মধ্যে ভীষণ একটা জেদ কাজ করতো যে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে হবে। পরনির্ভরশীল হবেন না, কিছু একটা করবেন। নিজে সেই কিছু করার উদ্যোগ শুরুর আগে চাকরি করেছেন হসপিটালিটি ম্যানেজম্যান্টে বেশ কয়েক বছর।
শিক্ষা জীবন থেকেই চাকরি করলেও বিয়ের পর সংসার ও সন্তানের জন্য ৮/৯ ঘণ্টা সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। বাচ্চা হওয়ার পরে কাজ ছেড়ে দিলে বেকার হয়ে যাওয়া তাকে মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত করে ফেলে। তবে, নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি এমন কিছু করবেন যেখানে সময়ের বাঁধাধরা নিয়ম নেই, কিন্তু নিজেকে তুলে ধরা যায়।
নানামুখি চিন্তার ফসল হিসেবে শুরু করেন ‘সুরঞ্জনা’। ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ফেইসবুক মার্কেট প্লেসে পেইজের মাধ্যমে উদ্যোগ শুরু করলেও অফলাইনে কাজ শুরু করেন ২০০০ সালে। ছোট দুই বাচ্চাকে সময় দিয়ে নিজের কাজের জন্য সময় বের করে দেশীয় পণ্যের ‘সুরঞ্জনা’ নিয়ে তিনি এগিয়ে চলেছেন।
মূলত নিজস্ব ডিজাইনের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, ওড়না, স্কার্ট, টপস, পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের শাড়ি, ফ্রক, বিছানার চাদর, পর্দা তার পণ্য। এছাড়া তাঁতিদের নিজস্ব ডিজাইনের জামদানি, মনিপুরী, তাঁতের শাড়িও পাওয়া যায় ‘সুরঞ্জনা’য়।
তিনি মনে করেন, কোন কাজই সহজ নয়– আবার সহজও। ২০১৬ ‘র দিকে অনলাইন বিজনেস এতো জনপ্রিয় ছিল না, পেইজও কম ছিলো। শুরুতে কাঁচামালের সোর্স করা, কারখানা সেট আপে, ক্রেতাদের আস্থা আনতে অনেক কাজ করতে হয়েছে। আর দুটো ছোট বাচ্চাকে যেহেতু একাই সামলাতে হয়েছে, তাই কাজের গতি কমিয়ে দিতে হয়েছে সময় সময়।
তিনি বলেন: কাজের জায়গায় এখনও দক্ষ কারিগরের অভাব, সততার অভাব রয়েছে। এদের সাথে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। তারপর আবার গুছিয়ে উঠতে শারীরিক মানসিক চাপ পড়ে। এখন তো অনেক অনেক উদ্যোগ। চ্যালেঞ্জ বেড়েছে, তবে এটাকে পজিটিভ হিসেবে দেখে কাজ করতে পারাকে নিজের সক্ষমতা হিসেবে দেখি।
উদ্যোক্তা তৃপ্তির সরাসরি স্টুডিওতে দুই জন কর্মী রয়েছেন। স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট ও দর্জি সেট আপে আরও ৬/৭জন কাজ করেন তার উদ্যোগ ‘সুরঞ্জনা’য়।
তিনি যেহেতু এখনও অনলাইন বেইজ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন, দেশের ভেতর যে কোন জেলা সদরে তার পণ্য পৌঁছে যায় ক্রেতার কাছে। এছাড়া দেশের বাইরে তিনি নিয়মিত পণ্য পাঠিয়ে থাকেন। ইউ এস এ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, ইউকে, জাপান, দুবাই নিয়মিত তার পণ্য যায়।
উদ্যোক্তা জীবনের শুরু থেকে হাসব্যান্ড ছাড়াও পরিবারের অন্য সদস্য, বন্ধু শুভাকাঙ্ক্ষীদের উৎসাহ ও সহযোগিতা পেয়ে এসেছেন।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় তিনি জানান, দেশীয় পণ্যের বাজার দেশের বাইরে কিভাবে সম্প্রসারিত করা যায় সে চেষ্টা তার থাকবে। “আর আর্ট ক্রাফট নিয়ে একটা ম্যাগাজিন বের করার ইচ্ছে অনেকদিন ধরে। আমাদের দেশের ক্রাফট নিয়ে একটা ধারণা পাওয়া যায়, আবার বাইরের খবরও জানতে পারি, কাজগুলো তুলে ধরতে পারি– এমন কিছু। এটা সুরঞ্জনা উদ্যোগের পাশাপাশি আর একটা স্বপ্ন।”
মাসুমা শারমিন সুমি
উদ্যোক্তা বার্তা