নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সংযোগ বিশেষ করে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিক্রয়ে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে যাত্রা শুরু করেছে এসএমইএফ সাপ্লায়ার্স প্ল্যাটফর্ম ফর উইমেন এন্ট্রিপ্রেনার্স।
আজ বৃহস্পতিবার এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে এই কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভূটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়াং টেমবন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান।
নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় বিশ্বব্যাংক ও এসএমই ফাউন্ডেশন প্ল্যাটফর্মটিতে এ তথ্য সন্নিবেশিত করবে। এই প্ল্যাটফর্ম নারী-উদ্যোক্তাদের পণ্যের বাজার খুঁজে পেতে বিশেষ করে কর্পোরেট হাউসগুলোতে তাদের পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি, কর্পোরেট হাউসগুলোকেও পণ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।
এছাড়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নারী উদ্যোক্তাদের জন্য তাদের ঋণ বিষয়ক তথ্য এই প্ল্যাটফর্মে উপস্থাপন করতে পারবে। এর ফলে প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে নারী উদ্যোক্তা, কর্পোরেট হাউস ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সব পক্ষই উপকৃত হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে প্রায় ১০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং প্রায় ৬৮ লাখ কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে; যার ৭.২১ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে পরিচালিত। নারীর জন্য সহায়ক কর্মপরিবেশ তৈরি এবং নানাবিধ প্রণোদনার কারণে দেশে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। তবে বাংলাদেশে কর্পোরেট সাপ্লাই চেইনে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ খুবই কম।
অন্যদিকে, বিশ্বব্যাপী সকল এসএমই উদ্যোগের এক-তৃতীয়াংশ নারী উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন। ফরচুন-৫০০ পরিচালিত ৮০টি বহুজাতিক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি বছর গড়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্রয় বিক্রয়ের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সাথে হয়ে থাকে। কিন্তু, বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তারা কর্পোরেট ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে যুক্ত নেই বললেই চলে।
গুণগতমানসম্পন্ন যুৎসই পণ্য উৎপাদন করতে না পারা, প্রয়োজনীয় পুজিঁর অভাব, উপযুক্ত বাজারের সাথে সংযুক্ত হতে না পারা, কর্পোরেট হাউসের চাহিদা সম্পর্কে তথ্যের অভাব, অসম বাজার প্রতিযোগিতাসহ নানা কারণে নারী-উদ্যোক্তারা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত হতে পারছেন না।
অপরদিকে, প্রয়োজনীয় প্ল্যাটফরম না থাকা, নারী উদ্যোক্তাদের সাথে কাজ করতে সক্ষমতার ঘাটতি, তাদের পণ্য সম্পর্কে তথ্যের অভাব, নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করার সুদূরপ্রসারী ফলাফল উপলব্ধি করতে না পারার কারণে কর্পোরেট হাউসগুলোও নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য ক্রয় করতে পারে না।
এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, পণ্যের বাজার সংযোগ বা বাজারজাতকরণ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অন্যতম প্রধান একটি বাধা। ব্যবসা শুরুর প্রথম পর্যায়ে এই সমস্যা আরো প্রকট। গবেষণায় দেখা যায়, ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ৩৭ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা পুঁজি সংকটের কথা উল্লেখ করলেও ২০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা তাদের প্রধান সমস্যা হিসেবে পণ্যের বাজারজাতকরণকে চিহ্নিত করছেন।
উল্লেখ্য, এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রচেষ্টায় দেশের সরকারি ক্রয়ের অন্তত ২৫ শতাংশ এসএমই খাত থেকে সংগ্রহ করার বাধ্যবাধকতা রেখে শিল্প মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সাব-কন্ট্রাকটিং আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আইনটি কার্যকর হলে এসএমই খাতের জন্য পণ্যের বাজারের ব্যাপকতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে এসএমই উদ্যোক্তা, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা