ফারিহা ফেরদৌস বর্ষা অল্প বয়সেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আন্তর্জাতিক মানের মেকআপ আর্টিস্ট এবং হেয়ার এক্সপার্ট হিসেবে। ২০১৯ সালে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের সেরা পনেরোর তালিকায়ও ছিলেন বর্ষা। গুণী এই তরুণী ছোটবেলা থেকে পড়াশোনাতেও ছিলেন ভীষণ মেধাবী। পড়াশোনা, বিউটি সেক্টর, মডেলিং, বিভিন্ন ব্রান্ডের সাথে কাজ– সবমিলিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখনকার তরুণ প্রজন্মের কাছে ফারিহা ফেরদৌস বর্ষা একটি অনুপ্রেরণার নাম।
মা কাজী তৃষ্ণা ছিলেন মেকআপ আর্টিস্ট। মায়ের হাতেই হয়েছিলো বর্ষার মেকআপে হাতেখড়ি। এরপর নিজে বারবার চেষ্টায় অভিজ্ঞ হয়ে উঠেন। হঠাৎ মা একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ায় বর্ষা নিজ হাতে সেদিনের কনেকে সাজান। বর্ষার কাজ দেখে সকলে মুগ্ধ হন, প্রশংসা করেন। এরপর থেকে অনেকে বলতে থাকেন, আমরা বর্ষার কাছ থেকে মেকওভার নিতে চাই। মেয়ের ওপর মানুষের আস্থা দেখে মা ভীষণ খুশি, বর্ষাও সকলের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে ধীরে-ধীরে বিউটি সেক্টরে প্রবেশ করেন।
মাঝে-মাঝে ব্রাইড সাজানোর সময় তার মনে হতো, আমার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থাকাও দরকার। সেই ভাবনা থেকে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর পদ্মা আবাসিক এলাকার দুই নং রোডের ২৫৯ নম্বর বাসায় ‘স্টুডিও বাই ফারিহা বর্ষা’র যাত্রা শুরু। পড়াশোনাতে ভালো ফলাফল করায় স্কলারশিপের টাকা, নিজের জমানো কিছু এবং বাবা-মায়ের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন বর্ষা। মাসে বিশ জনের বেশি কনে আসেন বর্ষার প্রতিষ্ঠানে। এখানে মূলত ব্রাইডাল মেকওভার এবং হেয়ার স্টাইলিং এর কাজ করা হয়। বর্তমানে এই উদ্যোক্তার সাথে চারজন সহযোদ্ধা কাজ করছেন। সামাজিক পাতায় ‘স্টুডিও বাই ফারিহা বর্ষা’ নামে পেজও চালু করেছেন তিনি।
মেকআপের কাজে আরও পারদর্শী হওয়ার লক্ষ্যে ইন্টারন্যাশনাল মানের জনপ্রিয় মেকআপ আর্টিস্ট সেলিনা মনির-এর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বর্ষা। বিউটি এক্সপার্ট হতে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকেন তিনি। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা ৬৫ জন নারীকে নিয়ে সফলভাবে একটি কর্মশালা শেষ করেন বর্ষা।
উদ্যোক্তা বার্তাকে ফারিহা ফেরদৌস বর্ষা বলেন, “ছোটবেলা থেকেই বিউটি সেক্টরের প্রতি আমার ঝোঁক ছিল। সেখান থেকেই নিজেকে মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে গড়া। আমি চাই আমার মাধ্যমেও অনেক উদ্যোক্তা সৃষ্টি হোক। তাই স্টুডিওর পাশাপাশি প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকি আমি। আমার সাথে বর্তমানে যে চারজন কাজ করছেন, তারা সকলেই আমার স্টুডেন্ট।”
মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৯ এর জার্নি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন: ভার্সিটির ফ্রেন্ডরা আমাকে বলতো, তুইতো মাঝে-মাঝে মডেলিং করিস; এই বিষয়গুলোতে তুই পারদর্শী, এই প্রোগ্রামে তুই অংশ নে, নিশ্চয়ই অনেক কিছু শিখতে পারবি। তাদের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমি অডিশন দেই এবং সিলেক্টেড হয়ে যাই। রাজশাহী থেকে আমিই নির্বাচিত হয়েছিলাম। এরপর সেখানে সেরা পনেরো পর্যন্ত আমার জার্নি ছিলো। অনেক কিছু শিখেছি যেগুলো শুধু মডেলিং ক্যারিয়ার গড়তে আমাকে সহযোগিতা করবে না, বরং একজন নারী হিসেবে সম্মানের সাথে কী করে আমি চলবো, কথা বলবো– সবকিছু তারা আমাদের শিখিয়েছেন। এসবই আমার ভবিষ্যতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ফারিহা ফেরদৌস বর্ষার জন্ম থেকে বেড়ে উঠা নওগাঁর মহাদেবপুর এলাকায়। তবে পড়াশোনা এবং কাজের সুবাদে রাজশাহী এবং ঢাকাতেই বেশি অবস্থান করতে হয় তার। বর্তমানে রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বর্ষা অনেক ব্যস্ততার মাঝেও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকেন। স্বপ্নবাজ এই তরুণী অসহায় ছেলেমেয়েদের সহযোগিতাতেও এগিয়ে আসেন সুযোগ ও সাধ্যমতো। এছাড়াও তিনি একজন পেট-লাভার। বিভিন্ন প্রাণীদের নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থার পাশেও দাঁড়িয়েছেন বর্ষা।
আগামীতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোর্স করে নিজের দক্ষতা বহুগুণ বাড়াতে চান তিনি। সেসঙ্গে বিউটি এক্সপার্ট হতে আগ্রহীদের বৃহৎ পরিসরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যেও এগিয়ে যাচ্ছেন ফারিহা ফেরদৌস বর্ষা। খুব শিগগিরই বর্ষার নিজস্ব মেকআপ ব্র্যান্ড লঞ্চ হওয়ার কথা রয়েছে।
তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা,রাজশাহী
Best wishes for you.