নাজমা হোসাইন পুরোদস্তুর একজন গৃহিনী। একসময় বুটিকসের সাথে জড়িত থাকলেও চার সন্তানের জন্য তা ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি বাড়িতে মনোনিবেশ করেন।
নিজের ভাললাগার কাজকে বিসর্জন দিয়ে চার মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকেই মনোযোগী হোন নাজমা হোসাইন। বড় মেয়ে স্বামীসহ ইউএসএ এর নাগরিক, সেজো মেয়ের স্বামী একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার,বর্তমানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রজেক্টে স্ট্রাকচারাল ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন। মেজো মেয়ে আই এফ আই সি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যার স্বামী বাংলাদেশ ব্যাংকের জয়েন্ট ডিরেক্টর আর ছোট মেয়ে এসএসসি পরিক্ষার্থী। এই নিয়েই নাজমা হোসাইনের সংসার জীবন।
২০২০-এ করোনা মহামারীতে পুরো পৃথিবী যখন থমকে যায়, সবাই গৃহবন্দী হয়ে পড়ে অলস সময় কাটাচ্ছিলেন, তখন নাজমা হোসাইন অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে আচার বানাচ্ছিলেন অতি উৎসাহের সাথে। পরিচিতমহলে তার আচারের বেশ সুনামও আছে। নাজমা হোসাইনের সেজো মেয়ে ফারহানা সঞ্জি ভাবলেন, মায়ের আচার বানানোর গুণটা অচেনা-অজানা মানুষদেরও জানানো উচিৎ। সেই ভাবনা থেকেই সামাজিক পাতায় একটি পেইজ চালু করলেন এবং নাম দিলেন ”মায়ের হাতের আচার”। যেহেতু আগে থেকেই তাদের বন্ধুমহলে মায়ের আচারের সুনাম ছিলো, তাই সবাই অতি আগ্রহ নিয়ে অনলাইন পেজে ঢুঁ দিতে শুরু করেন। সবার এই উৎসাহটা খুব অল্প সময়েই বিজনেস হিসেবে পেইজটা দাঁড় করাতে বড় ভূমিকা রাখে। সবার ইতিবাচক সাড়ায় ২০২০ এর জুন মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে মা-মেয়ে আচারের কার্যক্রম শুরু করেন।
আচার বানানোর রেসিপি এবং শ্রম সবটা মা নাজমা হোসাইনের। আর অনলাইন পেজ মেইনটেইন, কাস্টমার ডিলিং, প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফিসহ মার্কেটিং কাজের দেখভালের দায়িত্ব নেন মেয়ে ফারহানা সঞ্জি। মূলত মায়ের ভেতরে থাকা গুণকে প্রকাশ্যে এনে গ্রামীণ হারিয়ে যাওয়া আচারের স্বাদ ফিরিয়ে আনতেই এই ভিন্ন উদ্যোগটি নিয়েছিলেন ফারহানা।
সিজনভেদে বিভিন্ন সময়ে আম, আমড়া, আমলকি, চালতা, জলপাই, বরই এর আচার হয়ে থাকে। এছাড়া সারা বছর আলু বোখারার চাটনি, রসুনের আচার, তেঁতুলের আচার এবং ঝালপ্রেমীদের জন্য বোম্বাই মরিচের আচার থাকে সবসময়। সবচেয়ে বেশি চাহিদা আমসত্ত্ব, মোরব্বা, ম্যাশড আচার, চালতার স্কুল গেট আচার, বরই বার্মিজ আচার, আলু বোখারার চাটনি, জলপাই ম্যাশড এবং আমলকির মোরব্বার। কক্সবাজার থেকে শুরু করে রংপুরেও পৌঁছে গেছে মায়ের হাতের আচার। সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, গোপালগঞ্জসহ নানা জেলায় নিয়মিত ক্রেতা আছে তাদের।
ফারহানা সঞ্জি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে মার্কেটিং-এ বিবিএ করেছেন। তারপর ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মার্চেন্টডাইজার হিসেবে কাজ করেছেন এ এফ টেক্সটাইল নামে একটি বিদেশি বায়িং হাউজে। এভাবে নিজেকে দক্ষ করে তুলেছিলেন তিনি।
ব্যবস্থাপনায় সেই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সঞ্জি মায়ের সুপ্ত প্রতিভাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, “প্রতিটি ঘরের ডাইনিং এ ‘মায়ের হাতের আচার’ এর জার থাকা চাই। ‘মায়ের হাতের আচার’ এর আচারকে প্রতিটি ঘরের একটি কমন আইটেম করে তুলতে চাই। আচারের হারানো স্বাদ কেবল মা-খালাদের হাত ধরেই আসে। সেটা বিলীন হতে দেবো না।”
তিনি বলেন: “সফলতা এসেছে কিনা জানি না, তবে যে ভালোবাসা পেয়েছি এবং মাকে একজন ভালো আচার রাঁধুনি হিসেবে পরিচয় করাতে পারছি, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ সবার কাছে।”
সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা