ফরিদপুর শহরের বাইতুল আমান গ্রামের মেয়ে ফারজানা খানম জিতু। বাবা গ্রামে কাপড় ব্যবসায়ী হিসেবে বেশ সুপরিচিত। জিতুর শৈশব এবং কৈশোর কাটে গ্রামীণ পরিবেশে। ফরিদপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা শেষ করে ঢাকার প্রাইম ইউনিভার্সিটি থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং করেছেন। বর্তমানে তিনি ফ্রিল্যান্সার ভয়েস এ্যাক্টর হিসেবে বেসিক টিভি চ্যানেলে কাজ করছেন। সেসঙ্গে একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে গেস্ট ইন্সট্রাক্টর তিনি।
ব্র্যাকের আড়ং ব্র্যান্ডের একজন সেলস এসোসিয়েট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন জিতু। তারপর বেশকিছু শো-রুমে কাজ করেন। ২০০৭ সালে ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিতে অফিস সহকারি হিসেবে কাজ শুরু করে অফিস ম্যানেজার পর্যন্ত পদোন্নতি পান। এরপর তিনি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হন, পাশাপাশি টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে হেড অফ ডিপার্টমেন্ট হিসেবে কাজ করেন। এরপর তিনি একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে প্রথমে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর, এরপর সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর এবং পরবর্তীতে ডিপার্টমেন্ট চিফ ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কাজ করেন৷
করোনাকালীন সময়ে যখন সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়, ঠিক তখন জিতু তার চাকরি থেকে সরে আসেন৷ লকডাউনের অবসর সময়ে চেষ্টা করেন নিজে কিছু একটা করার। ছোটবেলা থেকেই সেলাইয়ের প্রতি ছিল এক অন্যরকম ঝোঁক। নিজের ইচ্ছা এবং সাহসকে সাথে নিয়ে ২০১৩ সালে সম্পূর্ণভাবে একা কাজ শুরু করেন। মাত্র ৭০০ টাকা দিয়ে কিছু কাপড়, সুতা এবং চুড়ি কিনে তার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন জিতু৷
উদ্যোক্তা ফারজানা জিতু কাজ করছেন মূলত হাতের কাজের থ্রি পিস, ওয়ান পিস, বেবি কাঁথা, কুশন কভার এবং হাতে বানানো সুতা ও মেটালের গহনা নিয়ে৷ কোন ফ্যাক্টরি কিংবা কারখানা এখনও দেওয়া সম্ভব না হলেও জিতুর সাথে কাজ করছেন প্রায় অর্ধশত কর্মী। তারা প্রত্যেকেই কাপড় নিয়ে গিয়ে তাদের অবসর সময়ে নিজের বাসা থেকেই কাজ করে দেন। জিতু যে কর্মীদের সহযোগিতায় কাজ করে থাকেন, তারা কমবেশি সবাই নিম্নমধ্যবিত্ত, দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের। অনেক মেয়েই ডিভোর্সি, অনেকের স্বামী মারা গেছেন কিংবা অনেকেই খুব কষ্ট করে তাদের জীবন চালাচ্ছেন। এরকম মেয়েদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতেই ফারজানা জিতুর ভিন্নধর্মী উদ্যোগ৷
জিতু বলেন, “সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদেরকে নিজেদের একটা পরিচয় তৈরি করে দিতে চাই। Rose Petals একটা ব্র্যান্ড হবে, যে ব্র্যান্ড শুধুমাত্র বড় লোকের জন্যই নয়, যে ব্র্যান্ড ধনী-গরীব সকলের জন্যই হবে।”
যেহেতু জিতু তার উদ্যোগ অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালনা করেন, তাই ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে তাকে যুক্ত থাকতে হয়। এর মাধ্যমেই কানাডা, বাহরাইন, সৌদি আরব, আমেরিকাসহ বেশ কিছু দেশে তিনি পণ্য পাঠিয়েছেন।
কানাডার একজন রিপিট কাস্টমার আছেন যিনি নিয়মিত পণ্য নেন এবং একবারে ৩০/৪০ টা ড্রেস অর্ডার করেন। এছাড়াও দেশের মধ্যে শ্যামলী স্কয়ার, রাপা প্লাজা, জেনেটিক প্লাজা, উত্তরার কিছু শোরুমে যাচ্ছে তার পণ্য। দেশের বেশ কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সেলাররাও তার পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। তাছাড়া অনলাইন পেজ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের ৬৪ জেলাতেই জিতুর পণ্য পৌঁছে গেছে৷
তিনি তার উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন: উদ্যোগ যেহেতু নিয়েছি এবং এই উদ্যোগ নিয়ে এতদিন কাজ করে যাচ্ছি, তাই উদ্যোগটা আমার একটা স্বপ্ন। যে স্বপ্ন আমি ঘুমিয়ে দেখি না, জেগে দেখি। আর জেগে দেখা স্বপ্নকে আমি বাস্তবে রূপ দিতে চাই।
“প্রথমে তো অবশ্যই আমি একটা শোরুম করবো এবং ধাপে ধাপে আমার পণ্যগুলো পৌঁছে যাবে বিশ্বের প্রতিটি কোণায়,” এরকমই আশা তার।
তিনি বলেন, ‘‘উদ্যোক্তা শব্দটা আজকাল একটা ট্রেন্ড হয়ে গেছে। উদ্যোক্তা আর ব্যবসায়ীর মধ্যে পার্থক্য বোঝে না সবাই। এই ট্রেন্ড থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কাজকে ভালবাসতে হবে, সততা থাকতে হবে কাজের প্রতি, তাহলে সফলতা ধরা দেবে।”
সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা