উদ্যোক্তা আঁখি ভদ্র পড়াশুনো করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছোটবেলার স্বপ্ন ছিলো সাবলম্বী হওয়ার, অর্থনৈতিক ভাবে, সামাজিক ভাবে নিজের পরিচয় তৈরী করা। পড়াশুনা করতে করতেই তিনি চাকরী শুরু করেন একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। তারপর প্রায় ১২ বছর যাবত একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে এখনো কর্মরত আছেন। লম্বা সময়ে চাকরী করতে গিয়ে উদ্যোক্তার মনে হলো নিজে কিছু করতে হবে। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দেশীয় পণ্যের প্রতি তথা শাড়ির প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা থেকেই এই সেক্টরে কাজ করার কথা ভাবছিলেন।
উদ্যোক্তা আঁখির এই উদ্যোগের শারথী হলেন তারই সহকর্মী-বন্ধু শ্রাবনী জলি। তিনি যেহেতু টেক্সটাইল নিয়ে পড়াশুনা করেছেন তাই তার নানান আইডিয়া এবং পরিকল্পনার সাথে উদ্যোক্তারও মিলে যেতে থাকলো। তখনই উদ্যোগ নেন কাজে নেমে পড়ার। তারা মূলত দেশী তাঁতীদের হাতে তৈরী(হ্যান্ডলুম) সব পণ্য নিয়েই উদ্যোগ শুরু করেছেন, তবে এই মুহুর্তে তারা বিশেষ ভাবে নজর দিচ্ছেন বাঙালীর চিরন্তন ভালোবাসা, শাড়ির দিকে। তাদের নিজস্ব ডিজাইনের শাড়িই বেশী তৈরী হচ্ছে।
বাঁধা বলতে প্রচুর উদ্যোক্তা এখন চারপাশে এবং তারা নিশ্চই সবাই ভালো কাজ করছেন, কিন্তু এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো উদ্যোক্তার জন্য। লম্বা সময় ধরে যারা উদ্যোক্তা তাদের সাথে একই জায়গায় কাজ করে ক্রেতার আস্থা অর্জন করতে পারবেন কিনা সেই ভাবনা ছিলো বরাবরই। তবে কখনই পণ্যের মানে কোনোরকম ছাড় দেননি বলে সরাসরি ক্রেতাদের প্রশংসা পেয়ে মনে হলো প্রাথমিক বাঁধাটা উতরে যেতে পেরেছেন। যেহেতু তাদের কাজটাই দেশীয় তাঁতীদের প্রমোট করা, তাই উদ্যোক্তা এই তাঁতশিল্পীদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরী করেছেন, যারা আমাদের ভাবনা এবং তাদের শিল্পকে সমন্বয় করে একেকটি পণ্য উপস্থাপন করছে ক্রেতাদের সামনে। উদ্যোক্তা এখন বেশ গর্ব নিয়ে বলতে পারেন তারা সকলে তাদের সহকর্মী।
সারাদেশেই হোম ডেলিভারির ব্যবস্তা রেখেছেন সেই সাথে দেশের বাইরেও বিভিন্ন জায়গা যেমন আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এসব জায়গায় তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রাহক তৈরী হয়েছে। শুরুতেই বলেছি তার সকল উদ্যেগে তার বন্ধু শ্রাবনী জলির ভূমিকা তাকে ভাবতে শিখিয়েছে, তারপর উভয়ের পরিবারের সমর্থনে তারা পথ চলছেন।
নিজে কিছু করাটা তো অবশ্যাই প্রয়োজন তারপরও উদ্যোক্তা জানান, ‘এখন আমাদের ভাবনা মোড় নিয়েছে বাংলাদেশের তাঁত শিল্পকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার দিকে। অনেক তাঁতী তাদের যোগ্য সম্মানী পাচ্ছেন না বলে তাঁত বন্ধ করে অন্য পেশায় নিযুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছেন। আমরা তাদের ফিরিয়ে আনতে চায়। তাঁতীরা যেন তাদের বংশপরম্পরায় পাওয়া শিল্পটিকে সম্মানের সাথে ধরে রাখতে পারেন এটি এখন আমাদের স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবাই পাশে থাকলে নিশ্চই আমরা একদিন একটু করে হলেও স্বপ্ন ছুঁতে পারবো।’
তরুণদের জন্য তার পরামর্শ হলো অবশ্যই নিজের জন্য কিছু করতে হবে সেই সাথে সাথে দেশের জন্য এমন কিছু করা যেনো বাংলাদেশের হারানো গৌরবের বিষয়গুলোকে ফিরিয়ে আনা যায়।
মাসুমা সুমি,
উদ্যোক্তা বার্তা