মেডিকেল কলেজে ১৪০০ পিঠা, আবার অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে ২২০০ এভাবেই প্রতিদিন বিভিন্ন যায়গা হতে ৩ থেকে ৪ টি বড়-বড় অর্ডার থাকছেই। রাতে কখনো দু’এক ঘন্টা ঘুমানোর সুযোগ পাচ্ছেন আবার কখনো না ঘুমিয়েই চলছে রাতভর পিঠা তৈরি কাজ। এই দৃশ্য শুধু শীত কেন্দ্রীক নয় রাজশাহীর কন্যা নুরজাহান আরা রানীর হেঁশেলে এই দৃশ্য প্রতিদিনের।
মালপোয়া, পাটিসাপটা, নকশি, দুধ পুলি, হৃদয় হরণ, বউ সোহাগি , ঝিনুক পিঠা, ডিম পিঠা সহ দেশীয় আরো নানা স্বাদের ঐতিহ্যবাহী পিঠার সাথে যুক্ত করেছেন নিজের সৃষ্টি ‘দুধ মনমোহন পিঠা’।
বিশেষ এক ধরনের চালের গুড়ির সাথে দুধ এবং অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে দুধমনমোহন। যা প্রতি পিস বিক্রি করছেন একশত টাকায়।
বাংলাদেশের গ্রামগুলোর মতই শহরাঞ্চলেও আজ-কাল পিঠার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। শহুরে জীবনের কর্মব্যস্ততার মধ্যে একটুখানি নিজের দেশের ঐতিহ্যের কাছাকাছি বা পরিবারের সদস্যদের সাথে কিছু সময় একসাথে কাটানোই এর মূল কারণ। এসব কারণেই শহরেও বর্তমানে বিভিন্ন পিঠা উৎসব, পিঠার মেলা আয়োজন করা হয়। আয়োজনগুলোয় মানুষজনও ছুটে যায় দেশের ঐতিহ্যের টানে।
সেরকমই একটি প্রতিষ্ঠান ‘রানী পিঠা ঘর’। স্বত্বাধিকারী নুরজাহান আরা রানী। অল্প বয়সে বাবাকে হারানোর পর পড়াশোনা বন্ধ করে মা এবং ছোট দুই বোনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।
সে সময় রাজশাহীর স্বনামধন্য আরেকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিতির রান্নাঘরে ক্যাটারিং এ কাজে গিয়েছিলেন উদ্যোক্তা নুরজাহান আরা রানী। সেখানে কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি শুনলেন পদ্মানদীর পাড়ে একটি পিঠা মেলার আয়োজন করা হবে। সে মেলাতে ইতোমধ্যে রানীর পরিচিত অনেকে স্টল বুকিংও দিয়ে ফেলেছেন। তখন রানী ভাবলেন আমিও স্টল নেব। এভাবেই আজ থেকে ৭ বছর পূর্বে সূচনা হয়েছিল রানী পিঠা ঘরের।
প্রথম মেলাতেই ক্রেতাদের মন জয় করে কিছুদিনের মধ্যে আরো দুটি মেলাতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যান নুরজাহান আরা রানী। চেম্বার অফ কমার্স, থিম ওমর প্লাজার শীতকালীন পিঠা উৎসব, মোজো পিঠা উৎসব সহ বেশ কয়েকটি মেলায় রানী পিঠা ঘর স্বাদে- মানে শ্রেষ্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হন।
পরিবারের সকল সদস্যদের সহযোগিতা পেয়েও প্রতিদিন পিঠার অধিক অর্ডার থাকায়, পিঠা তৈরিতে হিমসিম খেয়ে যেয়ে হচ্ছে এই উদ্যোক্তার।
সম্প্রতি তিনি প্রথমবারের মতো পিঠা তৈরির একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন।সেখানেও রাজশাহী বিভাগের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেন এই উদ্যোক্তা। খুব শীঘ্রই তিনি প্রতিযোগিতার পরবর্তী ধাপগুলোতে অংশ নিতে রাজধানী ঢাকাতে পাড়ি জমাবেন।
রানী পিঠা ঘরের রানী “নুরজাহান আরা রানী” উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, সাত বছর আগে এক শুভাকাঙ্ক্ষীর থেকে ২ হাজার টাকা ধার নিয়ে শুরু করেছিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমত, শ্রম এবং ক্রেতাদের ভালোবাসায় এখন প্রতিমাসে রানী পিঠা ঘরে লক্ষ- লক্ষ টাকার পিঠা তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমার অসংখ্য ক্রেতা আছেন যারা কিছুদিন পরপরই আমাকে পিঠার অর্ডার করে থাকেন এবং সকলের অনুপ্রেরণায় আমি বিয়ে সহ নানারকম আনন্দআয়জনে বিভিন্ন রকম পিঠা দিয়ে ডালা-কুলাও সাজাচ্ছি। সেখান থেকেও আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি।
তামান্না ইমাম, উদ্যোক্তা বার্তা।