বিভিন্ন মাধ্যমে ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে খাবারের অর্ডার করতো উদ্যোক্তা জান্নাতুল রায়ান দিনার কাছে। ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই, পেস্ট্রি, বিরিয়ানি, পাপড় রুটি, পরোটা, চিকেন রোল, মিনি সমুচা, চিকেন বান। আর কি চান?
এই সমস্ত লোভনীয় খাবার নিয়মিত তৈরি হচ্ছে রাজশাহীর উদ্যোক্তা জান্নাতুল রায়ান দিনার ‘জান্নাতুল’স কিচেনে। ছোটবেলা থেকেই রান্নার প্রতি ঝোঁক ছিল দিনার। পরবর্তীতে, রাজশাহী মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে রান্নার প্রশিক্ষণ নিয়ে রান্নার হাত আরো পাকাপোক্ত করেন এই উদ্যোক্তা।
একদম শুরুর দিকটাতে কি কি খাবার তৈরি করা হতো জানতে চাইলে তিনি উদ্যোক্তা বার্তা কে বলেন, ‘আমার শুরুটা ছিল বিভিন্ন ধরনের পিঠা এবং কেক নিয়ে। এই খাবারগুলো যখন ক্রেতারা পছন্দ করলো তখন তারা নিজেরাই আমার কাছে তাদের পছন্দের খাবার অর্ডার করতে শুরু করলেন। এরপরে পিঠে-পুলি, কেকের সাথে ধীরে ধীরে রুটি, পরোটা, ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই, চিকেন রোল, মিনি সমুচাসহ বেশ কয়েক ধরনের ফ্রোজেন আইটেম যুক্ত হয়েছে।
উদ্যোক্তা হবো এই ভাবনাটা কখন উঁকি দিয়েছিলো মনে, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার রান্না করতে ভালোলাগতো। তবে সে সময় উদ্যোক্তা সম্পর্কে খুব একটা জানতামনা। পরবর্তী তে হাতে স্মার্ট ফোন থাকার সুবাদে যখন দেখলাম ঘরে বসেই স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। ইতোমধ্যে অনেক মেয়ে হোমমেইড ফুড নিয়ে কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম, আমিও স্বাবলম্বী হবো।
এভাবেই ২০২০ সালে ১ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে ‘রাজশাহী বিউটিজের আয়োজনে ২০ রকম ভিন্ন- ভিন্ন স্বাদের পিঠা নিয়ে মেলায় অংশ নিলাম। ক্রেতারা খুব পছন্দ করলো পিঠাগুলো। মেলা শেষ হলে সেই ক্রেতারাই বিভিন্ন মাধ্যমে আমার ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে তাদের পছন্দের পিঠার অর্ডার করতে শুরু করলেন। সে সময় উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করলাম। সেইসাথে সামাজিক পাতাই চালু করলাম ‘জান্নাতুল’স কিচেন’ পেজ।
‘জান্নাতুল’স কিচেনের’ কোন খাবারটির চাহিদা সব থেকে বেশি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময়ভেদে ভিন্ন ভিন্ন খাবারের চাহিদা বেশি থাকে। বর্তমানে ফ্রোজেন আইটেম এবং আলুর পাপড় বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও নিয়মিত কাস্টমাইজ কেক এবং ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই এর অর্ডার থাকেই।
পড়াশোনা, সংসার, বাচ্চা সবকিছু সামলে নিজ উদ্যোগ কে সামনে এগিয়ে নিতে পরিবারের সাপোর্ট আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমার কাছে পরিবারের সাপোর্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমি পরিবারের সাপোর্ট পাচ্ছি। আমার উদ্যোগের পেছনে বাইরের কোন সহযোদ্ধা নেই পরিবারের সকলের সহযোগিতায় করছি এখন পর্যন্ত। আমার জান্নাতুল’স কিচেনের ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই খুব জনপ্রিয় এবং এটার চাহিদা সবসময় কমবেশি থাকলে তবে রমজানে চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যায়। গতরমজানে শেষের ১০ দিন আমার স্বামী আমার সাথে সারারাত জেগে সেমাই বানাতে সহযোগিতা করেছে। সবমিলিয়ে আমার উদ্যোগ কে সামনে এগিয়ে নিতে পরিবার খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখছে। প্রতিটি উদ্যোক্তারই পরিবারের সাপোর্ট খুব জরুরী।
বর্তমানে রাজশাহী নগরীতে বাস করলেও এই উদ্যোক্তার শৈশব কৈশোর কেটেছে রাজশাহীর পুঠিয়াতে। নারীদের বেকিং প্রশিক্ষণ দিতে চান এই উদ্যোক্তা। এই লক্ষ্য নিয়ে সামনে এগোচ্ছেন। সেইসাথে নিয়মিত রাজশাহী সহ আশেপাশের এলাকায় পৌঁছে দিচ্ছেন জান্নাতুল’স কিচেনের লোভনীয় সব খাবার।
তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা, রাজশাহী