গরুর এবং কাঠের ঘানিতে ভাঙা সরিষার তেল, ঝালমুড়ির মসলা, যাতায় ভাঙা সব ধরনের গুড়া মশলা, ঘি, আম সহো সবধরনের মৌশুমি ফল, খেজুর গুড়, রেডি টু কুক আইটেম ইত্যাদি খাদ্য সমারোহে ভরপুর বাঁধন ফুড।
এছাড়াও গত কোরবানির ঈদ থেকে অনলাইনে পশু বিক্রয় নিয়েও কাজ শুরু করেছেন মাহাবুবা আক্তার জাহান বাঁধন।
কোরবানির ঈদে অনলাইনে ২১টা গরু, ১৮ টা ছাগল এবং ১২ টা ভেড়া বিক্রয় করেন তিনি। বাঁধন ফুডের সব থেকে জনপ্রিয় খাবার ঝালমুড়ি মসলা।
বর্তমান সময়ে রেডি টু কুক আইটেম থেকেও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন উদ্যোক্তা বাঁধন। এখন পর্যন্ত তার ‘উই’ প্ল্যাটফর্ম থেকে ৭০ লাখ টাকা বিক্রি।
বর্তমানে তিনি নিজে তো স্বাবলম্বী বটে এছাড়াও তিনি তার কাজগুলো করে নেন গ্রামের অসহায় নারীদের নিয়ে। এতে বাঁধনের পাশাপাশি তার এলাকার অসংখ্য নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
দেড়-দু বছর আগে তাকালে মাহাবুবা আক্তার জাহান বাঁধনের ঝুঁলি ভর্তি ছিল ব্যর্থতা। যা একটি মাত্র উপহারের রিভিউ এ বয়ে এনেছে একের পর এক সফলতা।
ব্যর্থতাকে কিভাবে সফলতায় রুপান্তর করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘একটা সময় চাকরি, বুটিক নিয়ে কাজ, যেটায় করতাম সেখানেই ব্যর্থ হতাম। এরপর এমন ও হয়েছে ব্যবসা শুরুর জন্য শশুরবাড়ি এবং বাপের বাড়ি থেকে টাকা দিয়েছে, সেটিও ভুল ফাঁদে পা দিয়ে হারাতে হয়েছে। বার-বার এমন পরিস্থিতিতে পড়াই একটা সময় ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম।’
‘‘কাজের আশায় যখন হন্ন হয়ে এদিক ওদিক ছুটছিলাম তখন রাজশাহীর সবথেকে বড় গার্লস গ্রুপ ‘রাজশাহী বিউটিজ’ এর এডমিন ‘লায়লা নাজনীন সুইটির’ সঙ্গে আলাপ হলো তিনি পরামর্শ দিলেন পার্লারের কোর্স করতে। আমিও গেলাম তবে সেখানেও একি অবস্থা আমি কিছুই বুঝতে পারছিলামনা।প্রশিক্ষণের শেষ দিন আমার বাড়িতে তৈরি খেজুর গুড় উপহার দিলাম নাজনীন সুইটি আপুকে।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি চমৎকার একটি রিভিউ। আমি যেহেতু উপহার হিসেবে দিয়েছিলাম তাই এমন রিভিউ দেখে অবাক হয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর ২৭ কেজি গুড়ের অর্ডার পেয়ে যায় এভাবে ২০২০ এ ২ কেজি গুড় উপহার দেওয়া থেকে ১৫০ কেজি গুড় সেল করি।আর প্রতিবারের অর্ডার আমার কাজের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করছিল।আগে যে ভুলগুলোর জন্য ব্যার্থ হতাম সেগুলোর দিকে খেয়াল রেখে কাজ পরিচালনা করেছি শুরু থেকে। আর এভাবেই আমার ব্যার্থতাকে সফলতায় রুপান্তর করা।’’
বর্তমানে ‘উই’ এর রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন মাহাবুবা আক্তার জাহান বাঁধন।
বাঁধন বলেন, ‘‘আমার স্বপ্ন পূরণের সব থেকে বড় প্ল্যাটফর্ম উইমেন্স অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম উই।’উই’ তে যুক্ত হওয়ার পর নাসিমা আক্তার নিসা, রাজিব আহমেদ স্যারের লিখাগুলো পড়ে অনুপ্রাণিত হতাম। একটা সময় আমিও লিখালিখি শুরু করি। এভাবে মনের ভেতর সাহস সঞ্চয় হতে থাকে। আর এভাবেই উই এর জেলা প্রতিনিধি হওয়া। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি রাজশাহীর উই উদ্যোক্তাদের পাশে থাকার।
প্রথমে গুড়, এরপরে সরিষার তেল, ঝালমুড়ি মসলা ইত্যাদি নিয়ে কাজ শুরু করি।এভাবে আস্তে আস্তে সকলের অনুপ্রেরণায়, বাঁধন ফুডের প্রতি অল্পসময়ে মানুষের বিশ্বস্ততায় পণ্য তালিকা বৃদ্ধি করি।সারা দেশে বাঁধন ফুডের পণ্য নিয়মিত যাচ্ছে।
উদ্যোক্তা মাহাবুবা আক্তার জাহান বাঁধনের জন্ম থেকে বেড়ে উঠা রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার নোনামাটিয়াল গ্রামে।তার এ কাজে শাশুড়ি রমেছা বেগম এবং স্বামী সুমন সবসময় পাশে থেকে তাকে সহোযোগিতা করে যাচ্ছেন।
তরুণদের উদ্দেশ্যে মাহাবুবা আক্তার জাহান বাঁধন বলেন, ‘‘আপনারা যারা বাঁধা দেখে ভয় পেয়ে থেমে যান তারা ধৈর্য ধরুন, চেষ্টা চালিয়ে চালিয়ে যান সফলতা আসবেই।’’
তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা, রাজশাহী