বাঁশ শিল্প বাংলাদেশের একটি প্রাচীন লোকশিল্প। এ-শিল্পের প্রধান উপকরণ হচ্ছে বাঁশ। সাধারণত গ্রামের লোকেরা এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। বাঁশের ব্যবহার বিবিধ। বাংলাদেশের লোকজীবনের খুব কম দিকই আছে যেখানে বাঁশের তৈরি সামগ্রী ব্যবহৃত হয় না। এই শিল্প কালক্রমে আমাদের লোকসংস্কৃতি ও কারুশিল্পের অন্যতম প্রধান উপকরণ হয়ে ওঠে। এ শিল্পের সাথে জড়িত আছে বাংলাদেশের অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা।
তাদের মধ্যে একজন উদ্যোক্তা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার নাপিতপুকুরিয়া গ্রামের আব্দুল মালেক। যিনি দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে এ-শিল্পের সাথে জড়িত আছেন।
কীভাবে এ শিল্পের সাথে জড়িত হলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে উদ্যোক্তা আব্দুল মালেক উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘‘আমার ছোটবেলা থেকেই বাঁশের প্রতি খুবই আগ্রহ ছিলো। আমি ছোটবেলায় বাঁশের তৈরি ফুলের টব, পাখির বাসা নিয়ে খেলা করতাম। সেই থেকেই বাঁশের প্রতি আমার একটা ভালোবাসা, মায়া জন্মে গেছে।’’
এ কাজের শুরুটা কেমন ছিলো জানতে চাইলে উদ্যোক্তা বলেন, ‘‘প্রথমে এই কাজটা শেখার পরে দেখছি কোনো রকমে কোনো সাড়া পাচ্ছি না। অনেককে জিজ্ঞেস করেছি, বলেছি এগুলো চালাতে পারবেন কি না? তারা বলে, এগুলোর তেমন কোনো চাহিদা নেই। তখন আমি কাজটা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তারপর হঠাৎ করে খাগড়াছড়ি থেকে এক ভাই আমাকে ফোন দিলো, বললো, আমার এখানে আসো, আমার এখানে কাজ করো। তারপর থেকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’’
উদ্যোক্তা মালেক অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তৈরি করে আসছেন বাঁশ শিল্পের নানা ধরণের নান্দনিক পণ্য।
কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে উদ্যোক্তা বলেন, ‘‘আমি ১৬৫ ধরণের পণ্য নিয়ে কাজ করছি। তার মধ্যে পেন হোল্ডার, টিস্যু বক্স, মগ, পানির বোতল, বাতিদানি, ফুলের টব ও শো-পিস অন্যতম।’’
ফেসবুকে ‘বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র’ নামে উদ্যোক্তার একটি পেজ আছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় মালেকের পণ্য বিক্রি হয়। দেশের বাইরে থেকেও অর্ডার আসছে। ইতোমধ্যে তিনি ইউরোপে বেশ কিছু পণ্য পাঠিয়েছেন। শুরুতে তিনি একা কাজ করলেও এখন তিনি দুই জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।
এছাড়া পরিবারের সদস্যরাও তার কাজে নানাভাবে সহোযোগিতা করছেন। বর্তমানে প্রতিমাসে উদ্যোক্তা মালেক প্রায় এক লাখ টাকার পণ্য উৎপাদন করতে সক্ষম।
ছোটবেলা থেকে দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে বড় হয়েছেন উদ্যোক্তা আব্দুল মালেক। তাই আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাননি। কৈশোর বয়সেই ধরেছেন সংসারের হাল। ১৫ বছর বয়স থেকেই বাঁশের জিনিসপত্র তৈরির কাজ করছেন তিনি। তার স্বপ্ন, একদিন তার পণ্য দিয়ে বিশ্ব জয় করবেন।
সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা, খুলনা