আধুনিক অর্থশাস্ত্রের জনক অ্যাডাম স্মিথ আধুনিক অর্থনীতিতে, উদ্যোক্তাদের উন্মুক্ত অর্থনীতির যোদ্ধা হিসেবে সম্মান করেছেন।
বিশ্বের সকল ছোট বড় মাঝারি উদ্যোক্তাদের আজকের দিনটি উৎসর্গ করা। আজ বিশ্ব উদ্যোক্তা দিবস। আজ উদ্যোক্তা, নতুন ধারণা এবং নেতৃত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির সুযোগ। প্রতি বছর ২১ আগস্ট বিশ্ব উদ্যোক্তা দিবস হিসেবে পালিত হয়।
বিশ্ব উদ্যোক্তা দিবস কেন পালিত হয়?
উদ্যোক্তারা নতুন আইডিয়া এবং নতুনত্ব বাজারে আনার মাধ্যমে যে কোন দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে।
উদ্যোক্তা কেবল চাকরি সৃষ্টির জন্য নয়, সমস্যা সমাধানের জন্য এবং এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি অবিচ্ছেদ্য এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বছরের পর বছর ধরে জোর দিয়ে আসছেন যে সফল হওয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের পুঁজি, সাহস এবং প্রত্যয় প্রয়োজন। সরকার এবং শিল্প সংস্থাগুলির বেশ কয়েকটি উদ্যোগ এবং সহায়তা স্টার্টআপ পরিবেশকে সারা দেশে বৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করেছে।
উদ্যোক্তা উন্নীত এবং সচেতনতা সৃষ্টির জন্য অংশীদারিত্বের ব্যবসা এবং উদ্ভাবনী ধারনা কার্যক্রম, স্থানীয় আলোচনা, বক্তৃতা, কর্মশালা এবং আলোচনা এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সংগঠিত করুন।
ব্যবসা বা নেতৃত্বের জন্য স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা এবং উদ্যোক্তা এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের সম্মান করুন।
দেশের অর্থনীতিকে গতিময় করছে নারী উদ্যোক্তারা
বাংলাদেশে গত ক’বছর ধরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফেসবুক ভিত্তিক অনেক পাতা তৈরি হয়েছে, যেখানে নানা ধরণের পণ্য বিক্রি হয়ে থাকে। এসব পণ্য ক্রেতা-বিক্রেতাদের বেশিরভাগই নারী এবং যাদের অনেকে ছাত্রী বা গৃহবধূ।
ভেনচার ক্যাপিটাল রিসার্চ ডেটাবেজ পিচবুক থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ একটি পরিসংখ্যান(২০১৯) বলে, পৃথিবীর মাত্র দুই শতাংশ নারীর কাছে তাদের ব্যবসা পরিচালনার মূলধনটি থাকে। যেখানে পুরো পৃথিবী দিচ্ছে প্রতি ১০০জনে দু’জন উদ্যোক্তা হয়ে উঠার পরিসংখ্যান, সেখানে বাংলাদেশের চিত্রটি আশার আলো দেখায়। বাংলাদেশে মোট উদ্যোক্তার শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ নারী। নারী উদ্যোক্তা তৈরীর ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ এখন ফেসবুকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে কাপড়, রূপসজ্জা বা গৃহসজ্জা ও বিভিন্ন পদের খাবারসহ নানা উপকরণ। নারী ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের অনলাইন প্লাটফর্ম ‘উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম’ বা উই, যা এখন দেশের ৬৪ জেলার ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের অন্যতম ভরসার প্লাটফর্ম হয়ে উঠেছে। অনলাইন প্লাটফর্মটিতে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছে এমন উদ্যোক্তার সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে।
শুধু জাতীয় ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও সুনাম অর্জন করেছেন এমন সফল ধ্রুপদী নারী উদ্যোক্তাও রয়েছেন আমাদের দেশে। বিবি রাসেল তাদের মধ্যে একজন। বাংলাদেশের প্রথম সুপার মডেল ছিলেন তিনি। মডেলিং ছেড়ে এসেছেন উদ্যোক্তা পেশায়। বিখ্যাত ফ্যাশন হাউজ ‘বিবি প্রোডাকশন’ এর প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশের পোশাককে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি এনে দিয়েছেন।
দেশীয় তাঁত পণ্যকে দেশে এবং দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্ব ফ্যাশন দরবারে তুলে ধরেছেন। এদেশের সুবিধা বঞ্চিত নারীদের কথাও ভাবেন তিনি। তাদের অনেককেই কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন বিবি রাসেল।
বিবি রাসেল বলেন, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। নারীরা সফল হলেই বাংলাদেশ সফল হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের মর্গান স্টেট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক ড. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘সারাবিশ্বে বাঙালিদের সৃজনশীলতার বিশেষ প্রশংসা রয়েছে। তবে উদ্যোক্তা হতে হলে ছোট থেকে বড় হওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে। সেখানে আর্থিক সংকট বাধা হতে পারে। কিন্তু সংকল্প ও দৃঢ়তা রাখতে হবে।’
উদ্যোক্তাদের পণ্য বিশ্ব জয় করবে : শিল্পমন্ত্রী
দেশের উদ্যোক্তাদের পণ্য সারা বিশ্ব জয় করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
তিনি বলেন, দেশের এমএসএমই উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সারা দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পণ্য উৎপাদন, বাজার সংযোগ সৃষ্টি, দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে ফাউন্ডেশন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯-এর মধ্যেও দেশের প্রত্যন্ত পাড়ায়, গ্রামে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করছেন। এখন দরকার তাদের দক্ষতা উন্নয়ন। এসএমই ফাউন্ডেশনের উন্নয়ন কার্যক্রম দেশে দক্ষ উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়াস আরও জোরদার করবে।
উদ্যোক্তা বার্তা রিপোর্ট