রাজশাহীতে গভীর শোক আর শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ

0

জাতীয় শোক দিবসে রাজশাহীতে গভীর শোক আর শ্রদ্ধায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রোববার (১৫ আগস্ট) সারাদিন রাজশাহীতে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

এর মধ্যে সকালে রাজশাহী মহানগরীর কুমারপাড়ায় মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এতে নেতৃত্ব দেন।

এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সকালে রাজশাহী কলেজ চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে মহানগরীর অলোকার মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাবলুসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

এক শোক বাণীতে বাণীতে মেয়র বলেন, ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ৪৬তম শাহাদত বার্ষিকী দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর দিন। শোকাবহ এই দিনে আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও ১৫ই আগস্টের সকল শহীদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

বাণীতে মেয়র আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট দেশের স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ঘাতকচক্রের হাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ হন। একই সাথে শহীদ হন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ আরো অনেকে।

এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৫৮ এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬ এর ৬-দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০ এর নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি অর্জন করে বহু কাঙ্খিত স্বাধীনতা।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করলেও তাঁর স্বপ্ন ও আর্দশের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বির্নিমাণে নিরসলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতির পিতা হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলবো- এই হোক আমাদের শোক দিবসের অঙ্গীকার।

জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও ১৫ই আগস্টের সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং মহান আল্লাহতায়ালার নিকট তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

শোক দিবস উপলক্ষে জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। এতে জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার ড. হুমায়ুন কবীর। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক আবদুল বাতেন ও নগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক। এতে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শরিফুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, ডা. আবদুল মান্নান প্রমুখ। আলোচনা সভার আগে তাঁরা জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দিবসের শুরুতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে রুটিন দায়িত্বে নিযুক্ত উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলাম শোক র্যা লিসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন ও বঙ্গবন্ধুর রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।

এরপর সকাল ১০টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শেষে রাবি টিএসসিসি নির্মিত বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে রচনা প্রতিযোগিতা, কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিল, মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা এবং শহীদ মিনার চত্বরে প্রদীপ প্রজ্বালন।

শোক দিবসে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (রুয়েট) জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কাল পতাকা উত্তোলন করা হয়। উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রফিকুল ইসলাম শেখের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। এ সময় অন্যান্য শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে ভার্চ্যুয়াল প্লাটফর্মে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. রবিউল আওয়ালের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রফিকুল ইসলাম শেখ।

উদ্যোক্তা বার্তা রিপোর্ট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here