বঙ্গমাতা চাইতেন দেশের প্রত্যেক মেয়ে শিক্ষা ও স্বাবলম্বী হয়ে ‘নিজের পায়ে দাঁড়াক’: প্রধানমন্ত্রী

0
উদ্যোক্তা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গমাতা চাইতেন দেশের প্রত্যেক মেয়ের শিক্ষা ও স্বাবলম্বী হয়ে ‘নিজের পায়ে দাঁড়াক’। খালি অধিকার অধিকার বলে চিৎকার করলেই হবে না। অধিকার আদায় করতে হবে।

তিনি আজ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

দিবসটি এবার প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে পালিত হচ্ছে। এ বছর বঙ্গমাতার জন্ম দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে—‘বঙ্গমাতা সংকটে সংগ্রামে নির্ভীক সহযাত্রী।’

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গমাতা বিশ্বাস করতেন, প্রতিটি মেয়ের শিক্ষা নেয়া উচিত এবং আর্থিক সচ্ছলতা দরকার। খালি অধিকার অধিকার বলে চিৎকার করলেই হবে না। অধিকার আদায় করতে হবে। শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করে প্রতিটি মেয়েকেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে-সেই উপলদ্ধিতা তাঁর ছিল। মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনা এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ নারীদের পুণর্বাসনে বঙ্গমাতার নিজের গহনাগাটি সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েও তাদের পাশে দাঁড়ানোর কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় মা’য়ের বই কেনা এবং বই পড়ার অভ্যাসের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মায়ের অভ্যাস ছিল বই কেনা। নিউমার্কেট থেকে তিনি বই কিনতেন। আমাদেরও নিয়ে যেতেন। আমার বাবা বার্ট্রান্ড রাসেলের বই পড়ে ইংরেজি থেকে অনুবাদ করে মাকে শোনাতেন।

বঙ্গবন্ধু বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য তার জীবনটাকে উৎসর্গ করেছিলেন এবং নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা না ভেবে দেশের মানুষের কল্যাণের কথা ভেবেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা মায়ের স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, জাতির পিতার পাশে থেকে সব সময় প্রেরণা জুগিয়েছেন তাঁর মা।

তিনি বলেন, আমার মা কখনো সামনে আসেননি, কখনো কোন মিডিয়ার সামনে যাননি, কখনো নিজের নামটা ফলাতে চাননি। তিনি নীরবে পাশে থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমার বাবাকে সহযোগিতা করে গেছেন, সমর্থন দিয়ে গেছেন। এটাই সবথেকে বড় ত্যাগ স্বীকার বলে আমি মনে করি।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর মা’য়ের আন্দোলন-সংগ্রামের গোপন কার্যকর ভূমিকার জন্য তাঁকে একজন গেরিলা’র সঙ্গে তুলনা করেন এবং বলেন, আমার মা ছিলেন সব থেকে বড় গেরিলা।
তিনি বলেন, একটা গেরিলা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি। আমি সবসময় বলি, আমার মা ছিলেন সবচেয়ে বড় গেরিলা। অসাধারণ স্মরণশক্তি ছিল তাঁর। তিনি গোপনে গিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করতেন, দিক-নির্দেশনা দিয়ে আসতেন। আমাদের বাড়িতে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকও হয়েছে। ছয় দফা ছেড়ে অনেক নেতা চলেও গেছেন। আমার মা তখন খুব শক্ত ছিলেন ছয় দফার পক্ষে।

৬-দফা আন্দোলনেও বঙ্গমাতা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক ভাবে তিনি (বঙ্গমাতা) যে কতটা সচেতন ছিলেন-সেটা তাঁর দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। সেই সময় ৬-দফা থেকে এক চুল এদিক-ওদিক যাবেন না তিনি, এটাই ছিল তাঁর (বঙ্গমাতা) সিদ্ধান্ত। আমার মা বুঝেছিলেন। তিনি বলেছিলেন ৬ দফার একটি দাঁড়ি, কমাও বদলাবে না। আর সেটাই আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটিতে পাস হয়েছিল।

এইবছর অর্থাৎ, ২০২১ সাল থেকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ পদক চালু করেছে সরকার। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় অধীনে প্রথমবারের মত ৮টি ক্ষেত্রে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা, গবেষণা, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন এবং রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাঁচজন বিশিষ্ট নারীকে এ পদক দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এটিই নারীদের জন্য সর্বোচ্চ পদক হিসেবে গৃহীত হয়েছে।

‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ’ ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মমতাজ বেগম (মরণোত্তর), শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে টাঙ্গাইলের জয়া পতি (মরণোত্তর), ‘কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন’ ক্ষেত্রে পাবনা কৃষি উদ্যোক্তা মোছা. নুরুন্নাহার বেগম, ‘রাজনীতি’ ক্ষেত্রে কুমিল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ জোবেদা খাতুন পারুল এবং ‘গবেষণা’ ক্ষেত্রে নেত্রকোনার লেখক ও গবেষক নাদিরা জাহানকে (সুরমা জাহিদ) পদক দেওয়া হয়। এছাড়াও সারাদেশে দুই হাজার দুস্থ ও অসহায় নারীকে নগদ দুই হাজার টাকা করে মোট ৪০ লাখ টাকা এবং চার হাজার সেলাই মেশিন বিতরণ করা হচ্ছে আজ।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য আজকে যারা ‘বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০১’ পেলেন তাদের সবাইকে অভিন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বঙ্গমাতা’র জন্মবার্ষিকী এ বছরই প্রথমবারের মতো জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন এবং ‘বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক’ প্রদান করা হচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য এ পদকপ্রাপ্ত ৫ জন বিশিষ্ট নারীকে তিনি আন্তরিক অভিনন্দন জানান।

দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য-‘বঙ্গমাতা, সংকটে-সংগ্রামে নির্ভীক সহযাত্রী’ যথার্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতিটি সংগ্রামে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অসামান্য অবদান রয়েছে। আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সারাজীবন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশের মানুষের জন্য চিন্তা করতে প্রেরণা জুগিয়েছেন।

সাদিয়া সূচনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here