ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়েই নিজের পোশাকে নিজেই হাতের কাজ করতেন পাপিয়া আক্তার। সেই থেকেই সুঁই-সুতোর কাজে বেশ পারদর্শী হয়ে উঠলেন তিনি। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে কাজ করবেন। কাজ শুরু করলেন, কিন্তু একটু আলাদা চমক নিয়ে। পোশাকে হাতের কাজের প্রশিক্ষণ দিলেন কয়েকজনকে। প্রশিক্ষণ দিয়ে পাওনা ২ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করলেন স্বপ্নের উদ্যোগ।
বগুড়ার ছোট কুমিরা এলাকার মোঃ মোজাম্মেল হক পল্টু এবং পপি বেগম দম্পতির কন্যা পাপিয়া আক্তার। বগুড়া আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছেন। এর পরেই পাড়ি জমাতে হলো স্বামীর ঘরে। ছোটবেলা থেকেই পাপিয়া আক্তার স্বাধীনচেতা স্বভাবের। বিয়ে হয়ে গেছে বলে তিনি কিছু না করে শুধু সংসার সামলাবেন, এমন ভাবনা কখনো ভাবেননি। বরং পাপিয়া আক্তার আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ভাবনায় মশগুল ছিলেন।
২০০৯ সালে পাপিয়া আক্তার নিজের অর্জিত টাকা নিয়ে কিছু কাপড় কিনে কাজ শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানের নাম দিলেন ‘জান্নাতি বুটিক অ্যান্ড ফ্যাশন হাউস’। প্রথম দিকে কারচুপি নকশা করতেন মেয়েদের ওয়ান পিস, টু পিসে। পরবর্তীতে যখন ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছিল তার পণ্যের প্রতি তখন তিনি কর্মীর সংখ্যাও বাড়াতে থাকলেন। পোশাকের ডিজাইনেও আনতে থাকলেন ভিন্নতা। বর্তমানে তিনি ওয়ানপিস, টুপিস, থ্রিপিস, বেডসিট, শাড়ি, চাবির রিং, ব্যাগ, কুশিঁকাটার পণ্য ইত্যাদি তৈরি করছেন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেমন অর্ডার বাড়ছে তেমনি আগের তুলনায় বেড়ে গেছে কর্মী সংখ্যা। বর্তমানে ১২০ জন কর্মী রয়েছে তার প্রতিষ্ঠানে।
নিজের প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পাশাপাশি অন্য নারীদের তিনি ব্লক, বাটিক, টাইডাই ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। করোনাকালে তিনি তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘জান্নাতি বুটিক অ্যান্ড ফ্যাশন হাউস’ নামে একটি অনলাইন পেজ চালু করেন এবং সেখান থেকে বেশ ভালো সাড়া পান। ২ হাজারের পুঁজিকে লক্ষ লক্ষ টাকায় নিয়ে গেছেন পাপিয়া আক্তার। দেশের বেশিরভাগ জেলায় তার পণ্যে পৌঁছে যাচ্ছে।
তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘নিজেরা উদ্যোগ গ্রহণ করো। আত্মনির্ভরশীল হও। আরো পাঁচজনকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ করে দাও’।
তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক, উদ্যোক্তা বার্তা