ফারহানা খুশালিদ মোমিন শৈশব থেকে কৈশোর পুরো সময়টায় কাটিয়েছেন রাজশাহী নগরীতে বাবা মোঃ আব্দুল মোমিন এবং মা নার্গিস আক্তারের সঙ্গে। মাধ্যমিক পাশ করেছেন সরকারি পিএন বালিকা বিদ্যালয় থেকে এবং উচ্চ মাধ্যমিক নিউ গভমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
পড়াশোনা শেষ হতে না হতেই পেয়ে যান চাকরি। রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে তিন বছর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের লেকচারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ফারহানা। হঠাৎ বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে গেলে খানিকটা পরিস্থিতির চাপে পড়েই বের হয়ে আসতে হলো চাকরি জীবন থেকে। ‘এতে অবশ্য এখন কোনো আক্ষেপ হয়না আমার, বরং ভালো লাগে’- এমনটি বলছিলেন ফারহানা।
ছোট থেকেই আমার ভালো লাগত রং-তুলির কাজ। আমি যখন চাকরি করতাম তার অনেক আগে থেকেই হাত খরচের তিন হাজার টাকা নিয়ে স্বল্প পরিসরে কাজ শুরু করেছিলাম। তারপর যখন চাকরিটা থেকে বের হয়ে আসি তখন ভাবলাম, যে কাজটা স্বল্প পরিসরে করতাম সেটাকেই বড় পরিসরে করি। ২০১৪ তে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলাম। প্রতিষ্ঠানের নাম দিলাম ‘অদিতি ’। ফারহানা খুশালিদ তার ‘অদিতির’ শুরুর গল্পটা বলছিলেন।
শুরুতে ওয়ান পিস, টুপিস ও থ্রিপিসে হ্যান্ডপেইন্ট করতেন। পরবর্তীতে যখন ব্যাপক সাড়া মিলছিল তখন শাড়িতেও কাজ শুরু করলেন এবং ঢাকায় একটা শোরুম দিলেন। অনলাইনে ‘অদিতি’ নামে একটি পেজ আছে তার। রাজশাহী অঞ্চলের সকল কাজ তিনি অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালনা করে থাকেন। এছাড়াও বাংলাদেশের বেশিরভাগ জেলায় অদিতির পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে। হ্যান্ডপেইন্টের সঙ্গে যুক্ত করেছেন ব্লকের কাজ, টাইডাইসহ আরো অনেক কাজের ধরন। ব্লাউজ পিস, বেডসিট, আয়না,পাটের ব্যাগসহ আরো পণ্য যুক্ত করেছেন পণ্যের তালিকায়।
বর্তমানে তিনি ৬জন সহযোদ্ধা নিয়ে তার কর্মক্ষেত্র সচল রেখেছেন। ৩ হাজার টাকাকে ৩৫ লক্ষ টাকায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। বলছিলেন, ‘চাকরি ছাড়ার জন্য আর আক্ষেপ হয় না, বরং যখন ভাবি আমি অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারছি তখন খুব ভালো লাগে। আমি সবসময় দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করি আর ভবিষ্যতেও করবো ইনশাআল্লাহ। আমি চাই যারা নতুন উদ্যোক্তা হয়েছেন বা হতে চাচ্ছেন তারা দেশীয় পণ্য নিয়ে বেশি বেশি কাজ করবেন। কাজের মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখবেন। বাঁধা আসলে থেমে না গিয়ে জয় করার চেষ্টা করবেন। তাহলে সফলতা নিজেই আপনাদের কাছে ধরা দেবে’-তরুণদের উদ্দেশ্যে এমনটিই পরামর্শ দিলেন ফারহানা খুশালিদ মোমিন।
তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক, উদ্যোক্তা বার্তা