উদ্যোক্তা মাহবুবা সুলতানা গল্পের শুরুতে বলেন, তার পড়াশোনা করতে বেশি ভালো লাগতো না। সব সময় স্বাধীন কিছু করতে ভালো লাগতো। ৭ বছর বয়স থেকে দুপুরের খাওয়া শেষে যে সময় মা, বাচচারা ঘুমাতে যায়, সেই সময়ে তিনি ছোট ছোট চেন, পুথি, চুমকি নিয়ে পুতুলের শাড়িতে কাজ করতেন। তখন তো ছোট ছিলেন তাই বুঝতেন না। কিন্তু এখন তার মনে হয়, উদ্যোক্তা হবার বীজটা যেন ৭ বছর থেকেই শুরু।
মাহবুবা সুলতানার বাবা-মায়ের ইচ্ছা মেয়ে ডাক্তার হবে। সেই স্বপ্ন ছোটোবেলাতেই ধামাচাপা পরে গিয়েছিল। এসএসসি’র পরে একটা ম্যাগাজিনে গ্রাফিক্স ডিজাইনের আর্টিকেল পড়ে তখন থেকেই ইচ্ছাটা মনের মধ্যে এসেছিল। কিন্তু বাসায় বলার সাহস হয়নি তার। এক দিন কলেজ শেষ করে এক সময় বাবা, মায়ের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে এক রকম জোর করে ইন্টেরিয়রে ডিপ্লোমাতে ভর্তি হলেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি উদ্যোক্তাকে।
পড়াশোনা শেষ করে কয়েক বছর ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবে চাকরি করেন। তারপর বিয়ের পরে স্বামীর উৎসাহে শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইন এন্ড মাল্টিমিডিয়াতে গ্রাজ্যুয়েশন করেন। সেই ২০১৮ থেকে নাগরিক টেলিভিশনে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে এখনও কাজ করছেন উদ্যোক্তা।
উদ্যোক্তা মাহবুবা সুলতানা ব্যবসার প্রথম দিক নিয়ে বলেন, ‘৬ বছর থেকেই চুমকি, পুথি নিয়ে খেলতাম। তাই ক্রিয়েটিভ সাইটে যাওয়ার পর থেকেই মনে হচ্ছিল যে, আমি নিজে কিছু একটা করবো। কিন্তু সংসার, পরিবার, চাকরি সব মিলিয়ে কিছুই মিলছিল না। তারপর শুরু হলো করোনার লকডাউন!’
তারপর তিনি প্রায় কয়েক মাস বেকার। ওই সময়টাতে তার মনে হলো প্যানডেমিক কিভাবে কাজে লাগাতে পারেন সম্পূর্ণ নিজের জন্য। যেহেতু উদ্যোক্তার পড়াশোনা ক্রিয়েটিভ সাইটে, তাই মনে হল সৃজনশীল কিছু করবেন।
কিন্তু কি করবেন? সেটাই ছিলো ভাবনার বিষয়। ঠিক করলেন নবজাতক শিশুদের কাপড় নিয়ে কাজ করবেন। ভয় পাচ্ছিলেন ঠিক করছেন, নাকি ভুল করছেন। কিন্তু কিছু মানুষ বলা শুরু করলো এইসব স্লো প্রডাক্ট, অনেক অনলাইন পেজেই আছে, এসব করে লাভ নাই। তখন আরো জেদ চেপে গেল। বিষয়টাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেন। একটা অনলাইন পেইজ খুললেন। নিজের কাছে জমানো ৮০ হাজার টাকা ছিল, সেটা দিয়েই শুরু করে দিলেন। এরপর থেকে এভাবে চলে যাচ্ছে উদ্যোক্তার ব্যবসা জীবন।
উদ্যোক্তার পেজের নাম দিয়েছেন ‘নিরুপম’। নিজের ডিজাইন করা নবজাতক শিশুদের জামা, নকশি কাঁথা, নেপি, কুশন কভার, বেড কভার তৈরী করে আপাতত পেজের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকেন।
ইসলামপুর থেকে কাপড় কিনে, নিজেই ডিজাইন তৈরি করেন। এখন খুব ছোট পরিসরে কয়েকজন কর্মী নিয়ে ঢাকার বাইরে একটা ফ্যাক্টরিতে চুক্তিতে কাজ করা হয়। ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছা আছে বলে জানান উদ্যোক্তা মাহবুবা সুলতানা।
মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা, ঢাকা