কোন জেলায় কোন ব্যাংকের নেতৃত্বে কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি (সিএমএসএমই) প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ঋণ বিতরণ হবে, তা নির্দিষ্ট করে জেলাভিত্তিক ‘লিড ব্যাংক’ ক্যালেন্ডার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ‘লিড ব্যাংক’ জেলাভিত্তিক সিএসএমই ঋণ পরিকল্পনাগুলোর সমন্বয়ে ‘কনসোর্টিয়াম লিডার’ হিসেবে কাজ করবে। ছোট ঋণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি সার্কুলারে ব্যাংকগুলোর করণীয় সম্পর্কেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঋণ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানোর দায়িত্বও লিড ব্যাংকের।
রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই এন্ড স্পেশালস প্রোগ্রেস ডিপার্টমেন্ট (এসএসইপিডি) লিড ব্যাংকের তালিকা সম্বলিত সার্কুলার ইস্যু করেছে। গেল বছর থেকে থেকে এসএসইপিডি এই তালিকা প্রকাশ করে আসছে। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ এই তালিকা প্রকাশ করতো।
এর আগে জাতীয় এসএমই নীতিমালা-২০১৯ অনুযায়ী টেকসই ও কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রতি জেলার জন্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের মধ্য থেকে একটি ব্যাংককে এসএমই ‘লিড ব্যাংক’ হিসাবে নির্দিষ্ট করতে বলা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মিলে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ হাজার কোটি টাকার মতো বিতরণ করেছে। অর্থাৎ ততদিনে পূরণ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক। এ অবস্থায় সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে জেলাভিত্তিক ‘লিড ব্যাংক’ নির্ধারণের মাধ্যমে এ ক্যালেন্ডার তৈরি করে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, কোভিডে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা যেন স্বচ্ছতার সাথে ও ঝামেলাহীনভাবে এসএমই খাতের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ পেতে পারে সে বিষয়েও লিড ব্যাংকগুলোকে ভূমিকা রাখতে হবে।
দেশের কোন জেলায় কোন ব্যাংক লিড ব্যাংকের দায়িত্ব পালন করবে, তা সার্কুলারে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, সিএমএসএমই অর্থায়নের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন নীতিমালা এবং কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিতে ‘লিড ব্যাংক’ নির্বাচন একটি কার্যকর পদ্ধতি।
লিড ব্যাংকগুলোকে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ঋণ গ্রহিতা নির্বাচন, ঋণ বিতরণ, তদারকি ও আদায় সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে হবে।
এ ছাড়াও জেলা/উপজেলা পর্যায়ে পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলোতে ঋণ বিতরণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এসব ব্যাংক। অঞ্চল ও খাতভিত্তিক কোন অসামঞ্চস্য থাকলে তার দূর করার পাশাপাশি নতুন উদ্যাক্তা তৈরিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে তারা।
জেলা এসএমই ঋণ বিতরণ মনিটরিং কমিটিতে লিড ব্যাংকগুলোকে উপস্থিত থেকে কোভিডের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গঠিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
কোভিডের প্রভাব মোকাবেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে সুষ্ঠুভাবে সমন্বিত ঋণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গত ১ জুন প্রতি জেলায় একটি করে এসএমই ঋণ বিতরণ মনিটরিং কমিটি করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে গঠিত এই কমিটির নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন জেলা প্রশাসক এবং সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) সংশ্লিষ্ট জেলার শীর্ষ কর্মকর্তা।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সিএমএসএমই খাতের ঋণ বিতরণ কার্যক্রম সমন্বিত ও সুচারুরূপে বাস্তবায়নে সহযোগিতা করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমোদনক্রমে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে প্রতিটি জেলায় গঠিত এসএমই ঋণ বিতরণ মনিটরিং কমিটির কার্যক্রমে সহায়তাসহ সিএমএসএমই ঋণ সম্পর্কিত সব কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন করার জন্য এসএমই লিড ব্যাংকের করণীয় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
এসএমই লিড ব্যাংক সংক্রান্ত করণীয় নির্দেশনাবলী এবং সংশ্লিষ্ট ক্যালেন্ডার (জানুয়ারি-ডিসেম্বর, ২০২১) অনুযায়ী, অর্পিত সব দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংক যথাযথভাবে পালন করবে। প্রসঙ্গত, করোনা মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সিএমএসএমই খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা করেছিল সরকার; কিন্তু বারবার তাগাদা দিয়ে এবং সময় বাড়িয়েও এ ঋণ বিতরণের গতি বাড়ানো যায়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রোববার সার্কুলারের মাধ্যমে এ ক্যালেন্ডার ঘোষণা করে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীর কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা