আজকে উদ্যোক্তা বার্তায় যাঁকে নিয়ে গল্প লিখতে চলেছি তিনি কারো ভাষায় হস্থ শিল্পে অগ্রনায়িকাদের একজন, কারো কাছে দিন বদলের সারথি, কারো কাছে পথ প্রদর্শক, কারো দৃষ্টিতে তিনি মানুষ গড়ার কারিগর।
তাই এই গল্পের মুখ্য চরিত্র অনুযায়ী আমরা আজকে পরিচিত হবো দীপ্ত কুটিরের স্বত্বাধিকারী এবং জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ নারী উদ্যোক্তার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত -দেলোয়ারা বেগম এর সঙ্গে।
সফল নারী উদ্যোক্তা দেলোয়ারার বাড়ি জামালপুর শহরের বকুলতলা এলাকায়। তাঁর জন্ম হয়েছে ময়মনসিংহ শহরের কাচিঁঝুলি এলাকায়। পরবর্তীতে বৈবাহিক সুত্রে জামালপুরে আসা। দেলোয়ারা বেগম এর বিয়ে হয়েছে জামালপুর সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামে নিজাম উদ্দিনের সাথে।
নিজ পরিবারের কাজের ফাঁকে শখের বশে ব্লক বুটিকের কাজ শুরু করেন দেলোয়ারা বেগম। জামালপুরে নিজ বাড়ীতেই ব্লক বুটিক শেখার প্রশিক্ষন দেন আশপাশের অবহেলিত নারীদের। পরবর্তীতে ব্লক বুটিকের কাজের সাথে যোগ হয় হস্ত শিল্পের। আজ দেশের হস্তশিল্পের ইন্ড্রাস্ট্রিতে একজন সফল উদ্যোক্তা দেলোয়ারা বেগম। সেই সাথে সম্মাননা মিলেছে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ নারী উদ্যোক্তার স্বীকৃতি।
দুই ছেলে স্বামী নিয়ে ৪ জনের সুখের সংসার। বড় ছেলে শাকির উদ্দিন দীপ্ত ব্র্যাক ইউনির্ভাসিটিতে বিবিএতে পড়ছেন ও ছোট ছেলে ফয়সাল মাহমুদ সুপ্ত নর্থসাউথ ইউনির্ভাসিটিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উপর পড়াশুনা করছেন।
হস্ত শিল্প বিশেষ করে হস্ত শিল্পের জন্য জামালপুর এর সুনাম দীর্ঘ দিনের। সেই সময় উদ্যোক্তা মাত্র ৫ হাজার টাকা পুজিঁ নিয়ে কাজ করতে নেমে পড়েন। গড়ে তুলে দীপ্ত কুটির নামে হস্তশিল্পের প্রতিষ্ঠান। কঠোর পরিশ্রমে দিনকে দিন তার ব্যবসার আকার বড় হতে থাকে। কাজ করতে গিয়ে একটা সময় ব্যবসাতে পুঁজি সংকট দেখা দেয়।নিজ এলাকা থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নেন বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে। সময়ের সাথে সাথে দীপ্ত কুটির সাফল্যর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
উদ্যোক্তা ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য ২০০৯ সালে ন্যাশনাল ব্যাংক এ এসএমই ঋণ চালু করলে তিনি সেই ব্যাঙ্ক থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। সাফল্যর সাথে ব্যবসা করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০১১ সালে ১৫ লাখ টাকা থেকে পর্যায়ক্রমে ৫০ লাখ এবং সর্বশেষে ৭০ লাখ টাকা ঋণ দেয় দেলোয়ারা বেগমকে। যা তাঁর ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
বর্তমানে এই সময়ে দীপ্ত কুটিরের কারখানায় ৩৫ জন ও মাঠ পর্যায়ে দুই শতাধিক এর উপরে কর্মী নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারা সুইঁ সুতোর কারুকার্য খচিত নানা বাহারি ডিজাইনের হস্ত শিল্পের পণ্য তৈরী করছে।
দীপ্ত কুটিরের উল্লেখযোগ্য পণ্য গুলোর মধ্যে আছে- পাঞ্জাবী, নকশীকাঁথা, কুশন কভার, শাড়ী, থ্রিপিছ, বেডশিট, বিভিন্ন রকমের আইটেমের ব্যাগ ও হাতপাখা সহ হস্তজাত পণ্য।
সফল উদ্যোক্তা হিসেবে ২০১২ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর নারী কোটায় শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তার জাতীয় পুরস্কার গ্রহন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে। একই বছর শ্রেষ্ঠ আত্মকর্মী হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার, বর্ষসেরা ক্ষুদ নারী উদ্যোক্তা হিসেবে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা-২০১২ নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে ক্ষুদ্র ও নারী উদ্যোক্তা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন মেলায় অংশ নিয়ে ২০১৩ সালে তৃনমুল নারী উদ্যোক্তা সংগঠন থেকে উদ্যোগ ও উদ্যেক্তা ক্যাটাগরিতে সন্মাননা, মানবাধিকার সন্মাননা পদক-২০১৩, সফল নারী উদ্যোক্তার পদক-২০১৬ সালে ময়মনসিংহে এসএমই পন্য মেলায় প্রথম, ২০১৭ সালে জাতীয় এসএমই পণ্যমেলা-২০১৭ এ দ্বিতীয় পুরস্কার পান।
আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে উদ্যোক্তার দীপ্ত কুটিরের পথচলার সাফল্য ঈর্ষণীয়। বাংলাদেশ উন্নয়ন ব্যুরোর মাধ্যমে নেপাল, চীন এবং ভারতের দিল্লি, কোলকাতা ও শিলিগুড়িসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় হস্তশিল্পের মেলাগুলোতে অংশ নিয়েছেন।
উদ্যোক্তার নিজ অর্থায়নে জামালপুর শহরে তমাল তলা মোড়ে ৪ শতাংশ জমির উপর দীপ্ত কুটিরের ৫ তলা নিজস্ব ভবন বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে। এর পাশাপাশি তিনি অসহায় নারীদের পুণর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য শহরের মুকুন্দ বাড়ী এলাকায় ১২ শতাংশ জমি কিনেছেন।
নারীদের প্রতি দেলোয়ারা বেগম বলেন- নারীদের অগ্রগতির জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তবে সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য শিক্ষা নয় বরং নিজেকে আলোকিত করে এমন ধরণের শিক্ষা প্রয়োজন। যে শিক্ষা নারীকে আত্মবিশ্বাসী করে, সে ধরণের কর্মমুখী শিক্ষা।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা