চাঁদপুর জেলা শহরে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ। বাবা একজন সরকারি চাকুরিজীবি। তিন বোন দুই ভাই এর মধ্যে সবার ছোট লাবনী। খুব আদরে বেড়ে ওঠে ঢাকাতে যাএাবারী নিজের বাড়িতে। যখন ৪ বছর তখন হঠাৎবাবা মারা যান। তারপর ছোট বেলা থেকেই দেখে এসেছেন মায়ের সংগ্রামী জীবন। মায়ের কাছ থেকেই শেখা সেলাইয়ের কাজ। শখ করে নিজের জন্য বোনদের জন্য সেলাই করতেন বিভিন্ন ডিজানের জামা, সুতার কাজ, ব্লক, বাটিক।
দনিয়া বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর পরিক্ষা দেওয়ার আগেই মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরেন। তাই তাড়াহুড়ো করে পরিক্ষার পর বিয়ে দিয়ে দেন। স্বামী সৈয়দ বেনজীর আহমের প্রাইভেট কম্পানিতে চাকুরি করেন। কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে একটা মেয়ে সৈয়দা নাফিসা তাবাসসুম। পাচঁ বছর পর ছেলে সৈয়দ রাইয়ান রাহিম। সুখেই কাটছিল জীবন। কিন্ত হঠাৎ স্বামী অসুস্থ হয়ে পরেন, চাকরী চলে যায়। যা জমানো ছিল সব শেষ হয়ে যায় স্বামী আর সংসার খরচে। মেয়ে তখন এসএসসি দিবে। মেয়ের স্বপ্ন বড় হয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু তাকে কোন ভালো শিক্ষক এমনকি ফর্ম ফিলাপের টাকাও জোগার করতে পারছিলো না লাবনী।
শেষ সম্বল একটা গলার চেন আর নাকের ফুল বিক্রি করে আরও এক ভাইয়ের কাছে থেকে কিছু টাকা নিলেন। ২০১৫ সাল মাত্র ২০,০০০ টাকা নিয়ে ব্লক এ ড্রেস তৈরী করে একটা অন লাইন পেইজ খুলেন।
উদ্যোক্তা লাবনী আহমেদ বলেন, “পেইজ থেকে তেমন সাড়া পেলামনা। পরে ব্যাগে ভরে কাঁধে নিয়ে আত্নীয়দের বাসায় গিয়ে বিক্রি করা শুরু করি। ভাল সাড়া পেলাম।সেই থেকে শুরু। জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করেছি। অনেক কথা শুনেছি। আত্মীয় স্বজন বলা শুরু করলো জামাই বসে বসে বৌ’য়ের কামায় খায়।তখন ও ছোট একটা চাকুরী নেয়। অল্প বেতন।খেয়ে না খেয়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে অনেক সংগ্রাম করেছি।আমার স্বামী আমাকে অনেক সার্পোট দিয়েছে।ইসলামপুর, চক বাজার, বাবু বাজার, কেরানীগঞ্জ সব জায়গায় ওকে নিয়ে গিয়েছি পাইকারিতে কোথায় কম টাকায় কাপড় পাওয়া যায়”।
ইতিমধ্যে অনেক গুলো কোর্স করেছেন এই উদ্যোক্তা। বিসিক, এসএমই, যুব উন্নয়ন থেকে ই কর্মাস ট্রেনিং নিয়েছেন। ছোট বেলায় স্বপ্ন ছিল একটা বুটিক সপের। স্বামীর সহযোগিতায় সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। কিছু টাকা জমিয়ে সাথে আরও কিছু জোগাড় করে ‘লাবণ্য ক্র্যাফট’স’ নামে একটা শোরুম দিলেন।
সাথে একটা ছোট কারখানা। সেখানে ১০ থেকে ১২ জন মেয়ে কাজ করছেন। পেয়েছেন অনেক পুরস্কার, পল্লিমা মহিলা পরিষদ থেকে নারী উদ্যোক্তা পুরস্কার। YSSE থেকে পুরস্কার। E Club Women এ তিনি এখন কো-চেয়ারম্যান। নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছেন নিয়মিত।
তিনি বলেন, “তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি।মাঝে মাঝে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হই। কিন্তু থেমে থাকিনি। শত প্রতিকূলের মধ্যেও ধৈর্য্য ধরে টিকে থাকাই সফলতা। ধৈর্য্য, নিষ্ঠা, জেদ আর লক্ষ্য থাকলে সফলতা আসবেই। আমি কেন পারবোনা, আমাকে পারতেই হবে এই মনোভাব নিয়ে এগিয়ে গেলেই জীবনের সফলতা আসবেই আসবে। নারী হয়ে কাজ করতে গেলে অনেক বাধা আসবে। শত বাধা পেরিয়ে সামনে যেতে হবে, মোট কথা লেগে থাকতে হবে”।
বিপ্লব আহসান