গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। বাবা মা দুইজনই সরকারি চাকরিজীবি ছিলেন। বাবা ডাক্তার মা শিক্ষিকা। দুই ভাই বোনের মধ্যে বড় সে, ছোট ভাই দেশের বাইরে থাকেন। পড়াশোনা নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং বি.সি.আই.সি কলেজ, ঢাকা। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে। এতোক্ষণ যার সম্পর্কে পড়ছেন তাঁর নাম ইসরাত বিনতে মালেক।
বাবা মা তাকে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকার হিসেবে দেখে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। যদিও বর্তমানে তিনি একজন গৃহিনী এবং একজন উদ্যোক্তা।বতর্মানে তিনি হস্তশিল্প এসোসিয়েশন, ই কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, উইমেন এন্ড ই কমার্স ফোরাম (উই), ইন সার্চ অব উইম্যান ইমপাওয়ারমেন্ট এর সদস্য।
গ্রাজুয়েশন শেষ করতে না করতেই বিবাহিত জীবনে পদার্পন করেন। সংসার জীবনের শুরুতেই ১ম সন্তানের জননী হন। সন্তান হবার কিছুদিন পর হঠাৎই হারিয়ে ফেলেন মা’কে। জীবনের নিয়মে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে সন্তান সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। স্বামী উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন জেলায় থাকার সুযোগ হয়েছিল ইসরাতের। তাই বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্য, মানুষের রুচিবোধ, সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ হয়েছে তার।
এরই মধ্যে হারিয়ে ফেলেন বাবাকে। ইসরাত বলেন, হতাশাগ্রস্ত মন নিয়ে আমি আবার পড়াশুনা শুরু করলাম। হঠাৎই জানতে পারি আমি ২য় সন্তানের মা হচ্ছি। তাকে গর্ভে নিয়েই পড়াশুনা শেষ করলাম। স্নাতকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হলাম।
স্বামীর অনুপ্রেরনায় দ্বিতীয় সন্তান ও সংসার নিয়ে চাকুরীর জন্য পড়াশুনা চালিয়ে যেতে থাকলাম। দুটি সন্তানের ভবিষ্যত এবং ব্যস্ত জীবনের কথা বিবেচনায় মাঝপথে এসেই চাকরির চিন্তা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। যেহেতু বসে থাকার পাত্রী আমি নই,সারাদিনই ভাবতাম নিজেকে কিভাবে সমাজের প্রতিষ্ঠিত একজন হিসেবে তুলে ধরা যায়”।
সেই চিন্তা থেকেই ব্যবসায় আসার উদ্যোগ গ্রহন করেন তিনি। নিজের জমানো অল্প কিছু টাকা দিয়ে প্রথম ব্যবসা শুরু করেন। অনলাইন সম্পর্কে জ্ঞান মোটামুটি ভালোই ছিল তার, সেটিকেই কাজে লাগালেন। তার ব্যবসার যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালে।
প্রথমে ব্যবসার উদ্দেশ্যে শুরু করলেও পরবর্তীতে স্বপ্ন বড় হয়। তিনি বলেন, “আমার আগ্রহ ও চেষ্টা দেখে আমার স্বামীও অনুপ্রাণিত হয় এবং আমাকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আমি “সবুজ পাতা” নামে অনলাইনে একটি পেইজ খুলি। যেখানে আমি দেশীয় পোশাক জামদানি,তাঁত ও হাতের কাজের পন্য নিয়ে কাজ শুরু করি।
ব্যবসায় ভালো সাড়া পাওয়ায় আগ্রহ দ্বিগুণ হয়ে গেল। আমার এরূপ আগ্রহ দেখে আমার স্বামী বাসাতেই ছোটখাট কারখানার ব্যবস্থা করে দেন এবং আমাকে এস.এম.ই ফাউন্ডেশনে কাজ শেখার সুযোগ করে দেন। সেই সাথে প্রবাসে বসবাসরত আমার একমাত্র ছোট ভাই ও আমাকে অনুপ্রাণিত করে। বতর্মানে আমি বাচ্চাদের পোশাক, এম্ব্রয়ডারি ,তাতাল এগুলো নিয়ে স্বল্প পরিসরে কাজ করছি। ব্লক,বাটিক,হ্যান্ডপেইন্ট,স্কিনপ্রিন্ট নিয়ে সামনে বড় পরিসরে এগোতে চাচ্ছি”।
উদ্যোক্তা তাঁর চলমান ব্যবসার পাশাপাশি সমাজের নারীদের জন্য একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউশন খুলেছেন। যার নাম “হাতেখড়ি নারী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র” এই প্রতিষ্ঠানে টেইলারিং, টাই- ডাই, ব্লক ও স্কীন প্রিন্ট এর কাজ শেখানো হয়। বর্তমানে আমি এবং আমার দুইজন সহকর্মী মিলে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি পরিচালনা করছি। এই ট্রেনিং ইনস্টিটিউশন এ মোট ৬ জন বেতনভুক্ত কর্মী রয়েছে। এছাড়া উদ্যোক্তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তাঁতীদের সাথে পণ্যের মান উন্নয়নে নিবিড় ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
উদ্যোক্তার স্বপ্ন তার এই প্রতিষ্ঠাটিকে দেশ ও দেশের বাইরে তুলে ধরার। সেই সাথে তার প্রতিষ্ঠানে যারা কর্মজীবী হিসেবে থাকবেন তাদেরকে সাবলম্বী করে গড়ে তোলা।
উদ্যোক্তা ইসরাত মনে করেন “আজকে আমি যতখানি সফল হতে পেরেছি তার পেছনে উল্লেখযোগ্য কারণ প্রচন্ড রকম ইচ্ছাশক্তি”। তিনি কখনোই নিজের ইচ্ছাশক্তি থেকে পিছনে ফিরে তাকাননি তা সে যেই পরিস্থিতি হোক না কেন। তার এবং তার স্বামীর চোখে একটাই স্বপ্ন কিভাবে এই প্রতিষ্ঠান টিকে আরও বড় করে তুলবেন দেশ ও দেশের বাইরে।
বিপ্লব আহসান