সভ্যতার শুরু থেকেই নারীর সৌন্দর্য, রুচিশীলতা এবং আভিজাত্যের পরিচয় বহন করে তার পোশাক। আর তাই দেশীয় কাপড়ে নিজেদের স্বকীয়তাকে তুলে ধরতে হৈমন্তীর এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। আজ আমরা আপনারই দরজায় টারসেল, সুতা, সুতির উড়না ও জুম শাড়ির দেশীয় পণ্য নিয়ে রং, সুতার সম্পর্ক বুননের গল্প শোনাবো।
গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে সংসারের পাশাপাশি নার্গিস আলম বীথি হৈমন্তীর নারী উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্পটা আমাদের অনেকেরই অজানা।
ছোটবেলা থেকেই সেলাইয়ের কাজের প্রতি তীব্র ঝোঁক ছিল হৈমন্তীর। ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছেন তাঁর মা অনেক ধরনের হাতের কাজ করতেন। মা’ র দ্বারা প্রভাবিত হয়েই হৈমন্তী কাজ শেখা শুরু করেন। উদ্যোক্তা হৈমন্তী বলেন-“সব সময় মনে হত কিছু একটা করা দরকার। আজকের বাজারে চাকরি পাওয়া খুব কঠিন তাই চাকরির জন্য চেষ্টা করিনি আর সংসার সামলিয়ে চাকরি করা খুব কঠিন হতো আমার জন্য। আগে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন ফেইসবুক পেজ এ সংযুক্ত ছিলাম, বিভিন্ন ফেইসবুক পেজ গুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি এ কাজ শুরু করি। কারণ এটা স্বাধীন পেশা আর আমার সংসার সামলিয়ে এটা আমি করতে পারবো”।
উদ্যোক্তা হৈমন্তীর বিনিয়োগ প্রথম দিকে খুব কম ছিলো যা উদ্যোক্তা তাঁর সংসারের খরচ বাঁচিয়ে প্রথম ইনভেস্টমেন্ট দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। ব্যবসা শুরু থেকে হৈমন্তীর পরিবারের কেউ সাপোর্ট করেনি আবার ব্যবসা করার জন্য নাও করেনি।
উদ্যোক্তা বলেন -“প্রথম দিকে কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিলাম, সুতা, উড়না, শাড়ি কোথায় পাবো, ভালোটা পাবো কিনা, দাম কেমন হবে, কুরিয়ারে কিভাবে পাঠাবো বা আনবো ইত্যাদি অজানা বিষয় গুলো নিয়ে একটু চিন্তিত ছিলাম, পরবর্তীতে এই বিষয়গুলো আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠেছি।
হৈমন্তী কাজ করেন ঐতিহ্যবাহী বাঙালির টারসেল,সুতা,সুতির উড়না ও জুম শাড়ি নিয়ে। ওড়না সম্পর্কে হৈমন্তী বলেন – “ভাষা আলাদা, জিনিস কিন্তু একই। ওড়না মেয়েদের পোশাকের একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ওড়না জিনিসটাই এমন। লজ্জা ঢাকার প্রয়োজনে ওড়নার আবির্ভাব হলেও সে তার সহজাত গুণে ছাপিয়ে গিয়েছে নিজেকেই। সালোয়ার-কমিজের সঙ্গে শুধু সঙ্গত করাই নয়, আজ ওড়না অন্যতম প্রয়োজনীয় অ্যাক্সেসরিজ। বৈচিত্র্যময় দেশের ছয় ঋতুর আবহাওয়া উপযোগী সব ধরণের সুতির ওড়না ও টারসেলের ওড়না তৈরী করে থাকি”।
বিশেষ দিবসের বিশেষ ট্রেন্ড হিসেবে শাড়ি যে নারীর প্রথম পছন্দ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷ নারীর ভূষণে ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে বর্তমানে জুম শাড়ি খুব জনপ্রিয়।পড়ে খুব আরাম এবং দেখতেও অনেক সুন্দর। এই জন্যই এই শাড়ির কদর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জুম শাড়িতে সাধারণত লিলেন সুতা ও সিল্ক সুতার মিশ্রণ থাকে। কিছুটা নেট জাতীয় বলে অনেকে একে মোটা কোটাও বলেন।
উদ্যোক্তা হৈমন্তী ভিন্ন আঙ্গিকে নিজের সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটিয়ে থাকেন ওড়না ও কাপড়ের গাঁয়ে৷ সৃজনশীল আর বিশেষত্ব প্রকাশের মাধ্যমে হিসেবে শাড়ীর অবদান অনস্বীকার্য৷ গ্রাহকের সন্তুষ্টির জন্য উদ্যোক্তা হৈমন্তী সুতার কোয়ালিটি, কাপড়ের জমিন, রঙের কোয়ালিটির প্রতি যথেষ্ট খেয়াল রাখেন। গ্রাহকের সন্তুষ্টিই তার মূল কথা।
ব্যবসার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা সিদ্ধান্ত মূলত নিজেই নিয়ে থাকেন। তবে কিছু কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর সহযোগিতা নিয়ে থাকেন।নতুনত্ব এবং সময় উপযোগী চাহিদা সম্পন্ন পণ্য তৈরি করাই উদ্যোক্তার মূল লক্ষ্য। ভবিষতে নিজের শ্রম ও মেধা দিয়ে সফল উদ্যোক্তাদের একজন হতে চান উদ্যোক্তা নার্গিস আলম বীথি হৈমন্তী।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা