নাম “তানজিন নাহার তন্বী” কাজই যার মূল পরিচয়। স্বপ্ন দেখেন নিজে কিছু করে স্বাবলম্বী হয়ে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে সবাইকে চমকে দিতে।
ছোটবেলা থেকে তন্বীর বেড়ে ওঠা পরিবেশ আত্মীয় স্বজন লেখাপড়া ইত্যাদি উপরে যে প্রভাবটি থাকে সেটা তন্বীর ক্ষেত্রে একেবারেই ভিন্ন। বাবা চাইতেন মেয়ে যেন লেখাপড়া করে ভালো কিছু করে। সাধ্যমত লেখাপড়ার যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন তন্বীর বাবা। তন্বীর লেখাপড়া করার পর সব সময়ই ইচ্ছা ছিল নিজে কিছু করবেন। হোক তা ছোট কিংবা বড়।
ঢাকার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইডেন মহিলা কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনায় সম্মান শেষ করে মাস্টার্স পড়ছেন। তন্বীর ছোট বেলা থেকে ফুলের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ থাকায় ভাবতেন ফুল গাছের নার্সারি করবেন। মোট কথা মনের মধ্যে সবসময় কিছু একটা করবো এরকম মনোভাব পোষণ করতেন। ছোটবেলায় তন্বী ৭-৮ বছর বয়সে নানির কাছ থেকে সেলাই এর কাজ শেখেন। বাচ্চারা কত কিছু শিখতে চায় সেরকম আর কি! তারপর টুকরা কাপড় সেলাই করে কিছুদিনের মধ্যে শখ শেষ। ২০১০ সালে তন্বীর প্রথম ভাগিনা হলে উৎসাহ নিয়ে ভাগিনা কে ফতুয়ায় কিছু হাতের কাজ করে দেন। এরপর শুরু হয়ে যায় লেখা পড়া নিয়ে ব্যস্ততা।
২০১৭ সালের ৩১ সে মার্চ উদ্যোক্তা তন্বি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তী ২০১৮ সালে তন্বীর কোল জুড়ে আসে কন্যা সন্তান। মেয়ের মা হবার সুবাদে নিজের মেয়েকে নিজ হাতে কাজ করে ড্রেস পড়াবেন সেই ভেবে কাজ করা শুরু করেন। নিজ কন্যা সন্তানের বাহারি ড্রেস করা থেকেই নিজে কিছু করার স্বপ্নের পথে হাটা শুরু করেন তন্বী।
তন্বী বলেন- “আলহামদুল্লিলাহ পরম পাওয়া আমার স্বামী যে কিনা সবসময় আমার কাজে উৎসাহ, সাহস ও ভরসা জুগিয়েছে। তন্বী মেয়ে নিয়ে মায়ের কাছে থাকার সুবাদে কাজ করতে কোনো সমস্যা মোকাবেলা করতে হয় না। তন্বীর মা অনেকটা সে সুযোগ করে দেন।
উদ্যোক্তা বলেন- “বিনিয়োগ বলতে শূন্য পুঁজি দিয়েই শুরু। আমার কাজের মূল্যায়ন আমার বান্ধবী মমি প্রথম করে। ওর নিজের জন্য আর ওর মেয়ের জন্য একই ডিজাইনে ড্রেস আমার কাছ থেকে করে নেয় প্রথম। ওর টাকা দিয়েই কাপড় সহ প্রয়োজনীয় সব কিছু কিনে অফিসিয়ালি কাজ শুরু করি। ব্যবসা করতে গিয়ে মাঝে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছিলো। পরে আমার আমেরিকা প্রবাসী বান্ধবী দোলা সমস্যার কথা জানতে পেরে আমার মেয়েকে উপহারের নাম করে কিছু টাকা পাঠায়। সেই টাকা দিয়েই মোটামুটি কাজ শুরু করি। কাজের ক্ষেত্রে আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত আর কোন প্রতিবন্ধকতা আসেনি”।
তন্বী মূলত হাতের কাজের কুশন কভার এবং বেবি ড্রেস নিয়ে কাজ করে থাকেন। হাতের কাজের দেশীয় পণ্য। সেই সাথে দেশীয় তাঁত, থ্রি পিস, মনিপুরী শাড়ি নিয়েও বর্তমানে কাজ করছেন। পরবর্তীতে আরও কিছু দেশীয় শাড়ি সময়ের সাথে সাথে যোগ করবেন বলে জানান।
তন্বী নিজেই ব্যবসার ক্ষেত্রে পণ্যের চাহিদা, মান, পরিবেশ, পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে গ্রাহকের সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রেখে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে তন্বী নিজেই বলেন– “আমার পণ্য বা সেবায় রয়েছে মান এবং কাজের ফিনিশিং। যার কারণে ক্রেতা একবার আমার পণ্যটি নিলে ঠিক আবার আমার কাছেই আসবে”।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে উদ্যোক্তা তানজিন নাহার তন্বি বলেন- “আমার প্রতিষ্ঠানটি সবার কাছে “TR Tinny Craft” নাম পরিচিতি লাভ করুক এটাই আমি চাই। এটা যেন একটা দেশীয় ব্র্যান্ডে পরিণত হতে পারে। ব্যবসার ক্ষেত্রে হাতের কাজের কুশন কভার, তাঁত, থ্রি পিস এবং দেশীয় শাড়ি নিয়ে সকলের কাছে পরিচিত হতে চাই”।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা